ঢাকা,রোববার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪

স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে ১০ হাজার শিশু ।। রামুতে দুই হাজার চুল্লিতে পোড়ানো হচ্ছে তামাক পাতা

tamak tamak ketরামু প্রতিনিধি :::

কক্সবাজারের রামু উপজেলার পূর্বাঞ্চলীয় গর্জনিয়া ও কচ্ছপিয়া ইউনিয়ন এক সময় উপজেলার শস্যভাণ্ডার হিসেবে বেশ পরিচিত ছিল। উপজেলার সিংহভাগ সবজি উৎপাদন হত এখানে। কিন্তু এখন ওই এলাকায় যতদূর চোখ যায় শুধু তামাক আর তামাক। শাকসবজি উৎপাদনের পরিবর্তে বর্তমানে সেখানে চলছে ক্ষেত থেকে তামাক কাটা আর ঘরে ঘরে চলছে তামাক শুকানো ও পোড়ানোর কাজ। জানা গেছে, এ বছর বনভূমিসহ উপজেলার বিভিন্ন স্থানে প্রায় তিন হাজার একর জমিতে তামাকের চাষ হয়েছে। বর্তমানে সেখানে প্রায় দুই হাজার চুল্িলতে তামাক পোড়ানোর প্রস্তুতি চলছে। বনভূমিতেও বসানো হয়েছে প্রায় দুইশ চুল্িল। দশ হাজার শিশুসহ প্রায় পনের হাজার মানুষ তামাক কাটা, শুকানো ও পোড়ানোর কাজে ব্যস্ত রয়েছেন । চিকিৎসকরা বলছেন, তামাকের বিষাক্ত নিকোটিনের প্রভাবে শিশুরা শ্বাসকষ্ট, ক্যান্সারসহ নানা জটিল রোগে আক্রান্ত হতে পারে। কয়েকজন তামাক চাষী জানান, সবজির চেয়ে তামাক চাষে লাভ বেশী। অগ্রিম ঋণ, পর্যাপ্ত সার, কীটনাশক সবই সহজে পাওয়া যায়। ধান আর শাকসবজি চাষ করলে সারও মেলে না। তামাকের ক্ষতিকর দিকগুলো সম্পর্কে ধারণা না থাকায় স্বাস্থ্য ঝুঁকির বিষয়টি তাদের কাছে তুচ্ছ জ্ঞান।

সরেজমিনে পরিদর্শনে দেখা যায়, গর্জনিয়া ইউনিয়নের নতুন মিয়াজী পাড়া, দো’ছড়ি, ঘিলাতলী, শুকমনিয়া, মৌলভীকাটা, তিতারপাড়া, ফাক্রিকাটা, নাপিতের চর, ডাকভাঙা, মাঝির কাটা, ডেইংগারচর বড়বিল, কচ্ছপিয়ার জাউসপাড়া, হিমছড়ি, থোয়াইংগ্যাকাটা, জুমছড়ি, ক্যায়াজুর বিল, সকাদারপাড়াসহ প্রায় পঞ্চাশটি গ্রামে আশংকাজনকভাবে তামাকের চাষ হয়েছে। এছাড়া ও উপজেলার ফতেখারকুল, রাজারকুল, কাউয়ারখোপ, খুনিয়াপালং, ঈদগড়, জোয়ারিয়ানালার বিভিন্ন স্থানে তামাকের আগ্রাসন চোখে পড়ে । কয়েকজন তামাক চাষীর সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, শুধুমাত্র গর্জনিয়া, কচ্ছপিয়া এবং কাউয়ারখোপ ইউনিয়নে এ বছর প্রায় দুই হাজার তামাকচুল্িল বসানো হয়েছে। প্রতি দুই একরের জন্য একটি চুল্লি বসানো হয়। এর মধ্যে নদীর তীর, বসত বাড়ির আঙ্গিনা,খেতের মাঝখানে ছাড়াও বনের ভিতরে বনভূমিতে বসানো হয় প্রায় দুইশ চুল্লি। সব চুল্লিতেই বনের কাট দিয়ে তামাক পাতা পোড়ানো হচ্ছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, তামাক চাষীরা বন বিভাগকে ম্যানেজ করে বনভূমিতে তামাক ক্ষেত এবং তামাক পুড়ানোর জন্য চুিল গড়ে তোলে। স্থানীয় বাসিন্দা জ.ম ওবাইদুর রহমান জানান, তামাক চাষের কারণে বর্তমানে গর্জনিয়াকচ্ছপিয়ায় বছরে প্রতি কানি জমির লাগিয়ত (খাজনা) বিশপঁচিশ হাজার টাকা। কিন্তু সবজি চাষীরা পাঁচছয় হাজার টাকার বেশি দিতে পারেন না। সে কারণে জমির মালিকরাও বেশি লাভের আশায় তামাক চাষীদের কাছে জমি বর্গা দিচ্ছেন। এতে সবজি চাষীদের অনেকেই তামাক চাষে বাধ্য হচ্ছেন।

কাউয়ারখোপের আব্দুর রহিম (৪০) ঘরের পাশে বনভূমিতে তৈরি করেন তামাক পোড়ানোর চুল্িল। ঘরের ভেতর মজুদ করেন বিপুল পরিমাণ তামাক পাতা। তিনি বলেন, শুনেছি এটা শরীরের জন্য খুব ক্ষতিকর। কিন্তু কি করব, অন্য দশজনের মত আমিও করছি। আর তামাক পাতা বেচতে না পারলে খাব কি? কচ্ছপিয়া ইউনিয়ন পরিষদের এক সদস্য জানান, তামাক চাষীদের বাড়িঘরের প্রতিটি কক্ষ তামাক পাতায় ভরপুর। বর্তমানে পরিবারের নারী পুরুষ সবাই পাতা শুকানো এবং আঁটি বাধার কাজে ব্যস্ত। তামাকের ক্ষতিকর দিকগুলো সম্পর্কে চাষীদের কিছুটা ধারণা থাকলেও অধিক লাভের আশায় তারা স্বাস্থ্য ঝুঁকির বিষয়টি গুরুত্ব দিচ্ছেনা ।

এতে তামাকের বিষাক্ত নিকোটিনের প্রভাবে শিশুসহ পরিবারের প্রতিটি সদস্য হাঁপানি, শ্বাসকষ্টসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে । তিনি জানান, তামাক পোড়ানোর একটি চুল্লীতে আটদশ জন শ্রমিক কাজ করে। চাষীরা কম পারিশ্রমিক দিতে বেশীর ভাগ ১২ থেকে বছরের শিশুদের কাজে লাগাচ্ছে। বর্তমানে এসব চুল্লিতে প্রায় দশ হাজার শিশু শ্রমিক নিয়োজিত আছে।

কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের সাবেক উপাধ্যক্ষ ও বিশিষ্ট শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ অরূপ দ্‌ত্ত বাপ্পী জানান, তামাকের বিষাক্ত নিকোটিনের প্রভাবে শিশুরা শ্বাস কষ্ট, রক্তনালী সংকোচন, হাঁপানি এবং বয়স্করা হৃদরোগ, ক্যান্সারসহ নানা জটিল রোগে আক্রান্ত হতে পারে । গর্ভবতী মহিলারা আক্রান্ত হলে অনাগত শিশুর ওপরও এর প্রভাব পড়তে পারে।

 

পাঠকের মতামত: