ঢাকা,শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪

প্রেমের প্রস্তাব প্রত্যাখানে বখাটের ছুরিকাঘাত, হাসপাতালে কাতরাচ্ছে কোনাখালীর বিলকিস

bilkisনিজস্ব প্রতিবেদক :::

লেখাপড়া করে আলোকিত হতে চেয়েছিলেন বিলকিস। কারণ একমাত্র মেয়ে হিসাবে তাকে নিয়ে মা-বাবার একটা স্বপ্ন ছিলো। স্বপ্ন ছিলো তাদের মেয়েটি শিক্ষিত হয়ে তাদের ঘরে ‘আলো’ জ্বালাবে। তাইতো একনিষ্ঠ মনে পড়ালেখায় মন দিয়েছিলো মেয়েটি। কিন্তু মেয়েটির স্বপ্ন পূরণের পথে কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়ে যায় এক বখাটে। ওই বখাটে প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে আসছিল মেয়েটিকে। শুধু তাই নয়; মাদ্রাসায় যাওয়া-আসার পথে করতো উক্ত্যক্ত। কিন্তু মেয়েটিও বার বার প্রত্যাখ্যান করে আসছিলো। এতে ক্রমান্বয়ে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে ওই বখাটে। শেষ পর্যন্ত ক্ষিপ্ত বখাটে মেয়েটিকে দুনিয়ার থেকে সরিয়ে দেয়ার মতো দু:সাহস করে। সে মোতাবেক মাদ্রাসায় যাওয়ার পথে একা পেয়ে মেয়েটিকে উপর্যপুরি ছুরিকাঘাত করে নিষ্ঠুর ওই বখাটে। ধারালো ছুরির আঘাতে ক্ষতবিক্ষত মেয়েটি এখন মৃত্যু পথযাত্রী। বর্তমানে কক্সবাজার সদর হাসপাতালের বেডে অসচেতন পড়ে আছে বিলকিস। চিকিৎসকেরা নানা চেষ্টা-তদবির করে যাচ্ছেন মেয়েটিকে সারিয়ে তুলতে।

জানা যায়, কোণাখালী সেনঘোনা এলাকার মোকতার আহমদের মেয়ে ও কোনাখালী হেদায়তুল উলুম দাখিল মাদ্রাসার নবম শ্রেণীর ছাত্রী হুরে জন্নাত বিলকিছ (১৫) ৫ ডিসেম্বর সকালে মাদ্রাসার যাওয়ার পথে উৎপেতে থাকা কোণাখালী খাতুরবাপের পাড়া ৩ নং ওয়ার্ডের আবুল কাশেমের পুত্র ও মেহেরনামা উচ্চ বিদ্যালয়ের এসএসসি পরীক্ষার্থী বখাটে মিনহাজ উদ্দিন বিলকিসকে উপর্যপুরি ছুরিকাঘাত করে।

চিকিৎসকেরা জানান, ছুরির আঘাতে বিলকিসের দু’হাতের পাঁচটি রগ কেটে কেটে। ছুরিকাঘাতে প্রচুর রক্তক্ষরণও হয়েছে তার। সে কারণে দু’দিনের চিকিৎসায়ও মেয়েটি ৮০ শতাংশ অসচেতন রয়েছেন। তাকে জরুরী ভিত্তিতে উন্নত অস্ত্রোপচার দরকার।

শুক্রবার রাতে হাসপাতালে কথা হলে বিলকিসের বাবা মুদি দোকানী মোক্তার আহামদ কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আমার একমাত্র মেয়ে এবং বড়ই আদরের। তাকে যে ছুরিকাঘাত করা হয়েছে মনে হচ্ছে তা আমার বুকে বিদ্ধ হয়ে আছে।’

তিনি বলেন, ‘আমি সামান্য মুদি দোকানী। অতি কষ্টে সন্তানদের লালন-পালন করছি। বিলকিসকে অস্ত্রোপচার করতে হবে চট্টগ্রাম মেডিকেলে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছে চিকিৎসকেরা। কক্সবাজারের প্রাইভেট হাসপাতালে দেখেছি। তারা দু’লাখ টাকা চেয়েছে। কিন্তু আমি এতো টাকা পাবো কোথায়?’

স্থানীয় লোকজন জানান, ঘটনার পরই ছুরিকাঘাতকারী বখাটে মিনহাজকে স্থানীয়রা আটক করে ইউপি কার্যালয়ে হস্তান্তর করেন। কিন্তু রহস্যজনক কারণে মিনহাজকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। ছাড়া পেয়ে ওই বখাটেসহ তার পরিবারের লোকজন বিলকিসের পরিবারকে বাড়াবাড়ি না করতে হুমকি দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তার পিতা মোক্তার হোসেন। এমনকি শুক্রবার বখাটে মিনহাজের বাবা আবুল কাশেম কক্সবাজার সদর হাসপাতালে এসে মীমাংসার নামে সাদা কাগজে দস্তখত করতে বিলকিসের বাবাকে চাপ সৃষ্টি করেন। দস্তখত না দেয়ায় তাকে দেখে নেয়ার হুমকি দেন বখাটের বাবা।

স্থানীয় লোকজন জানান, সম্প্রতি দেশের সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা সিলেটের খদিজার ঘটনার অবিকল বিলকিসের এই ঘটনা। খদিজা আলোচনায় আসলেও বিলকিস আসেনি। কারণ তারা গরীব মানুষ। এ ধরণের বর্রবরোচিত হামলার ঘটনা নিয়ে এলাকার লোকজনের মাঝে এলাকায় চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে। তারা বখাটে মিনহাজকে গ্রেফতার করে কঠোর শাস্তি দেয়ার দাবি জানান।

অভিযোগ রয়েছে, বখাটে মিনহাজের পরিবার ঘটনাটি দামাচাপা দিতে মোটা অংকের মাধ্যমে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও ওই ওয়ার্ডের মেম্বারকে ম্যানেজ করেছে।

এ ব্যাপারে কোনাখালী ইউপি চেয়ারম্যান দিদারুল ইসলাম সিকদার বলেন বলেন, আমি বিষয়টি জানার পর ওই মিনহাজকে আটক করে স্থানীয় মেম্বারকে জিম্মায় ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তবে ওই ছাত্রী সুস্থ হলে শালিসের মাধ্যমে মিনহাজের বিচার হবে।’

পাঠকের মতামত: