নিজস্ব প্রতিবেদক, চকরিয়া :: চকরিয়া উপজেলার ঢেমুশিয়া জলমহালে মাছ চাষের জন্য স্লুইসগেট দিয়ে ঢোকানো হচ্ছে সমুদ্রের লবণাক্ত পানি। ইজারার শর্ত লঙ্ঘন করে লবণাক্ত পানি ঢুকিয়ে মিঠাপানির উৎস ধ্বংস করছেন ইজারাদার। এতে উপকূলীয় এলাকার ৭ ইউনিয়নের ১০ হাজার একর জমির ইরি-বোরো ও সবজি চাষে অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে হাজারো কৃষক পরিবারের।
অভিযোগ রয়েছে, বদরখালী ও কোনাখালী অংশের বেশ কয়েকটি স্লুইসগেট দিয়ে রাতের আঁধারে জলমহালে লবণ পানি ঢোকানো হচ্ছে। বর্তমানে বিশাল জলমহালটি লোনা পানিতে টইটুম্বর। জলমহালে গজিয়ে ওঠা কচুরিপানাগুলো দিন দিন বিবর্ণ হয়ে মরে যাচ্ছে।
চিরিংগা ইউনিয়নের সহকারি ভূমি কর্মকর্তা (তহশিলদার) আবুল মনছুর দাবি করেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের কোনাখালী অংশের স্লুইসগেটের বেশির ভাগ কপাট নষ্ট হয়ে গেছে। এসব ভাঙা কপাট দিয়ে জোয়ারের সময় সামান্য নোনা পানি প্রবেশ করছে, যা সহনীয় মাত্রায় রয়েছে। ইতোমধ্যে নবাগত উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আতিকুর রহমান সরেজমিন পরিদর্শন করে স্লুইসগেটের কপাটগুলো সংস্কার করে লোনা পানি প্রবেশ বন্ধ করার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের শাখা প্রকৌশলীকে নির্দেশনা দিয়েছেন।
জানা গেছে, চকরিয়া উপজেলার উপকূলীয় অঞ্চলের শাহারবিল, বিএমচর, পূর্ব বড় ভেওলা, পশ্চিম বড় ভেওলা, ঢেমুশিয়া, কোনাখালী ও বদরখালী ইউনিয়নের পানির উৎস হিসেবে খ্যাত ঢেমুশিয়া জলমহাল। এটি এসব এলাকার একমাত্র মিঠাপানির উৎস হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে। জলমহালটি যুগ যুগ ধরে কৃষকদের জন্য উন্মুক্ত ছিল। পাশাপাশি এখানে এলাকার হতদরিদ্র জেলেরা মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করতেন।
কিন্তু বিগত স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে জেলা প্রশাসন থেকে জলমহাল খালটি নামেমাত্র রাজস্ব আদায়ের মাধ্যমে দলীয় লোকের কাছে ইজারা দেওয়া হয়। প্রভাবশালী ইজারাদাররা জনস্বার্থের কথা বিবেচনা না করে স্লুইসগেট দিয়ে সময়ে-অসময়ে, রাত ও দিনে লোনা পানি ঢুকিয়ে মাছ চাষ করে আসছিলেন। গত বছর স্থানীয় জনগণের প্রতিবাদের মুখে লিজ বন্ধ করে জলমহালটি উন্মুক্ত রাখা হয়। তবে সরকারের রাজস্ব আদায়ের স্বার্থে ভূমি অফিসের মাধ্যমে খাস কালেকশন চলমান। জলমহালে লোনাপানি না ঢোকানোর নির্দেশনা থাকলেও প্রভাবশালী তা মানছে না।
স্থানীয়রা বলছেন, শুষ্ক মৌসুমে লোনাপানি ঢোকানোর জন্য স্লুইসগেট খোলা হলেও বর্ষা মৌসুমে কপাট বন্ধ রাখা হয়। এতে উপকূলীয় এলাকার ৭ ইউনিয়নের লাখ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েন। পুরো এলাকা পানিতে তলিয়ে যায়। রোপা আমন নষ্ট হয়ে যায়। প্রশাসনের নেক নজরে স্লুইসগেটের কপাট খুলে বন্যার পানি সরে যাওয়ার ব্যবস্থা করেন।
ঢেমুশিয়ার কৃষক গিয়াস উদ্দিন ও ইকবাল হোসেন বলেন, ‘রাজা আসে রাজা যায়, প্রজাদের স্বার্থ কেউ দেখেন না। দীর্ঘদিন ধরে এমন অবস্থা চলছে ঢেমুশিয়া জলমহাল নিয়ে। বিএনপি সরকারের আমলে সাবেক সংসদ সদস্য ও যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী সালাহ্ উদ্দিন আহমেদের নির্দেশনায় একসময় জলমহালটি সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত ছিল। পরে আওয়ামী লীগের আমলে জলমহালে ইজারা প্রথা চালু হয়। এতে করে সরকার কিছু রাজস্ব আয় করলেও ক্ষতির পরিমাণ ১০ গুণ বেশি।’
এ ব্যাপারে চকরিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এস নাজিম হোসেন বলেন, ‘ঢেমুশিয়া জলমহালটি চকরিয়া উপকূলের জন্য আশীর্বাদ। প্রায় ১২০ একর বিশিষ্ট জলমহালটির দৈর্ঘ্য ৮-১০ কিলোমিটার। জলমহালের মিঠাপানি দিয়ে অন্তত ১০ হাজার একর জমির ইরি-বোরো ও প্রচুর সবজি চাষ হয়ে থাকে। বর্তমানে চকরিয়া শস্যভান্ডার হিসেবে খ্যাত। জলমহালে লবণাক্ত পানি ঢোকানো হলে প্রান্তিক কৃষকদের ব্যাপক ক্ষতি হবে।’
পাঠকের মতামত: