সেলিম উদ্দিন, ঈদগাঁও, কক্সবাজার প্রতিনিধি, সাতকানিয়া গারাঙিয়া দরবার শরীফের খলিফায়ে আজম, ব্যাপক প্রচার-প্রসার ও মানুষের দুয়ারে পৌঁছে দেওয়ার অপরিসীম দায়িত্ব পালনকারী পীর মুর্শিদ আলহাজ্ব হাফেজ মাওলানা আবদুল হাই (রাহঃ) জানাযায় শোকাহত মানুষের ঢল নেমেছে। জানাযায় লক্ষ লক্ষ ভক্ত অনুরক্ত-মুসল্লীগন অশ্রুজল নয়নে তাকে চির বিদায় জানান। মঙলবার (২৩ জানুয়ারী) বিকেল ৫টার সময় চকরিয়া উপজেলার খুটাখালী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে অনুষ্টিত জানাযায় প্রায় অর্ধ লক্ষাধিক মানুষের জনসমাগম হয়। এসময় রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, ভক্ত, অনুরক্তরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। মঙলবার সকাল থেকে ঢাকা, চট্রগ্রাম, টেকনাফ, কক্সবাজার, সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, কুতুবদিয়া, মহেষখালী, চকরিয়া,বান্দরবান, লামা, আলিকদম,রাঙামাটি ও সুদুর ভারত থেকে ভক্তরা হুজুরকে শেষবারের মত একবার দেখতে বাড়িতে ভীড় জমান। দুপুর নাগাদ হাইস্কুল মাঠ কানায় কানায় ভরে উঠে। এসময় আগত মুসল্লীরা জায়গা না পেয়ে মহাসড়ক, স্কুলের ছাদ, কমিউনিটি ক্লাব, মসজিদ, পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন বাসাবাড়িতে দাঁড়িয়ে জানাযার নামাজ আদায় করেন। বেলা গড়িয়ে বিকেল পৌনে ৪ টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত কক্সবাজার চট্রগ্রাম মহাসড়কে র্দীঘ যানযট সৃষ্টি হয়। প্রায় আড়াই ঘন্টাব্যাপী মহাসড়কে দূরপাল্লার প্রায় কয়েক শতাধিক যানবাহন আটকা পড়ে। স্থানীয় আইনশৃংখলা বাহিনী পৌনে ৩ ঘন্টা পর যানবাহন চলাচল স্বভাবিক করে। মহাসড়কের তমিজিয়া মাদরাসা গেইট থেকে মেধাকচ্চপিয়া জাতীয় উদ্যান অফিস পর্যন্ত হাজার হাজার জানাযায় উপস্থিত মুসল্লীদের গাড়ি পার্কিং করায় পরিস্থিতি সামাল দিতে চরম হিমশিম পোহাতে হয়েছে নিয়োজিত পুলিশ বাহিনীকে। একপর্যায়ে র্দীঘ যানযট মহাসড়কের ঈদগাঁওকে ছাড়িয়ে খুটাখালী-ডুলাহাজারা-মালুমঘাট অতিক্রম করে ফাসিয়াখালী পর্যন্ত বিস্তৃত লাভ করে। দূর দুরান্ত থেকে আগত মুসল্লীরা রাত ৮টা পর্যন্ত যানবাহন নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছে। এসময় উপস্থিত মুসল্লীরা স্মরণকালের শ্রেষ্ট ও বিশাল জানাযা অনুষ্টিত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন।
দুপুরের নামাজের পর থেকে মরহুম হুজুর কেবলার জীবনকর্ম নিয়ে বিভিন্ন স্থরের লোকজন আলোচনায় অংশ নেন। খুটাখালী তমিজিয়া ডিগ্রী মাদরাসার আরবী প্রভাষক মাওলানা আবুল ফজলের পরিচালনায় এতে সিডিএ চেয়ারম্যান আলহাজ্ব আব্দু ছালাম, গারাংগিয়া দরবার শরীফের পীর শাহ মাওলানা আনোয়ারুল হক ছিদ্দিকী, সাতবাড়িয়া দরবার শরীফের পীর আবদুল হালিম রশিদী, পীরজাদা বাশঁখালী মাওলানা শফি উল্লাহ, কউক চেয়ারম্যান অব: কর্নেল ফোরকান আহমদ, চকরিয়া-পেকুয়া আসনের এমপি হাজী মো: ইলিয়াছ, সদর-রামু আসনের এমপি আলহাজ্ব সাইমুম সরওয়ার কমল, চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু নোমান শিবলী, চকরিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ্ব জাফর আলম, জেলা বিএনপির সভাপতি আলহাজ্ব শাহজাহান চৌধুরী, জেলা আ’লীগ সহ সভাপতি রেজাউল করিম, উখিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মাহমুদুল হক চৌধুরী, পেকুয়া উপজেলা ভাইস-চেয়ারম্যান মাওলানা নুরুজ্জামান মন্জু, চবি অধ্যাপক ড. মাওলানা এনামুল হক মুজাদ্দেদী, সদর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান জিএম রহিমুল্লাহ, লোহাগাড়া উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান নুরুল আবছার, তমিজিয়া ডিগ্রী মাদরাসার অধ্যক্ষ মাওলানা ওমর হামজা, অধ্যক্ষ মাওলানা নুরুল আজিজ, অধ্যক্ষ রুহুল কুদ্দুছ আনোয়ারী আজহারী, অধ্যক্ষ কামাল হোছাইন, প্রভাষক মাওলানা কবির ছিদ্দিকি, মাওলানা হাফিজুল হক নিজামী, আমিরাবাদ সুফী ফতেহ আলী মাদরাসার প্রতিষ্টাতা শামসুদ্দীন, বাঁশখালীর মাওলানা ছিদ্দিক আহমদ ফারুকী, নুরুল আলম ফারুকী, মাওলানা মুস্তাফিজুর রহমান, মাওলানা মাহমুদুল হক, মালানা ক্বারী এহছানুল হক, মাওলানা মুহাম্মদ ইয়াহিয়া, মাওলানা কবির আহমদ ছিদ্দিকি, মাওলানা হাফেজ আবদুল জব্বার, চেয়ারম্যান আবদুর রহমান, চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দীর চৌধুরী, চেয়ারম্যান বখতিয়ার উদ্দীর চৌধুরী, জেলা পরিষদ প্যানেল চেয়ারম্যান জাহেদুল ইসলাম লিটু, জিয়া উদ্দীন জিয়া, অধ্যপক শফিকুর রহমান, প্রধান শিক্ষক কামাল উদ্দীন, সুপার মাওলানা আবদু শুক্কুর, সুপার মাওলানা বশির আহমদ, ডা. মুহাম্মদ ইউনুছ, হাফেজ ফজলুল কাদের, শিক্ষক হেলাল উদ্দীন, রিহাবুল আলম লিটন ও হুজুরের বড় পুত্র আলহাজ্ব মাওলানা আনোয়ার হোছাইন বক্তব্য রাখেন। জানাযায় ইমামতি করেন পীরজাদা আলহাজ্ব মাওলানা আনোয়ার হোছাইন। জানাযা শেষে হুজুরকে তাঁর বসতবাড়ি সংলগ্ন মসজিদের পাশে দাফন করা হয়েছে।
উল্লেখ্য এ মহান অলী ১৯৪৮ সালের ২২ জানুয়ারী (জাতীয় পরিচয় পত্র অনুসারে) সাতকানিয়া উপজেলার গারাঙিয়া রঙিপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর আব্বাজান মরহুম আলহাজ্ব মাওলানা হাফেজ আবদুল জব্বার (রাহঃ) এবং আম্মাজান মরহুমা হাফেজা খাতুন সাহেবা (রাহঃ) পরিবারের ৬ পুত্র ১ কন্যার মধ্যে তিনি ছিলেন ৫ম পুত্র। জম্মসুত্রে তিনি চট্টগ্রাম জেলার সাতকানিয়া উপজেলার গারাঙিয়া রঙিপাড়ার হলেও ১৯৭২ সালের দিকে তিনি সপরিবারে চকরিয়া উপজেলার খুটাখালী ইউনিয়নে স্থায়ীভাবে ৪৫ বছর ধরে গর্জনতলী গ্রামে বসবাস করে আসছেন। তারই প্রতিষ্টানের নামানুসারে ইউনিয়নের হাফেজখানা সড়ক নামকরণ করা হয়। তিনি বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে দেড় শতাধিক মসজিদ, হাফেজখানা-এতিমখানা ও ফোরকানিয়া মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন। মরহুম পীর সাহেব কেবলা সর্বশেষ ২০১৬ সালে হজ্ব পালন করে শারিরীক অসুস্থতার কারনে আর যেতে পারেনি। জীবনে ১৬ বার হজ্ব পালন করেন তিনি। এছাড়া বার্মা, ভারত সৌদি আরবসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ সফর করেন।
গত রবিবার (২১ জানুয়ারি) আলীকদম বাজার ব্যবসায়ীদের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত সীরাতুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাহফিলের দ্বিতীয় অধিবেশনে তাঁর সভাপতিত্ব করার কথা ছিল। সীরাত মাহফিলে আসার আগে থেকেই হুজুর কেবলা অসুস্থতাবোধ করছিলেন। তাঁর শ্বাসকষ্ট বেড়ে গেলে রাত সোয়া একটার সময় বাসা থেকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আনা হয়। ২১ জানুয়ারি দিবাগত রাত সোমবার (২২ জানুয়ারি) রাত ২টা ৪০ মিনিটে আলীকদম সরকারি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এ প্রখ্যাত আলেমেদ্বীন ইন্তেকাল করেন (ইন্নালিল্লাহি ওয়াইন্না ইলাইহি রাজেউন)।
এতিম, অসহায়, দুস্থ মানবতার সেবক ও আধ্যাত্মিক সাধক আলহাজ্ব হাফেজ আবদুল হাই’র বয়স হয়েছিল মাত্র ৭০ বছর। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী আলহাজ¦া জয়নাব বেগম, ৫ পুত্র যথাক্রমে আলহাজ্ব মাওলানা আনোয়ার হোছাইন, আলহাজ্ব মাওলানা নুর হোছাইন, আলহাজ্ব মো: নুমান, আলহাজ্ব মো: ইসমাইল, আলহাজ্ব মো: দিদারুল ইসলাম, ২ কন্যা ফাতেমা বেগম ও আলহাজ্বা মাহবুবা আল মুবাশারা জেমিসহ অসংখ্য গুনগ্রাহী ভক্ত-অনুরক্ত রেখে যান।
পাঠকের মতামত: