ঢাকা,শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪

টেকনাফ জুড়ে চলছে পাহাড় কাটার মহোৎসব

জসিম উদ্দিন টিপু :Teknaf-Pic-A-2-22-08-17-960x243-960x243
টেকনাফে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার্থে যে কোন ধরনের পাহাড়-টিলা কাটা নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হলেও টেকনাফ উপজেলার ৪টি ইউনিয়নের বিভিন্ন টিলা,পাহাড়ী জনপদে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি,রাজনৈতিক ব্যক্তি ও স্থানীয় ইয়াবা গডফাদারদের প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ যোগ-সাজশে পাহাড় কাটা চলছে। স্থানীয় বনকর্মী-ভিলেজারদের রহস্যজনক আচরণে ক্ষুদ্ধ হয়ে উঠছে পরিবেশবাদী সচেতনমহল।
তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়,উপজেলার সদর ইউনিয়নের নাইট্যং পাড়া,পুরান পল্লান পাড়া,জাহালিয়া পাড়া, ফকিরা মোরা পাহাড়, নুর আহমদের ঘোনা,শিয়াইল্যা ঘোনা,চাইল্যাতলী,উপকূলীয় বাহারছড়া ইউনিয়নের নোয়াখালী পাড়া, কচ্ছপিয়া, হাজমপাড়া,বড় ডেইল,মাথাভাঙ্গা,পিনিজ ভাঙ্গা,শীলখালী,শামলাপুর পুরান পাড়া, মনতইল্যা, হোয়াইক্যং ইউনিয়নের দৈংগ্যাকাটা,মুলা পাড়া,লম্বাবিল,রইক্ষ্যং,কুতুবদিয়া পাড়া, কাঞ্জর পাড়া, নয়াপাড়া, পশ্চিম মিনা বাজার,নয়া বাজার,পশ্চিম সাতঘরিয়া পাড়া,পশ্চিম মহেশখালীয়া পাড়া, রোজার ঘোনা, কম্বনিয়া পাড়া,হ্নীলা ইউনিয়নের মরিচ্যা ঘোনা,রোজার ঘোনা,আলী আকবর পাড়া, ভিলেজার পাড়া, পশ্চিম পানখালী, পূর্ব পানখালী, পশ্চিম সিকদারপাড়া, মইন্যারজুম, উলুচামরী, লেচুয়াপ্রাং, রঙ্গিখালী, আলীখালী, লেদা, মোচনী, নয়াপাড়া, জাদিমোরা ও দমদমিয়ায় নতুন করে বসতি স্থাপন এবং চাষাবাদের জমি তৈরীর জন্য পাহাড় ও টিলা কাটা অব্যাহত রয়েছে।
বিভিন্ন সুত্র থেকে এসব কাজে জড়িত রয়েছে স্থানীয় বর্তমান ও সাবেক জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতা,প্রভাবশালী ও কিছু এলাকায় ইয়াবা ব্যবসা করে কোটিপতি বনে যাওয়া ইয়াবা গডফাদারদের সংশ্লিষ্ট থাকার অভিযোগ উঠেছে। উপরোক্ত এলাকা সমুহের পাশাপাশি হ্নীলা মোরা পাড়ার মোঃ জলিলের পুত্র ইয়াবা গডফাদার মোঃ ইসমাঈল নিজের ক্রয়কৃত একটি পাহাড় ৩০/৩৫জন শ্রমিক দিয়ে কেটে বিলীন করছে। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করলে এর প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্থ পরিবার সমুহ অভিযোগ আনলে উক্ত ইয়াবা গডফাদার প্রকাশ্যে হামলা চালানোর জন্য মহড়া চালায়। এছাড়াও উক্ত স্থানে আরো ৩/৪জন বসতি গড়ার জন্য পাহাড় কাটছে অভিযোগ রয়েছে। এই ব্যাপারে হ্নীলা বিট কর্মকর্তাকে অবহিত করা হলেও গত এক সপ্তাহ ধরে কোন ধরনের পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি। এই ব্যাপারে বাহারছড়া হাজম পাড়ার এক বাসিন্দা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন,ভাই বিভিন্ন স্থানে পাহাড় কেটে পরিবেশ ধ্বংস করার বিষয়টি ঠিক। এ বিষয়ে সত্য কথা বলতে গেলে আমারও প্রাণহানিসহ মিথ্যা মামলায় হয়রানির আশংকায় রয়েছি। তাই মুখ খুলে কিছু বলতে পারিনা। এই কাজে স্থানীয় কতিপয় রাজনৈতিক ব্যক্তি, বর্তমান মেম্বার, সাবেক মেম্বার, প্রভাবশালী ও নব্য টাকাওয়ালাদের ছত্র-ছায়ায় এসব কাজ হচ্ছে। বন বিভাগের উপর মহলের চাপে মাঝে-মধ্যে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হলেও পরবর্তীতে কিছু ভিলেজার এবং বনকর্মীদের সাথে আতাঁতের কারণে পাহাড় কাটা বন্ধ হয়না। এই ব্যাপারে বাহারছড়ার ইউপি মেম্বার হুমায়ুন কাদের বলেন,বন বিভাগের লোকজন ভিলেজারসহ বিভিন্ন দালালের মাধ্যমে টাকা পয়সা হাতিয়ে নিচ্ছে বলে শুনা যায়। যারা পাহাড় কেটে জবর দখলে জড়িত রয়েছে তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে। এছাড়া জনসাধারণকে নিয়ে সচেতনতামূলক সভা করতে হবে। হ্নীলা ইউপির ৫নং ওয়ার্ডের মেম্বার জামাল উদ্দিন জানান, বন বিভাগের লোকজনকে ম্যানেজ করে আমার ওয়ার্ডেও অহরহ পাহাড় কাটছে। হোয়াইক্যং মডেল ইউপির প্যানেল চেয়ারম্যান রাকিব আহমেদ বলেন,এই পাহাড় কাটা ও অবৈধ বসতির ব্যাপারে আমি আগেও প্রতিবাদ করেছি এখনো প্রতিবাদ জানাচ্ছি। স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী এবং ডাম্পার মালিক মিলে পাহাড় নিধন চালাচ্ছে। এই কারণে পাহাড় ধ্বস ও মৃত্যুর ঘটনা বাড়ছে। যারা এসব কাজে জড়িত প্রশাসনের নিকট তাদের তালিকা রয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য জোর দাবী জানাচ্ছি। ক্রেলের টেকনাফ সহব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য আব্দুর রহমান হাশেমী বলেন, পাহাড় কেটে বন ও পরিবেশ বিধ্বংসী কার্যক্রম সত্যিই দুঃখজনক। যারা এসব কর্মকান্ডের সাথে সম্পৃক্ত তাদের সংশোধনী দিয়ে ব্যবস্থা না হলে উচ্চ পর্যায়ের সভায় উত্থাপন করা হবে। কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক দেওয়ান মুহাম্মদ আব্দুল হাই আজাদ বলেন, শীঘ্রই এসব এলাকায় সরেজমিনে পরিদর্শন করে পাহাড় কর্তনকারী এবং বন বিভাগের কেউ জড়িত থাকলে সকলের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

পাঠকের মতামত: