কক্সবাজারের পেকুয়া থানাকে ঘিরে রাজনৈতিক দলের নেতা বা বিভিন্ন নামধারী একশ্রেণীর দালালের নিয়ন্ত্রণে চলছে জম্পেশ সালিশ বাণিজ্য। সালিশী বৈঠকের নামে এসব নামধারী ব্যক্তিরা রাত দিন থানাকে ঘিরে গড়ে তুলেছে বিচারশালা। ফলে পুলিশের নিকট আসা বিচারপ্রার্থীরা পড়ছেন চরম বিপাকে। থানার অভ্যন্তরে সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত এদের নিরাপদ বিচরণ লক্ষ্য করা গেছে।
সরেজমিন দেখা যায়, থানায় কোন সেবাপ্রার্থী প্রবেশ করা মাত্র বিভিন্ন কৌশলে সেবাপ্রার্থীদের তারা তাদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে অভিযোগ শোনেন। অভিযোগের ধরণের ওপর নির্ভর করে সালিশ প্রক্রিয়া ও আর্থিক লেনদেন। তারাই ঠিক করে দেন থানার কোন কর্মকর্তা বিচারকের দায়িত্ব পাবে এবং বিচারের রায়। এভাবে তারা প্রতিনিয়ত সাধারণ মানুষের সরলতার সুযোগে সালিশ বাণিজ্যর নামে হাতিয়ে নিচ্ছেন হাজার হাজার টাকা। থানার নিচে বসানো হয়েছে চেয়ার টেবিল এসবকিছুতে তারা বসে থাকে।
নাম প্রকাশ না করা শর্তে বেশ কয়েকজন সচেতন ব্যক্তি জানান, চক্রটি ভুক্তভোগীদের যেকোন এক জনের পক্ষ হয়ে মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে আপোষ রফা-দফার কাজে দীর্ঘদিন ধরে জড়িত রয়েছে। এসব নেতা বা বিভিন্ন নামধারী দালালদের খপ্পরে পড়ে ইতিমধ্যে সর্বশান্ত হয়েছে পেকুয়ার বিভিন্ন এলাকার অনেক পরিবার।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, এসব ফড়িয়া ও দালালদের দেনদরবারে থানা এখন বিচারশালাতে (সালিশ দরবার) পরিণত হয়েছে। অন্যদিকে এসব নামধারী প্রতারকরা ভুক্তভোগীদের ভিন্ন ভিন্ন পক্ষ অবলম্বন করায় তাদের মধ্যেও বাকবিতন্ডতা এমনকি হাতাহাতি হচ্ছে হর-হামেশা। কে কিভাবে সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে রায় নিজের পক্ষে আনতে পারবে তা নিয়ে তাদের মধ্যে রীতিমত প্রতিযোগীতা ও দৌড়ঝাঁপ দেখা যায়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রাজাখালী ইউনিয়নের এক নারী বলেন, নারী নির্যাতন মামলা করে নিজেই ঠকেছি। নামধারী এক দালালের কারণে। ওই দালাল আমার বিবাদীর নিকট থেকে টাকা খেয়ে পুলিশকে উল্টা-পাল্টা বুঝিয়ে অবশেষে দোষটা আমার উপর চাপিয়েছে। পেকুয়ায় প্রতিনিয়ত এ রকম অসংখ্য ভুক্তভোগী এসব দালালদের সালিশ বাণিজ্যর শিকার হচ্ছে। শুধু এখানেই শেষ নয়, বিভিন্ন দাগী, ফেরারী ও নারী নির্যাতন মামলার আসামী ধরিয়ে দেওয়ার নামেও বিভিন্ন জনের নিকট থেকে টাকা নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে এসব বিভিন্ন নামধারী দালালের উপর।
সচেতন মহলের অভিযোগ পেকুয়া থানাকে পুঁজি করে একশ্রেণীর নামধারী দালাল তাদের ফায়দা হাসিলে মত্ত রয়েছে। তাঁরা আফসোস করে বলেন, একশ্রেণীর পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে দালালদের রয়েছে দহরম-মহরম। স্থানীয় এলাকাবাসী এসব দেন দরবারে জড়িত দালালদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পুলিশের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে পেকুয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) জহিরুল ইসলাম খান বলেন, পেকুয়া থানায় দালালদের কোন স্থান হবে না। শনিবারও টইটং ইউনিয়নের এক ব্যক্তিকে দালালীর দায়ে থানা থেকে তাড়ানো হয়েছে। দালালের দ্বারা সেবাপ্রার্থীরা যাতে হয়রানীর শিকার না হয়, সে ব্যাপারে পেকুয়া থানা পুলিশ সর্বদা তৎপর রয়েছে।
পাঠকের মতামত: