ঢাকা,বুধবার, ৪ ডিসেম্বর ২০২৪

চকরিয়া পেকুয়ার প্রবাসিদের নিরাপদ অভিবাসন নিশ্চিতকল্পে হেল্পডেক্স চালু 

সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরব, মালেশিয়াসহ বিদেশে কর্মরত কক্সবাজারের চকরিয়া ও পেকুয়া উপজেলার হাজারো প্রবাসি রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের নিরাপদ অভিবাসন নিশ্চিতকল্পে প্রথমবারের মতো চকরিয়ায় একটি হেল্পডেক্স চালু করা হয়েছে।
 
গতকাল শনিবার (২৩ নভেম্বর) বিকালে চকরিয়া পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের বাঁশঘাট সড়কে পিস সেন্টার নামে প্রবাসিদের তথ্য ও সহায়তা ডেক্স নামে সেবা কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়েছে। উপজেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট ও সহকারী কমিশনার (ভুমি) মো: এরফান উদ্দিন প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে হেল্পডেক্স সেবা উদ্বোধন করেন।
 
তাঁর আগে পিস সেন্টার আয়োজনে ‘প্রবাসী শ্রমিকের অধিকার সুরক্ষায় গণমাধ্যমের ভূমিকা’ শীর্ষক অভিবাসন সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে চকরিয়া ও পেকুয়া উপজেলার অন্তত ৩০ জন সাংবাদিক ও সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা সংলাপে অংশ নেন।
 
সংলাপের শুরুতে ফিল্মস ফর পিস ফাউণ্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক পারভেজ সিদ্দিকী সংস্থার আগামী কর্মপরিকল্পনা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, পিস সেন্টার এখন থেকে চকরিয়া ও পেকুয়া উপজেলার  প্রবাসীদের বিভিন্ন ধরনের তথ্য ও সহায়তা প্রদানের পাশাপাশি পাসপোর্ট করা থেকে শুরু করে ভিসা প্রসেসিং, ফি প্রদান, অতিরিক্ত ফি বন্ধ করা, অযৌক্তিক প্রশ্ন ও প্রক্রিয়ায় নানান রকমের হয়রানি দূর করা, কর্ম দক্ষতা বৃদ্ধি করা, তথ্য ও দলিলপত্র সংগ্রহ-সংরক্ষণে জোর দেয়া, বৈধ উপায়ে বিদেশ গমনে উৎসাহিত করা, বিদেশকালে প্রয়োজনীয় আচার-ব্যবহার ও নিয়ম-কানুনের বেসিক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে অধিকার সচেতন করা, গ্রামের স্থানীয় মধ্যস্থতাকারী (সাব এজেন্ট) ও বৈধ এজেন্ট সম্পর্কে সম্যক ধারণা প্রদান করবে।
 
তিনি বলেন, প্রবাসি রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের যাবতীয় প্রক্রিয়ার পূর্ব প্রস্তুতিমূলক খোঁজ-খবর নেয়া ও তথ্যাদি যাচাই পরাসহ সর্বোপরি সরকারের জনস্বাস্থ্য কর্মসংস্থান ব্যুরো ও প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বীকৃত আইন-কানুন সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানোই অভিবাসন সংলাপের মূল উদ্দেশ্য। তিনি বিশেষ করে প্রবাসিদের নানাবিধ সমস্যা ও প্রতারণার শিকার হওয়া ইত্যাদি বিষয়ের আলোকে প্রতিবেদন প্রকাশের মাধ্যমে জন সচেতনতায় ভূমিকা রাখার জন্য স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান।
 
পিস ফাউণ্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক পারভেজ সিদ্দিকীর সভাপতিত্বে সংলাপ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও সহকারি কমিশনার (ভূমি) এরফান উদ্দিন। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী ও ঢাকাস্থ চকরিয়া-পেকুয়া সমিতির সভাপতি মো. ফখরুদ্দিন, পিস ফাউণ্ডেশনের জেলা সমন্বয়ক এডভোকেট মারুফ বিন কবির, এশিয়া ফাউন্ডেশনের প্রকল্প কর্মকর্তা ইকবাল মাহমুদ, চকরিয়া থানার এসআই তাজুল ইসলাম ও চকরিয়া প্রবাসী সোসাইটির সভাপতি হুমায়ুন কবির ইসহাক।
 
সংলাপ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি বলেন, প্রবাসীদের অধিকার ও বিদ্যমান সমস্যা সমাধানের মাধ্যমে অভিবাসন সুবিধা বৃদ্ধি ও নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আয়োজিত আজকে সংলাপকে আমি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে মনে করি। ব্যক্তিগতভাবে আমার তিন বছরের প্রবাস জীবনের অভিজ্ঞতা রয়েছে। এসময় খুব কাছ থেকে প্রবাসীদের সমস্যা ও অন্যান্য বিষয়াদি সম্পর্কে জেনেছি। বর্তমান সরকারে বিমানবন্দরে প্রবাসী ও তাদের পরিবারের সম্মানজনক অবস্থানসহ রেমিটেন্স যোদ্ধাদের জন্য যুগোপযুগী সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধিতে বদ্ধ পরিকর।
 
তিনি আরও বলেন,  চকরিয়া-পেকুয়া উপজেলার  প্রায় ২৫ হাজার প্রবাসী রাজস্ব আয়ে কর্যকরী ভূমিকা রাখছে। এছাড়া বাংলাদেশের এ্যম্বাসিগুলোতে আরও বেশি জনবল নিয়োগ দেয়ার বিষয়ে তিনি গুরুত্বারোপ করেন। প্রবাসীদের বিভিন্ন ধরনের প্রতারণার প্রাথমিক সুরক্ষা হিসেবে ইউনিয়ন পরিষদের সালিশের মাধ্যমে সুরাহার যে উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে তাকে ইতিবাচক বলে মত দেন।
 
তিনি বলেন, কেবল প্রবাসীদের রেমিটেন্স দিয়ে আমাদের দেশের অর্থনীতির একটা বিশাল চাকা অবিরত ঘুরছে। এই অবদানকে প্রত্যেক বাংলাদেশীর যথেষ্ঠ সম্মান দিতে হবে। প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা ও সম্মান বৃদ্ধি করাসহ নৈতিক দায়িত্ববোধ থেকে তাদের পাশে থাকার জন্য আহ্বান জানান তিনি।
 
অনুষ্ঠানে দুইজন ভুক্তভোগী ভিসা নিতে টাকা দিয়ে  চকরিয়া উপজেলার পশ্চিম বড়ভেওলা ইউনিয়নের একটি প্রতারক চক্রের পড়ে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঘটনা তুলে ধরেছেন। তাঁরা এব্যাপারে আইনী সহায়তা পেতে গণমাধ্যমকর্মীদের মাধ্যমে প্রশাসনের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেন। এসময় তাদের বক্তব্য থেকে প্রবাসীদের সাথে হওয়া বিভিন্ন প্রতারণা সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। এছাড়াও উপস্থিত বিভিন্ন সেক্টরের প্রতিনিধিরা নিজের অবস্থান থেকে সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি শিক্ষা ও কর্মদক্ষতা বাড়ানো এবং আইনের প্রতি অনুগত থাকার গুরুত্ব তুলে ধরেন। এজেন্ট ও সাব-এজেন্টদের তালিকাভুক্তিসহ জবাবদিহিতার আওতায় আনার জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়।
 
অনুষ্ঠানে ফিল্মস ফর পিস ফাউন্ডেশন, ইপসা, আনন্দ ও সিপ’সহ বিভিন্ন এনজিও সংস্থার  কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও শিক্ষক প্রতিনিধি, পিস ফাউণ্ডেশনের অভিযোগ ব্যবস্থাপনা সদস্যবৃন্দ (জিএমসি) ও বিভিন্ন গণমাধ্যমে কর্মরত সংবাদিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। এসময় প্রত্যেকে তাদের নিজস্ব মতামত ব্যক্ত করার পাশাপাশি প্রবাসীদের মাঝে বিদ্যমান সমস্যগুলো সমাধানে অভিমত প্রকাশ করেন। 

পাঠকের মতামত: