ঢাকা,মঙ্গলবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৪

সরকারি ওষুধ বিক্রি হয়ে যাচ্ছে ফার্মেসীতে

মাহাবুবুর রহমান, কক্সবাজার ::  কক্সবাজার সদর হাসপাতালে রোগিদের জন্য আনা সরকারি ওষুধ বিক্রি করে দিচ্ছে সংশ্লিষ্ট নার্সরা। একই সাথে সরকারের বরাদ্দ করা সিরিঞ্জ, সুঁই সুতা থেকে শুরু করে প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম বিক্রি করে দিচ্ছে একটি সংঘবদ্ধ চক্র। দীর্ঘদিন ধরে এই অপকর্ম চলে আসলেও এখনো পর্যন্ত শাস্তি হয়নি কারো। ইতিমধ্যে কয়েকবার সরকারি ওষুধ বিভিন্ন ফার্মেসীতে ধরা পড়লেও বিচার হয়নি। সম্প্রতি সদর হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডের জন্য বরাদ্দ করা সুঁই সিরিঞ্জ কক্স-ন্যাশনাল ফার্মেসীতে পাওয়া গেলে তোলপাড় হয় সর্বত্র। এনিয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করেই দায় সেরেছে কর্তৃপক্ষ। তবে মূলহোতা এখনো বহাল তবিয়তে।
কক্সবাজার সদর হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডের জন্য বরাদ্দ করা প্রায় ১ হাজার সুঁই সিরিঞ্জ শহরের কক্স ন্যাশনাল ফার্মেসীতে বিক্রি করার জন্য নিয়ে গেলে সেখানে আরেক হাসপাতালের কর্মচারী সেটা দেখে ফেললে গোমর ফাঁস হয়ে যায়। পরে সেই সুঁই সিরিঞ্জ উদ্ধার করে হাসপাতালে আনলে জানা যায় ডায়রিয়া ওয়ার্ডের ইনচার্জ নার্স রতœাশ্রী মল্লিক টাকার বিনিময়ে এই সুঁই সিরিঞ্জ বাইরে বিক্রি করছিল।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, নার্স রতœাশ্রী মল্লিক ২৯ অক্টোবর একটি ঔষধ কোম্পানীর প্রতিনিধি (এমআর) এর মাধ্যমে ব্যাগে করে সুঁই সিরিঞ্জ গুলো কক্স ন্যাশনাল ফার্মেসীতে পাঠিয়েছিল। তবে সেখানে ব্যাগ খুলতেই চোখে পড়ে হাসপাতালের একটি এনজিওর নিয়োগকৃত সুপারভাইজার রিয়াজের। তখনি ঘটে বিপত্তি।
এব্যাপারে সুপারভাইজার রিয়াজ বলেন, আমি সরকারি সুঁই সিরিঞ্জ দেখতে পেয়ে সেই এমআরকে ধরে ফেলি। পরে হাসপাতালে আনতে চাইলে সে পালিয়ে যায়। পরে সেগুলো কর্তৃপক্ষকে দেওয়া হয়েছে।
এব্যাপারে কক্স ন্যাশনাল ফার্মেসীর মালিক কামাল আহাম্মদ বলেন, আমার ফার্মেসী থেকে কোন সরকারি সিরিঞ্জ পাওয়া যায়নি। যা হয়েছে বাইরে; সে বিষয়ে আমি কিছুই বলতে পারব না।
এ ব্যাপারে মূল অভিযুক্ত নার্স রতœাশ্রী মল্লিক বলেন, যা হয়েছে সেটা ভুল বোঝাবুঝি। আমি কিছুই জানিনা বলে ফোন রেখে দেন তিনি।
এদিকে হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, সরকারিভাবে প্রতিটি ওয়ার্ডের রোগিদের জন্য সুঁই সিরিঞ্জসহ প্রয়োজনীয় ওষধ সরবরাহ করা হয়। এর মধ্যে অনেক নার্স ইনচার্জ রোগিদের সরকারি বরাদ্দ করা প্রয়োজনীয় ওষুধ না দিয়ে তা বাইরে বিক্রি করে দেয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মচারী বলেন, গাইনী ওয়ার্ডে প্রতিদিন এরকম ঘটনা ঘটে। প্রতিটি সিজারে রোগিদের কাছ থেকে প্রায় ৩ হাজার টাকার ওষুধ কেনা হয়। তবে সেগুলো বেশির ভাগই ব্যবহার হয় না, যার বেশির ভাগই পরে বাইরে বিক্রি করে দেয় নার্স সহ অন্যরা। এছাড়া অপারেশন চলাকালীন হঠাৎ করে ভেতর থেকে নার্সরা ছোট স্লিপ দিয়ে অনেক ওষুধ এবং প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম আনতে বলে এতে স্বাভাবিক রোগির স্বজনরা তাড়াতাড়ি এগুলো নিয়ে আসলেও তার ভেতর পর্যন্ত পৌছেনা। যার সবগুলোই নিজেদের আয়ত্বে রেখে দেয়। পরে নার্সরা সেগুলো বাইরের ফার্মেসীতে বিক্রি করে দেয়।
হাসপাতাল সংশ্লিষ্টদের দাবী, কয়েক বছর আগে শর্মা ফার্মেসী থেকে প্রায় ৩ বস্তা সরকারি ওষুধ জব্দ করা হয়েছিল। সেটা নিয়ে তদন্ত কমিটিও করা হয়েছিল। কিন্তু কোন তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশিত হয়নি। এছাড়া ঘোনারপাড়া থেকেও সরকারি ওষুধ আটক করা হয়েছিল। এছাড়া আরো নানান অনিয়ম দুর্নীতির বিষয় ছিল কিন্তু কোনটির জন্য কেউ সাসপেন্ড বা কোন শাস্তি পায়নি। তাই বার বার এ ধরনের অপরাধ হচ্ছে। আমাদের দাবী ২৭ অক্টোবর সরকারি জিনিস বাইরের ফার্মেসীতে পাওয়া গেলে সেটার সাথে সরাসরি জড়িত নার্স রতœাশ্রী মল্লিককে সাময়িক অব্যাহতি দেওয়া দরকার। তাকে চাকরীতে রেখে তদন্ত করা মানে এগুলো লোক দেখানো। এধরনের ঘটনায় প্রায় ঘটছে বলে দাবী করেন তারা।
এ ব্যাপারে জেলা সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাঃ নোবেল কুমার বড়ুয়া বলেন, ঘটনা জানার পরেই আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি। আপাতত সিনিয়র কনসালটেন্ট ডাঃ কবির আহাম্মেদকে প্রধান করে আমি নিজে সদস্য সচিব হিসাবে থেকে ৩ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তাই তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত আপাতত কিছু বলতে পারছিনা।

পাঠকের মতামত: