ঢাকা,শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪

মাতামুহুরীর তীর সংরক্ষণে দেড় কোটি টাকা জলে

জহিরুল ইসলাম, চকরিয়া :chaka
মাতামুহুরী নদীর চকরিয়া উপজেলার কাকারা অংশের তীর সংরক্ষণ কাজে অনিয়ম ও দুর্নীতির আশ্রয় নেয়ায় প্রায় দেড় কোটি টাকার কাজ বর্ষার প্রথম বৃষ্টিতেই নদীতে তলিয়ে গেছে। কাজ শেষ করার এক বছরের মধ্যে দেড় কোটি টাকা জলে চলে গেল। অভিযোগ উঠেছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও ঠিকাদার যোগসাজস করে প্রকল্প বাস্তবায়নে দুর্নীতির আশ্রয় নিয়েছে। সিমেন্ট না দিয়ে শুধুই বালির বস্তা দিয়ে যেন-তেনভাবে কাজ শেষ করায় এ বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। এতে ওই এলাকায় বহু ঘরবাড়ি, স্থাপনা, বাজার, সড়ক, শিক্ষা প্রতিষ্টান, মসিজদ ও ফসলি জমি নদী ভাঙনের শিকার হয়েছে। ইতোমধ্যে ওই এলাকার প্রধান সড়কটি একটি অংশ নদীতে তলিয়ে গেছে। আরও বহু স্থাপনা ও ঘরবাড়ি হুমকীর সম্মূখীন হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড় সুত্র জানায়; মাতামুহুরী নদীর চকরিয়ার কাকারা অংশের ডান তীর রক্ষার জন্য গত বছর দেড় কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। সিমেন্ট ও বালির বস্তা ফেলে নদীর তীর প্রতিরক্ষার ওই কাজটির দায়ীত্ব পান ‘চকরিয়া ডেভলাপমেন্ট সোসাইটি’ নামের একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্টান। প্রায় ৩ শত মিটারের এই কাজটিতে নামে মাত্র সিমেন্ট ব্যবহার করা হয়েছে। ১৬ ভাগ বালিতে মাত্র এক ভাগ সিমেন্ট দেয়া হয়েছে। এভাবে বস্তায় বালি ভর্তি করে নদীর তীরে বসানো হয়েছিল। নদীর তল দেশে কোন জিও ব্যাগ দেয় হয়নি। বস্তাগুলোও খুবই নিন্মমানের। বস্তাগুলো বসানেরা সময়ই বহু বস্তা ফেটে বালি বের হয়ে যায়। গত বছরই ভাঙ্গন শুরু হয়। এ বছর গত ১২ জুন নদীতে প্রথম পাহাড়ী ঢল নামে। ওই সময় এসব বালির বস্তা নদীতে তলিয়ে যায়।
bagএ ব্যাপারে কাকারা ইউনিয়নের বাসিন্দা মুক্তিযোদ্ধা মাহবুবুর রহমান জানান; বালির বস্তায় সিমেন্ট না দেয়া ও নিন্মমানের কাজের বিরুদ্ধে এলাকাবাসি শুরু থেকে অভিযোগ করে আসছেন। কিন্তু পানি উন্নয়ন বোর্ডের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা কারো কথা শুনেন নি। তারা ঠিকাদারের সাথে যোগসাজস করে যেন-তেনভাবে কাজ শেষ করেছেন। এলাকাবাসি জানায়; এ বর্ষার বাকী সময়ে নদীতে যখন তীব্রভাবে পাহাড়ী ঢল নেমে আসবে তখন ঘরবাড়ি, সড়ক, স্থাপনা, শিক্ষা প্রতিষ্টান, বাজার, মসজিদ ও বহু ফসলি জমি নদীতে বিলীন হয়ে যাবে।
এলাকাবাসি জানায়, খবর পেয়ে ভাঙনস্থল পরিদর্শন করেছেন, চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ সাহেদুল ইসলাম, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম আজাদ, কাকারা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শওকত ওসমান। এলাকাবাসী জানায়; তাদের অনেক আবেদন-নিবেদনের পর মাতামুহুরী নদীর কাকারা’র নদীর ডান তীর সংরক্ষণে সিমেন্টের ব্যবহার ছাড়াই এভাবে বস্তা বিছানো হয়েছিল। এতে নদী ভাঙন ঠোকনো দূরে থাক, সামান্য বৃষ্টিতেই বস্তাগুলো নদীতে তলিয়ে যায়। এতে করে দেড় কোটি টাকার এই প্রকল্প পুরোটাই বন্যায় বিলীন হয়ে গেল। বিএনপি নেতা ঠিকাদার ফরিদুল আলম বলেছেন, আমি পানি উন্নয়ন বোর্ডে আগে আর কোন কাজ করিনি। এটি পানি উন্নয়ন বোর্ডে আমার প্রথম কাজ। তাই কী ভাবে কাজ করতে হয় তা বুঝতে পারিনি। বরাদ্দের অনেক টাকা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কাজ করার সময়ই দিয়ে দিতে হয়েছে। এমনকি এ কাজটির জন্য চকরিয়া উপজেলা পর্যায়ের ক্ষমতাসীন এক প্রভাবশালী (জনপ্রতিনিধি) নেতাকেও কট দিতে হয়েছে। কাকারা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শওকত ওসমান জানান, ঠিকাদারের অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে যেনতেনভাবে সম্পন্ন করায় এই প্রকল্প অকার্যকর হয়ে পুরো কাজটি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। বান্দারবান পানি উন্নয়ন বোর্ডের চকরিয়া অফিসের উপসহকারী প্রকৌশলী রাকিবুল জানান, শুনেছি কাজটি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। তবে আমি সেখানে যায়নি। বন্দরবান পানি উন্নয়ন বোর্ডের থানছি শাখা কর্মকর্তা মিজানুল হক জানান, আমি ওই এলাকায় গিয়েছি। এ কাজটির কিছু অংশ গত বছর, কিছু অংশ এ বছর নদীতে তলিয়ে গেছে। কী পরিমান ক্ষতি হয়েছে তা মেজরমেন করে দেখিনি।

পাঠকের মতামত: