:: এম আর মাহমুদ ::
১৯৮১ সালের ঘটনা। চট্টগ্রাম মহানগরীর চকবাজার থেকে একটি কাঁঠাল ক্রয় করে ছিলাম। কাঁঠাল ব্যাপারীর কাছে জানতে চাইলাম, চাচা কাঁঠাল খেতে কেমন হবে। বয়স্ক কাঁঠাল ব্যাপারী জবাব দিলেন, বাড়ির কাঁঠাল খুবই ভাল হবে। কাঁঠালের কোষ(খোয়া) গুলো চম্পা ফুলের মত হবে। কাঁঠালটি নিয়ে হাজী মুহাম্মদ মহসীন কলেজের ছাত্রবাসে গিয়ে ৪ বন্ধু মিলে কাঁঠালটি ভেঙ্গে কোষ বের করতে গিয়ে দেখি ব্যাপারীর কথার সাথে শতভাগ মিল রয়েছে। তবে খেতে গিয়ে মনে হয়েছে, জীবনে এমন বাজে কাঁঠাল আর জীবনে খাইনি। তখন মনে হল, কাঁঠালটি যথা নিয়মে পাকেনি। হয়ত পিঠিয়ে পাকিয়েছে। তাই কাঁঠালের এ অবস্থা। তবে কাঁঠালের কোষ গুলো চম্পা ফুলের মতই ছিল। কাঁঠাল কিনতে গিয়ে ছাত্র জীবনে প্রতারিত হওয়ার পর থেকে এখনো পর্যন্ত আর প্রতারণার শিকার হয়নি। চলতি রমজান মাসে প্রচন্ড গরমসহ নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও আল্লাহ’র কৃপায় একটি রোজা ছাড়া সব কটি রোজা রাখার সৌভাগ্য হয়েছে। অসুস্থতা জনিত কারণে একটি রোজা রাখা সম্ভব হয়নি। গেল ৪ জুন ইফতারের পর সামান্য কেনা কাটা করে বাড়িতে পৌছতে একটু বিলম্ব হয়েছে। রাত ৮ টা থেকে বাল্যবন্ধু প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক সাইফুদ্দিন মামার কাছে জানতে চাইলাম ঈদের চাঁদ দেখা গিয়েছে কিনা। তিনি জবাবে বললেন, দেশের সবকটি জেলায় চাঁদ দেখা যায়নি। চাঁদ দেখা কমিটি সিদ্ধান্ত দিয়েছেন ৬ জুন বৃহস্পতিবার বাংলাদেশে ঈদ হবে। পরের রাত ১১টার দিকে শুনলাম চাঁদ দেখা গেছে। চাঁদ দেখা কমিটি পুনরায় ঘোষনা করলেন, ৫ জুন বুধবার ঈদ অনুষ্ঠিত হবে। এরই মধ্যে অসংখ্য ধর্মপ্রাণ মুসলমান নর-নারী রোজা রাখার প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। অপর দিকে তারাবির নামাজও আদায় করেছে। এতেকাফে থাকা মুসল্লিরা রাত সাড়ে ১১ টার সময় মসজিদ থেকে বাড়ি ফিরেছে। দেশের সিংহভাগ মুসলমান ঈদ নিয়ে বলেন, এক বাজে শৃংখলার মধ্যে। তবে খুবই জানতে ইচ্ছে করে চাঁদ দেখা কমিটির বিজ্ঞজনদের সিদ্ধান্তকি যথাযথ ছিল ? সন্ধ্যা থেকে ১০ টা পর্যন্ত চাঁদ দেখা যায়নি। হুট করে রাত ১১ টার দিকে চাঁদটা আকাশে আসল কিভাবে। চাঁদ দেখা কমিটি কি সিজারের মাধ্যমে চাঁদটি আবিস্কার করেছে। হয়ত একদিন এমনই সময় আসবে কোন দেশে রাত ১১ টায় ঈদের চাঁদ দেখা যায়। হয়ত ছাত্ররা অনায়াসে জবাব দেবে বাংলাদেশে। এবারের চাঁদ দেখা কমিটি ব্যর্থ এমন কথাটি বলা যাবে না। কারণ তারা রাত ১১ টায় হলেও ঈদের চাঁদটি আবিস্কার করতে সক্ষম হয়েছে। তবে সচেতন জনগোষ্টির প্রশ্ন চাঁদ দেখা কমিটির সিদ্ধান্তটি যথাযথ হয়নি। কারণ ইসলামী শরীয়ত মোতাবেক তোমরা চাঁদ দেখে রোজা রাখো। আর চাঁদ দেখে ঈদ কর। প্রাকৃতিক দূর্যোগের কারণে চাঁদ দেখা না গেলে রোজা রাখার সময় গণনা করো। এসব সিদ্ধান্তের কোনটায় দেশের চাঁদ দেখা কমিটি অনুস্বরণ করেনি। কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসকের কথায় চাঁদ দেখা কমিটি সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেছে। দেশের আপামর জনতা ঈদের নামাজ আদায় করেছে। এখানে রোজাদারদের কোন লাভ ক্ষতি নাই। আমরা দেশের নাগরিক হিসেবে সরকারের ঘোষনা মেনে নিতে বাধ্য। এর দায় সংশ্লিষ্টরাই নেবে। তবে এত বিলম্বে চাঁদ দেখা যাওয়া দৃষ্টান্ত মনে হয় বেশী নেই। তবে মনে হচ্ছে এবারের রমজানের রোজাদারদের তাই ১৫ ঘন্টার বেশী সময় রোজা রাখতে হয়েছে। তাই ঈদের চাঁদও বিলম্বে দেখা যাওয়ার কারণ হতে পারে। আগামীতে চাঁদ দেখা কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে ধর্মীয় জ্ঞানের অধিকারী বিজ্ঞজনদের নিয়ে কমিটি করলে এ ধরণের বিভ্রান্তির সৃষ্টি হবে না বলে বেশীর ভাগ মানুষের অভিমত। লেখাটি ঈদের পর পরই তৈরী করলেও নানা কারণে পোষ্ট করতে বিলম্ব হয়েছে। ( তারিখ- ০৯-০৬-২০১৯ ইং)।
লেখক: এম আর মাহমুদ
দৈনিক সমকাল, চকরিয়া প্রতিনিধি ও
সভাপতি- চকরিয়া অনলাইন প্রেসক্লাব
পাঠকের মতামত: