ঢাকা,সোমবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৪

নাইক্ষ্যংছড়িতে পাহাড় কেটে পাথর উত্তোলন ও পাচার

নিতীশ বড়ুয়া, রামু ::

 বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার সোনাইছড়ি ইউনিয়নে অবৈধভাবে পাহাড় কেটে পাথর উত্তোলন ও পাচার করছে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান বাহান মার্মার নেতৃত্বে একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেট। সরকারি ও ব্যক্তি মালিকানাধীন বাগান থেকে অবৈধভাবে পাথর উত্তোলন অব্যাহত থাকলে বনাঞ্চল ধ্বংসের পাশাপাশি পরিবেশে নেমে আসবে চরম বিপর্যয়।

নাইক্ষ্যংছড়ি মহাজন ঘোনার মৃত মোহিনী রঞ্জন দাশের ছেলে ডা. কালিপদ দাশ জানিয়েছেন, ওই এলাকায় তার এবং স্ত্রী-কন্যার স্বত্ব দখলীয় জমি থেকে সম্প্রতি ইউপি চেয়ারম্যান বাহান মার্মা শ্রমিকদের দিয়ে পাথর উত্তোলন শুরু করেন। বাগানের পাহারাদার পাথর উত্তোলন না করার অনুরোধ জানালেও তারা তাতে কর্ণপাত করেননি। এতে নিরুপায় হয়ে তিনি গত ২ মার্চ স্থানীয় সোনাইছড়ি পুলিশ ফাঁড়িতে লিখিত অভিযোগ দেন। অভিযোগ পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পাথর উত্তোলনের সত্যতা পান। কিন্তু এ নিয়ে কোন আইনি ব্যবস্থা না নেয়ায় তিনি গত ৫ মার্চ কক্সবাজার পরিবেশ অধিদপ্তরে লিখিত অভিযোগ দেন।
অভিযোগ পেয়ে পরদিন ৬ মার্চ কক্সবাজার পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক সাইফুল আশ্রাব সোনাইছড়ি ইউনিয়নের মাছকুম নামক ঝিরি ও ডা. কালিপদ দাশ-এর জমিতে সরেজমিন গিয়ে পাহাড় কেটে পাথর উত্তোলনের দৃশ্য দেখতে পান। এ সময় তিনি শ্রমিকদের সাথে কথা বলেন। পাথর উত্তোলনের সাথে জড়িতদের চিহ্নিত করেন। শ্রমিকরা পাথর উত্তোলনের কোনো অনুমতি না থাকার কথা স্বীকার করেন। এ সময় তিনি পাথর উত্তোলন না করার জন্য কর্মরত শ্রমিকদের নির্দেশ দেন।
ডা. কালিপদ দাশ জানান, মাটি খোদাই ও পাহাড় কেটে পাথর উত্তোলনের কারণে তার কষ্টে গড়া ফলজ-বনজ গাছের বাগানটি এখন হুমকির মুখে পড়েছে। যে কোনো সময় পাহাড়ধসসহ পরিবেশের অপূরণীয় ক্ষতি হতে পারে। তাছাড়া পাথর উত্তোলন অবৈধ এবং সরকারি সম্পদ আত্মসাতের শামিল।
কক্সবাজার পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক সাইফুল আশ্রাব জানান, সোনাইছড়িতে ডা. কালিপদ দাশ-এর বাগান ও সংলগ্ন মাছকুম নামক ঝিরিতে পাথর উত্তোলনের সত্যতা পাওয়া গেছে। দীর্ঘ ঝিরি ও পাহাড় কেটে উত্তোলন করা বিপুল পরিমাণ পাথরের স্তূপ পাচারের জন্য মজুদ করা হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা বাহান মার্মা ও তার ছেলে মং নাইচউসহ এলাকার আরো একাধিক ব্যক্তি পাথর উত্তোলনের এ পরিবেশ বিধ্বংসী কাজে জড়িত রয়েছে। এদের বিরুদ্ধে শীঘ্রই আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।
পাথর উত্তোলনে নিয়োজিত শ্রমিকদের মধ্যে উখিয়া উপজেলার হলুদিয়া ইউনিয়ন বড় বিল গ্রামের জমির হোছনের ছেলে মাহমুদুল হক (৫০), সোনাইছড়ি ইউনিয়নের চুল্লা পাড়ার মোজাফ্ফর প্রকাশ জাফর মাঝি, সোনাইছড়ি বৈদ্যপাড়ার মং ব্যুর ছেলে তংছা মার্মা (২৮), উখিয়া উপজেলার হলুদিয়া ইউনিয়নের পাতাবাড়ি গ্রামের শাহ আলমের ছেলে সিরাজ (৪৫) সাংবাদিকদের জানান, স্থানীয় চেয়ারম্যান বাহান মার্মার নির্দেশে দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে তারা কয়েক সপ্তাহ ধরে এখানে পাথর উত্তোলন করছেন। পাশাপাশি তারা পাথর পাচারের জন্য পাহাড় কেটে রাস্তাও তৈরি করে যাচ্ছেন।
এলাকাবাসী জানিয়েছেন, দীর্ঘদিন সোনাইছড়ি ইউনিয়ন ও পাশর্^বর্তী এলাকার ঝিরি, ছড়া ও পাহাড় কেটে পাথর উত্তোলন করছে চেয়ারম্যান বাহান মার্মার সিন্ডিকেট। অবৈধভাবে তোলা এসব পাথর দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হচ্ছে।
নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার এসএম সরওয়ার কামাল জানান, উপজেলার কোথাও পাথর উত্তোলনের অনুমতি দেয়া হয়নি। কেবলমাত্র জেলা প্রশাসক অনুমতি দিতে পারেন। তিনি আরো জানান, পাথর নিয়ে কাউকে ব্যবসা করতে দেয়া হবে না। অবৈধভাবে পাথর আহরণ ও পাচারে জড়িতদের চিহ্নিত করে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সোনাইছড়ি মৌজা হেডম্যান অং চিং থোয়ে জানান, ইউপি চেয়ারম্যান বাহান মার্মা ও তার ছেলের নেতৃত্বে দীর্ঘদিন বিভিন্ন ঝিরি ও পাহাড় কেটে পাথর উত্তোলন করা হচ্ছে। এভাবে নির্বিচারে পাথর উত্তোলনের কারণে এলাকার পরিবেশ বিপর্যয়ের আশংকা করছেন তিনি।
জানা গেছে, নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার সোনাইছড়িসহ বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে অবৈধভাবে পাহাড় কেটে ও মাটি খুঁড়ে পাথর উত্তোলন করা হচ্ছে। প্রভাবশালীরা পাহাড়ি অঞ্চলের বনজসম্পদ ধ্বংস করে লাখ লাখ টাকার পাথর উত্তোলন করছে। এতে পাহাড়ের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে, বিপর্যয়ের মুখে পড়ছে পরিবেশ। অন্যদিকে সরকার লাখ লাখ টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট প্রশাসন এদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিয়েছে, এমন প্রমাণ এলাকাবাসীর কাছে নেই।

পাঠকের মতামত: