ঢাকা,শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

যুক্তরাষ্ট্রে দুই বাংলাদেশি নারীর নতুন রেকর্ড

বাংলা প্রেস, নিউ ইয়র্ক: যুক্তরাষ্ট্রে নতুন রেকর্ড গড়লেন দুই বাংলাদেশি। নিউ ইয়র্ক সিটি নির্বাচনে ইতিহাস গড়তে সক্ষম হয়েছেন বাংলাদেশি দুই নারী প্রার্থী। নিউ ইয়র্ক সিটি কাউন্সিল নির্বাচনে ডিস্ট্রিক্ট-৩৯ থেকে বেসরকারিভাবে প্রথম মুসলিম কাউন্সিলওমেন নির্বাচিত হয়েছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত শাহানা হানিফ এবং কুইন্স কাউন্টির সিভিল আদালতের বিচারক পদে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন অ্যাটর্নি সোমা সাঈদ। বাংলাদেশি এই দুই নারী প্রার্থীর বিজয়ে নিউ ইয়র্কসহ যুক্তরাষ্ট্রে নতুন রেকর্ড সৃষ্টি হলো। এ খবর জানিয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম বাংলা প্রেস।

মঙ্গলবার (২ নভেম্বর) অনুষ্ঠিত নিউ ইয়র্ক সিটির সাধারণ নির্বাচনের ফলাফলে জানা যায় মোট ভোটের ৯৮ দশমিক ৮১ ভাগ ফলাফলে ডেমোক্রেট প্রার্থী শাহানা হানিফ পেয়েছেন ২৮ হাজার ২৯২ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী কনজারভেটিভ পার্টির ব্রেট উইনকুপ পেয়েছেন ২ হাজার ৫২২ ভোট।
এদিকে কুইন্স কাউন্টি বিচারক পদে অ্যাটর্নি সোমা সাঈদ পেয়েছেন ১ লাখ ৩৪ হাজার ৯৯৯ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী রিপাবলিকান পার্টির উইলিয়াম ডি শানাহান পেয়েছেন ৮৮ হাজার ৬২ ভোট।
প্রাপ্ত ভোটের যে ব্যবধান রয়েছে তাতে শাহানা হানিফ এবং অ্যাটর্নি সোমা সাঈদ বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। তবে আগামী ১৫ নভেম্বর মেইল ইন এবং অ্যাবসেন্টি ব্যালট গণনার জন্য চূড়ান্ত ফল জানা যাবে। এতে প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থীর জয়ের সম্ভাবনা খুবই কম।
এর আগে চলতি বছরে তিনি ২২ জুনের প্রাইমারিতে জয়ী হয়ে সাধারণ নির্বাচনে ডেমোক্রাটিক পার্টির আনুষ্ঠানিক মনোনয়ন পান অ্যাটর্নি সোমা সাঈদ। দশ বছরের জন্য তিনি এই পদে আসীন থাকবেন। তাঁর আদালতে ২৫ হাজার ডলার পর্যন্ত মামলার শুনানি করার এখতিয়ার থাকবে।
বিজয়ের খবর শুনে প্রতিক্রিয়ার অ্যাটর্নি সোমা সাঈদ বলেন, এ বিজয়ে জয়ে তিনি অত্যন্ত আনন্দিত। আনন্দিত তারাও যারা তাকে ভোট দিয়েছেন। জয়ের ব্যাপারে তিনি আশাবাদী ছিলেন সব সময়। কিন্তু সেটা কখনো কাউকে বুঝতে দেইনি। কারণ তার জয়ের পুরো বিষয়টি নির্ভর করছিল ভোটারদের ওপর। তারা ভোট না দিলে জয়ী হতে পারতেন না। এ কারণে নিশ্চিত করে বলার কোন সুযোগ ছিল না যে তিনি জয়ী হবেন।।
সোমা আরও বলেন, কুইন্স কাউন্টি ডেমোক্র্যাটিকের দখলেই ছিল। সবাই মনে করেন এখান থেকেই যিনি ডেমোক্র্যাটিক পার্টির নমিনি হবেন তিনি জয়ী হতে পারবেন। এই কারণে প্রাইমারির জয়কেই অনেকেই আসল জয় মনে করেন। কিন্তু আসলে বিষয়টি এই রকম ছিল না। সাধারণ নির্বাচনের দিনে ভোট দেওয়া যেমন জরুরি ছিল, তেমনি জয় পাওয়া এবং আনুষ্ঠানিক ঘোষণার প্রয়োজন রয়েছে। তাই সব মিলেয়ে বলা যায় তিনি জানতেন জয়ী হবেন, তবু কাজ করছেন। এটাই নির্বাচনের নিয়ম। কখনো বেশি আত্মবিশ্বাসী হতে নেই।
অ্যাটর্নি সোমা সাঈদ বলেন, ভাগ্য আমার সহায়ক হয়েছে এটা অনেকেই মনে করেন। সেটাতে, অবশ্যই কিন্তু কাজ করতে হয়েছে। এই কাজ একদিনে করিনি ধীরে ধীরে কাজ করে গেছি। কষ্টের ও পরিশ্রমের ফসল হচ্ছে আমার মতো একজন মানুষের এই পদে আসীন হওয়া। তিনি বলেন, আমি নিষ্ঠার সাথে কাজ করে গেছি। ভবিষ্যতেও করে যাবো।
বেসরকারিভাবে নির্বাচিত প্রথম মুসলিম কাউন্সিলওমেন (ডিসট্রিক্ট-৩৯) শাহানা হানিফ বলেন, তার নির্বাচনী এলাকা ব্রুকলিনে বাংলাদেশি ভোটার আছেন। তবে সংখ্যা অনেক বেশি নয়। তারপরও তাদের ভোট আমার জন্য খুবই জরুরি ছিল। পাশাপাশি আমার এলাকায় বিভিন্ন কমিউনিটির মানুষ বাস করেন। তাই তাদের ভোটের ওপর আমাকে নির্ভর করতে হয়েছে, যাতে তিনি সব কমিউনিটির ভোট পেয়ে জয়ী হতে পারেন। জয় পাবেন এটা জানতেন না। তবে জয়ী হবেন সেটাো বলতে চাননি শাহানা।
তিনি বলেন, প্রাইমারীতে জয়ের পর এটা মনে করেছিলেন যে তিনি সিটি হলে যেতে পারবেন। কিন্তু এই চূড়ান্ত গন্তব্যে পৌঁছার জন্য সাধারণ নির্বাচনে জয় প্রয়োজন। সেই জয়ের মাধ্যমে সেটি হলে যাওয়ার সুযোগ মেলে। এই জয়ের মধ্য দিয়ে নতুন ইতিহাস রচিত হতে যাচ্ছে।
শাহানা বলেন, বাংলাদেশিদের সহায়তা ছাড়া এ বিজয় কখনোই সম্ভব ছিল না। তিনি দীর্ঘ ১৫ বছরের বেশি সময় ধরে কাজ করেছেন। দিনে দিনে তার অভিজ্ঞতা হয়েছে সেই সব অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগাতে পেরেছেন। সব মিলিয়ে বলা যায় যে অভিজ্ঞতা অর্জন করা তার প্রয়োজন ছিল। তিনি তার ডিসট্রিক্টের সবার প্রতি এবং তাকে যারা এনডোর্স করেছেন, ভোটে অংশ নেওয়া, জয়ী হওয়ার ব্যাপারে সহায়তা করছেন, যারা ভোট দিয়েছেন তাদের সবার প্রতি তিনি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ ক্রেন।
তিনি বলেন, তার এলাকায় বিভিন্ন কমিউনিটির লোক রয়েছেন। তাদের মধ্যে বাংলাদেশি আমেরিকানরাও আছেন। তাদের জন্য আলাদা একটি অফিস করবেন। সেখানে মানুষ আসবেন এবং তাদের সমস্যা সমাধানের জন্য আমরা সহায়তা করবেন। বিশেষ করে ডোমেস্টিক ভায়োলেন্স এখন বেড়েছে। সেই সমস্যা সমাধানের জন্য মানুষের সহায়তা প্রয়োজন, শিক্ষাখাতের বিভিন্ন পর্যায়ে অভিভবাকদের সম্পৃক্ত হওয়ার সুযোগ রয়েছে। সেখানে তাদের সম্পৃক্ত হতে উৎসাহিত করা ও সহায়তা করা হবে।
এছাড়াও ইমিগ্রান্টদের অনেকেরই অনেক সমস্যা রয়েছে সেগুলোতেও সহায়তা করবেন শাহানা। তিনি বলেন, সিটি হলে গিয়ে তার প্রথম কাজ হবে যেসব বিষয় জরুরিভিত্তিতে বিল পাস হওয়া দরকার কিন্তু তারপরও এতদিনে হয়নি সেইসব বিল পাস করাতে চান শাহানা।

 

পাঠকের মতামত: