ঢাকা,শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪

পরিবেশ বিপর্যয়ের শঙ্কা ।। চকরিয়ায় সংরক্ষিত বনভূমি ও নদীর তীরে তামাক চাষ

tamak1tamak,,tamak-photo-9-nov16নিজস্ব প্রতিবেদক, চকরিয়া :::

চকরিয়ায় পরিবেশ বিধ্বংসী তামাক চাষ বন্ধে প্রশাসনের পক্ষ থেকে নানা ধরণের তৎপরতা চালানো হলেও বন্ধ করা যায়নি তামাকের আগ্রাসন। এই চাষ বন্ধে কয়েকমাস আগে জনসচেতনতামূলক কর্মসূচির অংশ হিসেবে ওই এলাকায় বিভিন্ন স্কুল, কলেজ ও মাদরাসা পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের নিয়ে মানববন্ধন ও প্রচারপত্র বিলিসহ নানা কর্মকাণ্ড হাতে নিয়েছিল উপজেলা প্রশাসন। কিন্তু বরাবরের মতোই তামাকের আগ্রাসন চলছে, কোন কাজে আসেনি প্রশাসনের সেই উদ্যোগ।

সরেজমিনে তামাক চাষ করা ইউনিয়নগুলো ঘুরে দেখা গেছে, ব্যক্তি মালিকানাধীন কৃষি জমির পাশাপাশি সংরক্ষিত বনাঞ্চল ও মাতামুহুরী নদীর দুই তীরের খাস জমিতে তামাকের ভয়াবহ আগ্রাসন চলছে। সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী সংরক্ষিত বনের ভেতর ও নদীর তীরে তামাক চাষে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও তা কাগজেকলমেই সীমাবদ্ধ। এমনকি সরকারী খাস জমিতে তামাক চাষ বন্ধে প্রশাসনেরও কোন পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না। এতে অনেকটাই নির্বিঘ্নে চাষাবাদ চলছে পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর তামাকের আগ্রাসন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সরকারী নির্দেশ উপেক্ষা করে চকরিয়া উপজেলার বমুবিলছড়ি ইউনিয়নের বমু বনবিট ও সুরাজপুরমানিকপুর ইউনিয়নের মানিকপুর বনবিটের সংরক্ষিত বনাঞ্চলে এবং উপজেলার মাতামুহুরী নদী তীরের বমু বিলছড়ি, সুরাজপুরমানিকপুর, কাঁকারা, কৈয়ারবিল, বরইতলী ও চিরিঙ্গা ইউনিয়নের অন্তত ১ হাজার একর খাস জমিতে তামাকের আবাদ শুরু হয়েছে চলতি মৌসুমে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, বেশিরভাগ এলাকায় ইতোমধ্যে রোপন করা তামাকের চারা বড় হতে শুরু করেছে। আর কিছুদিন গেলেই শুরু হবে তামাক শোধনের কাজ। এজন্য বনাঞ্চলের আশপাশে ও লোকালয়ে কয়েক হাজার তামাক চুল্লীর নির্মাণকাজও চলছে।

বিভিন্ন সূত্র জানায়, কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগের আওতাধীন বমু বনবিটের প্রায় ২ হাজার ২শ’ একর বনভূমি যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ২০০৫ সালে লামা বনবিভাগের কাছে হস্তান্তর করে। বর্তমানে এ বনবিটটি লামা সদর রেঞ্জের নিয়ন্ত্রণাধীন। বেশ কয়েক বছর ধরে স্থানীয় কাঠ পাচারকারী চক্র ও সংশ্লিষ্ট বনবিভাগের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের যোগসাজশে এক সময়ের বনজ সম্পদে সমৃদ্ধ বমু বনবিট এখন ন্যাড়া পাহাড়ে পরিণত হয়েছে। এছাড়া বেশ কম্ব বছর ধরে বন কর্মকর্তাদের যোগসাজসে ভিলেজারেরা (বন জায়গীরদার) তামাক চাষের পর তা শোধনের জন্য নির্বিচারে বনজ সম্পদ উজাড়ের কারণে এই বনবিটে এখন আর অবশিষ্ট কিছুই নেই বললেই চলে।

তামাকের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার লক্ষ্যে কাজ করছেন বেসরকারী সংস্থা উন্নয়ন বিকল্পের নীতি নির্ধারণী গবেষণা (উবিনীগ)। সংস্থাটির কক্সবাজারের আঞ্চলিক সমন্বয়কারী রফিকুল হক টিটো দৈনিক চকরিয়া নিউজকে জানান, চকরিয়া উপজেলার অন্তত ১০টি ইউনিয়নের মধ্যে কম করে হলেও প্রায় পাঁচ হাজার একর জমিতে তামাকের আগ্রাসন চলছে। তন্মধ্যে সংরক্ষিত বনের কিছু অংশ এবং মাতামুহুরী নদীর দুই তীরের খাস জমি মিলিয়ে অন্তত ১ হাজার একর জমিতে তামাকের আবাদ চললেও প্রশাসনের কোন নজরদারী নেই। রফিকুল হক বলেন, মূলত তামাক কোম্পানিগুলোর মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা প্রান্তিক চাষীদের প্রলোভনে ফেলে তামাক চাষে উদ্বুদ্ধ করে আসছেন। এমনকি বিনাসুদে ঋণ দেওয়া ছাড়াও তামাক ক্রয়ের সময় ভাল দাম দেওয়ায় প্রতিবছর খাস জমিতেও তামাকের আবাদ বাড়ছে। মাঠপর্যায়ের চাষীদের সাথে কথা বলে এই চিত্র পেয়েছি আমরা।

স্থানীয় পরিবেশ সচেতন লোকজন মনে করছেন, জরুরি ভিত্তিতে সাঁড়াশি অভিযান চালিয়ে মাতামুহুরী নদীর দুই তীর ও সংরক্ষিত বনাঞ্চলে রোপিত তামাক ধ্বংস না করলে পরিবেশ বিপর্যয় ঠেকানো যাবে না। এতে মাতামুহুরী নদীর পানি দূষিত হয়ে পরিবেশের মারাত্মক তি হবে। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে চকরিয়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. মাহবুবুল করিম দৈনিক চকরিয়া নিউজকে বলেন, ‘ব্যক্তি মালিকানাধীন জমিতে তামাক চাষ করলে প্রশাসনের কিছুই করার থাকে না। তবে মাতামুহুরী নদীর দুই তীরের খাস জমিতে তামাক আবাদ হয়ে থাকলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সাহেদুল ইসলাম দৈনিক চকরিয়া নিউজকে বলেন, ‘সরকারীভাবে তামাক চাষ বন্ধের বিরুদ্ধে কোন দিকনির্দেশনা নেই। এর পরেও তামাকের ভয়াবহতা অনুভব করে আমি চেষ্টা করেছি নানা কর্মসূচী পালনের মাধ্যমে তামাক চাষীদের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে। এ ক্ষেত্রে তামাক চাষীদেরই সচেতন হতে হবে, তা না হলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে যতই বলা হউক না কেন তা শতভাগ ফলাফল দেবে না।’ ইউএনও বলেন, ‘তবে আমি চেষ্টা করে যাচ্ছি, উৎপাদিত তামাক শোধনের জন্য চুল্লিতে ব্যবহারের লাকড়ির সরবরাহ বন্ধের উদ্যোগ নিতে। সংরক্ষিত বনাঞ্চল ও সড়কের গাছ যাতে তামাক চুল্লীতে নিয়ে যেতে না পারে সেজন্য নজরদারী বাড়ানো হয়েছে।

 

পাঠকের মতামত: