বাহার উদ্দিন রায়হান বয়স ১৮ বছর। পিতা বশির উদ্দিন, মাতা খালেদা বেগম। তাদের একমাত্র সন্তান রায়হান। জন্ম কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার লক্ষ্যারচর ইউনিয়নে রুস্তম আলী চৌধুরী পাড়া গ্রামে। জন্মের পর মারা জান তার বাবা। মা কৃষি কাজ করে যা আয় হয় তা দিয়ে কোন রকম সংসার চালায়। মামার বাড়ির স্বজনদের সাহায্য সহযোগিতায় সংসার চালাতে হয়। অন্যদের মতো দূরন্তপনায় দিন চলত রায়হানের। লেখাপড়ার পাশাপাশি পাহাড়ের গাছ কাঠা, বাজার এনে দেয়া সহ সহযোগিতা করতেন মাকে। দরিদ্র মায়ের আয়ে মোটামোট ভালই চলছিল দু জনের সংসার। ২০০৪সালের ৩০অক্টোবর পঞ্চম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় ঘটে যায় তার জীবনের ভয়াবহ দূর্ঘটনা। যে ঘটনায় তার শরীর থেকে কেড়ে নেয় দুটি হাত। আর শিক্ষাজীবন থেকে কেড়ে নেয় দুইটি বছর। একটি পাখি যখন বিদ্যুতের খুটিতে ঢুকতে দেখে কৌতুহল জাগে সে আর বাহির হচ্ছে না কেন! সেই পাখিকে বাচাঁনোর জন্য বিদ্যুতের খুটি বেয়ে উঠতেই হঠাৎ তারে জড়িয়ে নিচে পড়ে যায়। অজ্ঞান অবস্থায় মাটিতে পড়ে থাকতে দেখে অনেকে ভয়ে তাকে বাচাঁতে এগিয়ে আসেনি। তার স্বজনরা এগিয়ে এসে চকরিয়া জমজম হাসপাতাল পরে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে যাওয়া হয়। প্রথমে একটি হাত পরে আরও একটি হাতের কনুই পর্যন্ত কেটে জীবন ফিরে পায় রায়হান। ছয় মাসে লক্ষাধিক টাকা ব্যয় করে দুটি হাত হারাতে হয় রায়হানকে। সুস্থ হয়ে বাড়িতে ফেরার পর ভাবনা হয় এখন কিভাবে লিখবে ? শরীরের দুটি হাত যে তার নেই। যে হাত দিয়ে অসহায় মাকে সহযোগিতা করত সেই হাতই নেই। একদিন মূখদিয়ে লেখার চেষ্ঠা করে। লেখা ছোট-বড় হয় তবুও চেষ্ঠা করতে থাকে সবার আড়ালে। আবার স্কুলেও ভর্তি হল। কিন্তু লিখতে পারে না বলে শিক্ষকরা স্কুলে ভর্তি করতে চায়নি। হাতে পায়ে ধরে তৃতীয় শ্রেণিতে ভর্তি করতে রাজি হলেন। প্রথম পরীক্ষায় না লিখে মৌখিক দিয়ে রেজাল্টও ভাল করল। এভাবে পরীক্ষা দেয়া ভাল লাগছে না রায়হানের। নিজে লিখেই পরীক্ষা দেবে এই ছিল মনোবল তার। মূখদিয়ে আস্তে আস্তে সেই ছোট বেলা থেকে অক্ষর লেখা শুরু করেন। মাঝে মধ্যে লেখা ছোট বড় হলেও অনেক চেষ্ঠার ফলে সব ঠিক হয়ে যায়। এভাবে চকরিয়া সরকারী বালক উচ্চ বিদ্যালয় থেকে জেএসসি ও এসএসসি পরে চকরিয়া বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করেন ২০১৬ সালে। গ্রেট বেশী না পেলেও তার পড়ার ইচ্ছা এবার সে উচ্চ শিক্ষার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিষয়ে পড়তে চায়। এই পেশার মাধ্যমে মানুষের সেবা করার সুযোগ থাকে। তাই সে আইন নিয়ে পড়ার আগ্রহী বেশি তার। পাখিকে বাঁচাতে গিয়ে রায়হানের দুই হাত হারালেও এখন সেই পাখিটির কী অবস্থা জানতে কৌতুহল সৃষ্টি হয় তার মনে। এমন করে কোন শিশু যাতে প্রতিবন্ধিতার শিকার না হয়। এখন রায়হান সব কাজ নিজের মত করে করতে পারেন। কম্পিউটার থেকে শুরু করে একজন মানুষ যা পারে প্রতিবন্ধিতার শিকার হলেও সবই তা করতে পারে। শুধু দরকার হয় ইচ্ছা শক্তির। রায়হান স্বপ্ন দেখে তার প্রতিবন্ধিতার কোটায় হলেও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ। তাই বর্তমানে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এ অনার্স ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করছেন। নিজেকে আইন পেশায় নিয়োজিত রেখে তার মায়ের মত দরিদ্র মানুষের পাশে থেকে দেশের সেবা করার। ##
পাঠকের মতামত: