ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪

অস্ত্রসহ ধরে ছেড়ে দেওয়া হলো চেয়ারম্যান প্রার্থীকে

নিজস্ব প্রতিবেদক, চকরিয়া :: কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার কৈয়ারবিল ইউনিয়ন পরিষদে (ইউপি) ভোটগ্রহণ শেষে ফেরার পথে সন্ধ্যায় নির্বাচনী কর্মকর্তাদের গাড়ির গতি রোধ করে গুলি ছুড়ে ব্যালট বাক্স ছিনতাইয়ের চেষ্টা করা হয়। এতে নেতৃত্ব দেন ওই ইউপির চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী ও বর্তমান চেয়ারম্যান মক্কী ইকবাল হোসেন।

এক পর্যায়ে ইকবালকে অস্ত্রসহ আটক করে মারধরও করেন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্যরা। হাতকড়া পরিয়ে গাড়িতে তুলে নিয়ে যাওয়ার সময় পথে ‘অদৃশ্য শক্তির ইশারায়’ তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। মামলা থেকেও তাঁর নাম বাদ দেওয়া হয়েছে।

ঘটনাটি গত রবিবার ঘটলেও গত মঙ্গলবার মামলা হওয়ার পর ঘটনাটি প্রকাশিত হয়েছে। প্রশাসনের কর্মকর্তারাও বলেছেন, ‘রহস্যজনক’ কারণে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। মামলার বাদী প্রিজাইডিং কর্মকর্তা বলেছেন, ‘বিশেষ চাপে’ তিনি আসামি হিসেবে মক্কী ইকবাল হোসেনের নাম উল্লেখ করেননি।

অস্ত্রসহ আটক হওয়ার বিষয়টি স্বীকার না করলেও ইকবাল হোসেন গণমাধ্যমকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে মারধরের শিকার হওয়ার কথা স্বীকার করেছেন। অর্থাৎ তিনি ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন।

নির্বাচনী কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রবিবার কৈয়ারবিল ইউপির ভোটগ্রহণ শেষে একটি কেন্দ্রের ব্যালট বাক্স নিয়ে সন্ধ্যায় নির্বাচনী কর্মকর্তারা গাড়িতে করে ফিরছিলেন। গাড়িটি চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী ও বর্তমান চেয়ারম্যান মক্কী ইকবাল হোসেনের বাড়ির সামনে পৌঁছলে মক্কীর নেতৃত্বে হামলা চালানো হয়। গাড়ির গতি রোধ করতে গুলি ছুড়ে ভয়ংকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হয়। গাড়িটি ভাঙচুর করা হয়। তখন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে একটি বিশেষ বাহিনীর সদস্যরা ফাঁকা গুলি ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, এ সময় চেয়ারম্যান মক্কী ইকবাল হোসেনকে ওই বাহিনীর সদস্যরা অস্ত্রসহ আটক করে ব্যাপক পিটুনি দেন। তাঁকে হাতকড়া পরিয়ে গাড়িতেও তোলা হয়। কিন্তু পথে ‘অদৃশ্য শক্তির’ ইশারায় চকরিয়ার লক্ষ্যারচর এলাকায় তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়। এই ঘটনায় প্রিজাইডিং অফিসার বাদী হয়ে ১৮ জনের নাম উল্লেখসহ ৩০ জনকে আসামি করে মামলা করেছেন। মামলার আসামি থেকেও বাদ দেওয়া হয়েছে মক্কী ইকবাল হোসেনের নাম।

সেদিন প্রাণ নিয়ে জীবিত ফিরতে পেরে শুকরিয়া জানিয়ে প্রিজাইডিং অফিসার এ কে এম শাহাবুদ্দীন বলেন, ‘সেদিন ঘোড়া প্রতীকের চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী ও বর্তমান চেয়ারম্যান মক্কী ইকবালের নেতৃত্বে তাঁর সশস্ত্র সন্ত্রাসী বাহিনী আমাদের লক্ষ্য করে ব্যাপক গুলি ছোড়ে। পরে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে বিশেষ একটি বাহিনীর সদস্যরা মক্কী ইকবালকে অস্ত্রসহ আটক করেন। কিন্তু এক ঘণ্টা পর তিনি ছাড়া পেয়ে যান। এসব ঘটনায় থানায় মামলার এজাহারে আসামির ঘরে সরাসরি তাঁর নাম উল্লেখ করতে পারিনি বিশেষ চাপে। এর পরও মামলার এজাহারের বর্ণনায় তাঁর সন্ত্রাসী বাহিনীর বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে।’

যোগাযোগ করা হলে মক্কী ইকবাল হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্যরা তাঁকে মারধর করার বিষয়টি সত্য। তবে তাঁকে অস্ত্রসহ আটক করার বিষয়টি সত্য নয়। তিনি বলেন, ‘ইউপি সদস্য পদপ্রার্থীদের মধ্যে সৃষ্ট ঘটনায় আমাকে অহেতুক জড়ানো হচ্ছে।’

চকরিয়া থানার ওসি মো. ওসমান গণি বলেন, ‘ব্যালট বাক্সসহ নির্বাচনী সরঞ্জাম নিয়ে ভোটকেন্দ্র থেকে উপজেলা সদরে আসার পথে সড়কে ব্যারিকেড, ব্যালট বাক্স ছিনতাইয়ের চেষ্টা, গাড়ি ভাঙচুরসহ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে প্রিজাইডিং অফিসার বাদী হয়ে মামলা করেছেন। আসামিদের গ্রেপ্তারে পুলিশ তৎপর রয়েছে। অস্ত্রসহ মক্কী ইকবালকে বিশেষ একটি বাহিনীর সদস্য কর্তৃক আটক করার বিষয়টি আমিও শুনেছি। তবে সেই বাহিনী পরবর্তী সময়ে থানা পুলিশকে কিছুই জানায়নি।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সৈয়দ শামসুল তাবরীজ বলেন, চেয়ারম্যান মক্কী ইকবালকে অস্ত্রসহ আটক করা হয়েছিল বলে তিনি শুনেছেন। এই ঘটনা সংশ্লিষ্ট প্রিজাইডিং অফিসারকে মক্কী ইকবালসহ জড়িতদের আসামি করে থানায় মামলা করতে বলা হয়েছিল। তবে তিনি ‘রহস্যজনক’ কারণে মামলায় আসামি হওয়া থেকে বাদ পড়ে যান।

পাঠকের মতামত: