ঢাকা,বুধবার, ৪ ডিসেম্বর ২০২৪

জেলায় ৮৬ ইটভাটার ৪৬টিই অবৈধ

জেলায় ক্রমে ইটভাটার সংখ্যা বাড়ছে। ফলে বিপন্ন হচ্ছে প্রাকৃতিক পরিবেশ। নিয়ম নীতি না মেনে পরিবেশের আইনকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে এসব ইটভাটা গড়ে তুলছে প্রভাবশালী ও রাজনৈতিক আশ্রয়ে থাকা কতিপয় অসাধু ব্যবসায়ী। 

পরিবেশ অধিদপ্তর বলছে, এসব ভাটা বন্ধে শীঘ্রই মাঠে নামবে তারা। জনবল সঙ্কটের কারণে অভিযান পরিচালনা করতে ব্যর্থ হওয়ায় ঢাকা থেকেই ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করে র্যানব এবং বিজিবিকে চিঠি পাঠিয়েছে অভিযান করতে টিম গঠনের জন্য। ইতিমধ্যে চিহ্নিত করা হয়েছে পরিবেশগত ছাড়পত্র ছাড়া এসব অবৈধ ইটভাটা।

পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজারের সহকারি পরিচালক মোঃ নুরুল আমিন দৈনিক কক্সবাজারকে জেলায় ৪৬ টি অবৈধ ইটভাটার কথা স্বীকার করেছেন।

জানা যায়, অবৈধভাবে কৃষি জমিতে ইটভাটা তৈরির কারণে  কমছে চাষাবাদের জমি। এছাড়া, ইট পোড়ানোর কাজে জ্বালানি হিসেবে কাঠ ব্যবহারে কমছে গাছ। ফলে বিরাণ ভূমিতে পরিণত হচ্ছে বনাঞ্চল। পরিবেশ অধিদপ্তর বলছে কক্সবাজারের ৫৮ শতাংশ ইটভাটার পরিবেশগত ছাড়পত্র নেই। যদিও উচ্চ আদালতে রীট করে কিছু কাগজপত্র সৃজনের মাধ্যমে চলছে বেশ কয়েকটি ইটভাটা।

পরিবেশ আইন, ইট প্রস্তুত ও ভাটা প্রস্তুত আইন অনুযায়ি সরকারি বা ব্যক্তি মালিকানাধীন বন, অভয়ারণ্য, বাগান বা জলাভূমি ও কৃষিজমিতে ইটভাটা তৈরি করা যাবে না। এছাড়া, সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, উপজেলা সদর এলাকায়ও ইটভাটা তৈরি করা যাবে না। অন্যদিকে ইট তৈরির জন্য কৃষিজমি, পাহাড়, টিলা থেকে মাটি কেটে কাঁচামাল হিসেবে এবং জ্বালানি হিসেবে কাঠ ব্যবহারও নিষিদ্ধ।

কক্সবাজার পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারি পরিচালক মোঃ নুরুল আমিন জানান, কক্সবাজার ৮৬টি ইটভাটার মধ্যে ৪৬টি ভাটার কোন পরিবেশগত ছাড়পত্র নেই। এর মধ্যে কক্সবাজার সদরে ২৩টির মধ্যে ১২টি, রামুর ৩২টির মধ্যে ২০টি, পেকুয়ার ৫টির মধ্যে ৪টি, চকরিয়ার ৪২টির মধ্যে ৩৩টি, উখিয়া- টেকনাফের অধিকাংশ ইটভাটার পরিবেশ অধিদপ্তরের কোন অনুমতি নেই বলে জানা গেছে। এছাড়া কুতুবদিয়ার ১টি, মহেশখালীর ১টি ইটভাটা চলছে দায়সারাভাবে। এর মধ্যে অনেক ইটভাটার চিমনি এখনও উন্নত প্রযুক্তিতে রুপান্তর করা হয়নি। ইটভাটায় জ্বালানি হিসেবে কাঠ ও অতিরিক্তি মাত্রার সালফারযুক্ত কয়লা ব্যবহার হচ্ছে। কাঠ ব্যবহারের ফলে গাছের সংখ্যা কমছে। নষ্ট হচ্ছে পরিবেশের ভারসাম্য। পরিবেশ আইন  অমান্য গড়ে উঠা এসব ইটভাটার কারনে কমে যাচ্ছে পাখির অভয়ারণ্য, কৃষি জমি ও উজাড় হচ্ছে বিশাল বনভূমি। ফলে পরিবেশগত বিপর্যয়সহ জনস্বাস্থ্যের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। ইটভাটার কালো ধোঁয়ার কারণে ফুসফুসের সমস্যা, শ্বাসকষ্টসহ নানা রোগ হতে পারে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয় বয়স্ক ও শিশুরা। ইটভাটার ধোঁয়ায় নষ্ট হচ্ছে গাছের ফল ও  পাখির আবাস।

অবৈধ ইটভাটা বন্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়ে কক্সবাজার পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারি পরিচালক নুরুল আমিন বলেন, পরিবেশগত ছাড়পত্র না থাকা ৪৬টি ভাটা বন্ধে আমরা শীঘ্রই অভিযানে নামব। ঢাকা থেকে আমাদের অধিদপ্তর ম্যাজিস্ট্রেট পাঠাচ্ছেন আমরা র্যা ব এবং বিজিবির সহযোগিতায় অভিযান জোরদার করব। পাশাপাশি পরিবেশ আইনে তাদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেব। ইতিমধ্যে রামু উপজেলায় চারটি সদর উপজেলার পিএম খালিতে একটি অবৈধ ইটভাটা বন্ধের জন্য আমাদের চট্টগ্রাম পরিবেশ অধিদপ্তরে লিখিত ভাবে জানিয়েছি। এগুলো শীঘ্রই বন্ধ করা হবে।

পাঠকের মতামত: