ঢাকা,শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪

ভাঙ্গন ঠেকাতে মেরিণ ড্রাইভ সড়ক নির্মাণের পরিকল্পনা

তুষার তুহিন, কক্সবাজার :::ssssss
জোয়ারের তোড়ে ভাঙ্গছে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত। বিণষ্ট হচ্ছে সৈকতের সৌন্দর্য। হুমকির মুখে পড়েছে সমুদ্রের কূল ঘেষে নির্মিত স্থাপনা। গত দুই মাসে বিলীন হয়ে গেছে ৩ হাজারের উর্ধ্বের ঝাউগাছ। চলতি বছরে সাগরের অতলে হারিয়ে গেছে কলাতলী থেকে সমিতি পাড়া সমুদ্র সৈকত পর্যন্ত প্রায় দেড় কিলোমিটার প্রস্থের বালুচর। বিলীন হয়েছে ঝাউবিথীর মাঝখান দিয়ে নির্মিত পর্যটকদের ওয়াক ওয়ে। আর এ ভাঙ্গন অব্যাহত থাকলে কোটি কোটি টাকা লোকসান  গুনতে হবে ব্যবসায়ীদের। তবে এই ভাঙ্গন রোধে কলাতলী থেকে সমিতিপাড়া সমুদ্র সৈকত পর্যন্ত মেরিণ ড্রাইভ সড়ক নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহন করেছেন জেলা প্রশাসন। পাশাপাশি প্রাকৃতিক বেষ্টনি তৈরি সহ নানা পদক্ষেপ গ্রহনের জন্য একটি বিশেষজ্ঞ টিম গঠনের সুপারিশও করা হয়েছে। এ বছরের শুরুতেই এমন একটি প্রস্তাবণা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ঠ মন্ত্রণালয়ের জমা দেওয়া হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছাস, পূর্ণিমা ও অমাব্যসার জোয়ারের তোড়ে প্রতিনিয়তই ভাঙ্গছে সৈকতের পাড়। এছাড়া অপরিকল্পিতভাবে বাঁকখালী নদী থেকে বালি উত্তোলন, অব্যহত পাহাড় কাটা কারণে ভাঙ্গছে সমুদ্র সৈকত। তবে এই বর্ষা মৌসুমে ভাঙ্গন মারাত্মক রূপ নিয়েছে। ইতিমধ্যে সাগরে বিলীন হয়ে গেছে দেড় কিলোমিটার প্রশস্থ সৈকত।
কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের সদর রেঞ্জ কর্মকর্তা তাপস কান্তি পাল  জানান, সাগরের করাল গ্রাসে হারিয়ে যাচ্ছে সৈকত। রক্ষা করা যাচ্ছে না ঝাউবন।
গত দুই মাসে তিন হাজারেরও অধিক ঝাউগাছ বিনষ্ট হয়েছে। সৈকতের সমিতিপাড়া, ডায়াবেটিক হাসপাতাল এবং বালিকা মাদ্রাসা পয়েন্টে আরো  ৫ শতাধিক ঝাউগাছ হেলে পড়েছে।
শনিবার বিকেলে সৈকতে গিয়ে দেখা যায় পূর্ণিমার জোয়ারে সাগরের পানি ফুঁসে উঠেছে। স্বাভাবিকের চেয়ে যা ৩/৪ ফুট বৃদ্ধি পেয়েছে। জোয়ারের  উত্তাল ঢেউ  আছড়ে পড়ছে ওয়াক ওয়ের উপর। কোথাও কোথাও বিলীন হয়ে গেছে পর্যটকদের হাটার রাস্তা।  বিশেষ করে নাজিরারটেক, সমিতি পাড়া, ডায়বেটিকস পয়েন্ট, কবিতা চত্বর, শৈবাল পয়েন্ট ও সী ইন পয়েন্টের ভাঙ্গন মারাত্বক রুপ নিয়েছে।
কক্সবাজার পৌরসভার  কাউন্সিলর আকতার কামাল  জানান,  কয়েক বছর ধরে অব্যাহত ভাঙনের পরে বির্স্তীণ সৈকত বিলীন হয়ে গেছে। সমিতিপাড়ার পশ্চিমাংশে নির্মিত অনেক ঘরবাড়ির মানুষ উদ্ধাস্তু হয়েছে। ঝাউবনও অল্প কিছু অবশিষ্ঠ রয়েছে।
সেভ দ্যা নেচার অব বাংলাদেশ এর চেয়ারম্যান মোয়াজ্জেম হোসাইন জানান, ভাঙ্গনের কারনে সমুদ্র সৈকতের সৌন্দর্য বিনষ্ট হচ্ছে। এভাবে ভাঙ্গন অব্যাহত থাকলে পর্যটকরা কক্সবাজার বিমুখ হবে । তাই ভাঙ্গন রোধে জরুরী ব্যবস্থা গ্রহন করা দরকার।
তিনি আরো জানান, পরিকল্পিতভাবে সমুদ্র সৈকতে সবুজ বনায়ন করতে হবে। পাশাপাশি বালুরচরে গুল্ম লতা রোপন করতে হবে। এছাড়া  কলাতলী থেকে সমিতিপাড়া পাড়া মোড় পর্যন্ত সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধায়নে মেরিন ড্রাইভ সড়ক নির্মাণ করা হলে ভাঙ্গন রোধ করা সম্ভব হবে।
কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের  নির্বাহী প্রকৌশলী শবিবুর রহমান  জানান, সৈকতের ভাঙ্গন রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে  শহর রক্ষা বাধ প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু পর্যটক বিমুখ হতে পারে ভেবে  প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন জানান, সমুদ্র তীরে ৭ ফুট উচু বাধ নির্মাণ করা হলে সৈকতের সৌন্দর্য বিনষ্ট হবে। ফলে পর্যটকরা আর্কষন হারাবে। এই কারনে সৈকতে শহর রক্ষা বাধ নির্মাণ করা হচ্ছে না। তবে সৈকত থেকে ৩ ফুট উচু করে কলাতলী থেকে সমিতি পাড়া পর্যন্ত মেরিণ ড্রাইভ সড়ক নির্মাণের একটি প্রস্তাবণা হাতে নেওয়া হয়েছে। প্রস্তাবণাটি সংশ্লিষ্ঠ দপ্তরে জমা দেওয়া হয়েছে। আশা করা হচ্ছে এটি দ্রুত আলোর মুখ দেখবে।
এছাড়া সৈকতের সৌন্দর্য বৃদ্ধি, প্রাকৃতিক বেষ্টনি তৈরির করার জন্য একটি বিশেষজ্ঞ দল গঠনের প্রস্তাব করে পর্যটন মন্ত্রণালয়কে অবহিত করা হয়েছে।

পাঠকের মতামত: