ঢাকা,মঙ্গলবার, ১২ নভেম্বর ২০২৪

রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পে প্রাণের সঞ্চার

rel coxbazarকক্সবাজার প্রতিনিধি :::

অবশেষে আলোর পথে এগোচ্ছে দোহাজারি-কক্সবাজার রেলপথ নির্মাণ প্রকল্প। সদ্য ঘোষিত ২০১৭-১৮ অর্থ বছরের বাজেট প্রস্তাবনায় এই প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে এক হাজার ৫৬১ কোটি ২৪ লাখ টাকা। ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে জমি অধিগ্রহনের কাজ। এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে সারাদেশের সাথে পর্যটন নগরী কক্সবাজারের যোগাযোগ ব্যবস্থায় বৈপ্লবিক পরিবর্তনের সূচনা হবে। জেলার পর্যটন বিকাশের ক্ষেত্রে উন্মোচন হবে নতুন দিগন্তের।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, জেলার ৩৩টি মৌজার প্রায় ৭২ কিমি দীর্ঘ রেললাইন নির্মাণের জন্য চকরিয়া, রামু ও কক্সবাজার সদর উপজেলায় মোট এক হাজার ৭৩ একর জমির অধিগ্রহন কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। এর মধ্যে ছয়টি সংস্থার মোট ১৮৯ দশমিক ৮৮ একর জমি রয়েছে। ইতোমধ্যে ভূমি অধিগ্রহণের জন্য মোট ৯৩১ কোটি টাকা নথিখাতে জমা প্রদান করা হয়েছে। আশা করা হচ্ছে চলতি জুন মাসের মধ্যে ভুমি অধিগ্রহন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা যাবে। প্রকল্পটিতে অর্থায়ন করছে এশিয়ান ডেভেলপম্যান্ট ব্যাংক (এডিবি)।
রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে পর্যটক আকর্ষণ করার জন্য কক্সবাজার বাস টার্মিনালের বিপরীতে চৌধুরীপাড়ায় ‘আইকনিক ইন্টারন্যাশনাল রেলওয়ে স্টেশন’ নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। ঝিনুক আকৃতির এ স্টেশন দেখলেই বোঝা যাবে এটি সমুদ্র সৈকতের স্টেশন। চলতি জুন মাসেই রেলস্টেশন ও দোহাজারী-কক্সবাজার রেল লাইনের নির্মাণকাজ শুরু হতে পারে। প্রথমে রেললাইন হবে চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে রামু পর্যন্ত। রামু হবে জংশন। আর সেখান থেকে একটি লাইন চলে যাবে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে। তখন ঢাকা থেকে সরাসরি ট্রেনে পৌঁছানো যাবে কক্সবাজারে। পরবর্তী সময়ে কক্সবাজার থেকে আরেকটি লাইন পূর্ব দিকে যাবে মিয়ানমারের কাছে ঘুমধুমে। ২০২০-২২ সালের মধ্যেই সব কাজ শেষ হওয়ার কথা। আর এর মাধ্যমে আন্তর্জাতিক রেল নেটওয়ার্ক ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়েতে যুক্ত হবে বাংলাদেশের রেলপথ। এ রেলওয়ে নেটওয়ার্ক মিয়ানমার-বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান-ইরান হয়ে যাবে ইউরোপের তুরস্ক পর্যন্ত।
রেলওয়ে সূত্রে আরও জানা যায়, প্রস্তাবিত রেললাইনের ‘রুট এলাইনমেন্ট’ পিলার দিয়ে চিহ্নিত করা হয়েছে। চলছে জমি অধিগ্রহনের কাজ। উঁচু-নিচু টিলা, বনভূমি ও সমতল সবুজ প্রান্তর পেরিয়ে রেললাইনটি শেষ হবে সমুদ্রতীরের একেবারে কাছে। এ জন্য ইতোমধ্যে পরিবেশ অধিদফতর ও বন বিভাগের অনাপত্তিপত্র নেওয়া হয়েছে। এ রুটে ১৪০ কিলোমিটার নতুন ‘ডুয়েল গেজ’ রেললাইন নির্মাণ করা হবে। বনভূমির যেসব স্থানে বন্যপ্রাণী ও হাতির বিচরণ এলাকা, সেসব স্থান চিহ্নিত করে ‘প্যাসেজ’ নির্মাণ করা হবে। দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত থাকবে ৯টি রেলস্টেশন। এগুলো হবে দোহাজারী, সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, হারবাং, চকরিয়া, ডুলাহাজারা, ইসলামাবাদ, রামু ও কক্সবাজার। তবে কক্সবাজারের প্রস্তাবিত রেলস্টেশন এলাকা এখনো ধানি জমি। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ চৌধুরীপাড়ার ওই স্থানটি চিহ্নিত করে রেখেছে। রামু থেকে চৌধুরীপাড়ায় কক্সবাজার স্টেশনে আসতে লাইনের দুটি স্থানে সড়ক ক্রসিং থাকবে।
সম্প্রতি প্রকল্প পরিচালক মফিজুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, ইতোমধ্যে দোহাজারী থেকে রামু পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণকাজ দুই ভাগে বিভক্ত করে দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। প্রথম ভাগে দোহাজারী থেকে চকরিয়া পর্যন্ত ট্র্যাক নির্মাণ, রেলের সিগন্যালিং ও টেলিকমিউনিকেশন কাজ করা হবে। পরে চকরিয়া থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত ট্র্যাক নির্মাণ এবং কক্সবাজার রেলস্টেশন নির্মাণ করা হবে।

পাঠকের মতামত: