ঢাকা,শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪

ঝিলংজায় মুক্তিযোদ্ধা, সাবেক ও বর্তমান জনপ্রতিনিধিদের মিলনমেলা

dddসংবাদ বিজ্ঞপ্তি, ১০ আগস্ট ॥

কক্সবাজার সদরের ঝিলংজা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন জিকু স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে কাঁদলেন, আর তখন কাউকে কাউকে দেখা গেল চোখ মুছতে।

১০ আগস্ট ঝিলংজা ইউনিয়ন পরিষদ মিলনায়তনে ইউপি কর্তৃক আয়োজিত সাবেক চেয়ারম্যান, উপজেলার অন্যান্য ইউপি চেয়ারম্যান, মুক্তিযোদ্ধা ও নব-নির্বাচিতদের সংবর্ধনা অনুষ্টানে গিয়াস উদ্দিন জিকু আবেগেআপ্লুত হয়ে কাঁদলেন। বৃষ্টি উপেক্ষা করেই সর্বস্তরের মানুষের মিলন মেলায় উপস্থিত লোকজনও চোখের পানি ঝরিয়েছেন তাঁর জন্য। গত পাচঁ বছরে এলাকার উন্নয়নের কথা, কঠিন দিনগুলোর কথা জনতার সামনে তুলে ধরতে গিয়ে নিজের আবেগ ধরে রাখতে পারেননি চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন জিকু ।

ঝিলংজা ইউনিয়ন পরিষদ মিলন মেলা, মুক্তিযোদ্ধা ও নবনির্বাচিতদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন গিয়াস উদ্দিন জিকু। সকাল ১০টা ২০ মিনিটে মরহুম সদস্যবৃন্দের শোক প্রস্তাব করেন সাবেক চেয়ারম্যান মৌলানা আবদুল গফুর।

নুরুল আলমের পবিত্র কোরআন তেলওয়াতের মধ্য দিয়ে শুরু হওয়া অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন, ইউপি চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন জিকু। অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, সাবেক চেয়ারম্যান মৌলানা আবদুল গফুর, সাবেক সদস্য মুক্তিযোদ্ধা আবু তাহের।

স্মৃতি চারণ করেন সাবেক ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান শামশুল আলম, দিদারুল আলম চৌধুরী, সাবেক চেয়ারম্যান মাহমুদুল হক ওসমানীর পক্ষে সন্তান এড. আবু ছিদ্দিক ওসমানী, মুক্তিযোদ্ধার পক্ষে এসএম নুরুল হক বীরপ্রতীক, বীর মুক্তিযোদ্ধা মনিরুল আলম চৌধুরী, নব-নির্বাচিত চেয়ারম্যান টিপু সোলতান, বর্তমান ইউপি সদস্য কুদরত উল্লাহ সিকদার, সাবেক ইউপি সদস্য আমিন উল্লাহ প্রমূখ।

ঝিলংজা ইউপিতে গিয়ে দেখা যায়, উৎসবমুখর মানুষের পদচারণা-সবারই একটাই কথা ইউনিয়ন পরিষদ প্রতিষ্ঠার পর থেকে এধরনের কোন মিলনমেলা হয়নি। এলাকার সম্মানীত লোকজনকে এভাবে কেউ সংবর্ধিত করেননি।

ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মরহুম মাহমুদুল হক ওসমানীর ছেলে এড. আবু ছিদ্দিক ওসমানী বলেন, ইউপি প্রতিষ্ঠার ৬৪ বছর পর জীবিত ও মরনোত্তর সমাজ সেবিদের সংবর্ধিত করে চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন জিকু অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। এধরনের কাজ ধারাবাহিক রাখার জন্য নবনির্বাচিত জনপ্রতিনিধির কাছে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

জিকু চেয়ারম্যান কাঁদতে কাঁদতেই বলেন,“তিলে তিলে পাঁচটি বছর এলাকার উন্নয়ন করেছি। জনগণের সেবা করেছি। বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকান্ড পর্যালোচনা করে গত ২০১৫-২০১৬ অর্থবছরে দেশের ৫ হাজার ইউনিয়নের মধ্যে ঝিলংজা ইউনিয়নকে বিশ্ব ব্যাংক প্রথম স্থানের ইউনিয়ন ঘোষণা করেন। যা পুরো ঝিলংজা ইউনিয়নবাসির নয় শুধু পুরো জেলাবাসির গর্ব। ১৯৫২ সালে ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠার পর থেকে আর কখনো হয়নি”।

নবনির্বাচিতদের উদ্দেশ্যে জিকু বলেন,“বিগত দিনগুলোর উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে হবে। বর্তমানে ইউপি তহবিলে ৩৪ লাখ ৮১ হাজার ৫৮৩ টাকা জমা রয়েছে। এধরনের তহবিল ইতোপূর্বের কোন চেয়ারম্যান রেখে যাননি। ইচ্ছে করলে আপনারা আজ থেকেই এ অর্থ ব্যয় করে জনগণকে দেয়া প্রতিশ্রুতির কিছুটা হলেও বাস্তবায়ন করতে পারবেন”।

সেই ৫ বছরের কথা স্মরণ করে জিকু বলেন,“মুষলধারে বৃষ্টি পড়ছে। এর মধ্যেও হাজারো মানুষের উপস্থিতি। আমাকে জনগণ ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছিলেন, আমি চেষ্টা করেছি জনগণকে সঠিক সেবা দিতে। এলাকার উন্নয়ন করতে। হয়তু কখনো সফল হয়েছি, কখনো বা ব্যর্থ”।

পরে আনুষ্ঠানিক ভাবে বর্তমান চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দি জিকু নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান টিপু সোলতানের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করেন। চেয়ারম্যানে কক্ষে নবনির্বাচিত চেয়ারম্যানকে চেয়ারে বসিয়ে দিয়ে বাষ্পরুদ্ধ কণ্ঠে কথা চালিয়ে যেতে যেতে এক সময় হু হু করে কেঁদে ফেলেন তিনি। কথা থামিয়েই মাঝে মাঝে মুছছিলেন চোখের পানি।

অনুষ্ঠানে আরও সকল সাবেক সদস্যদের পরিবারবর্গ, সদস্যবৃন্দ, মুক্তিযোদ্ধা পরিবার সহ ইউনিয়নের সর্বস্তরের পেশাজীবী মানুষ উপস্থিত ছিলেন।

সংবর্ধিত ও সংবর্ধনায় আগতরা বলেন, ৬৪ বছরে পর্দাপনের দিন উৎসব হবে না তা কি করে হয়। সাবেক ইউপি সদস্য, সদস্যা, মুক্তিযোদ্ধা ও নবনির্বাচিতদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠান মানে হাজারো প্রাণের মিলনের ছন্দ। তাইতো বৃষ্টি উপেক্ষা করেই হাজারো প্রাণের মিলন মেলায় পরিণত হয়। ১৯৫২ সালে ঝিলংজা ইউনিয়ন পরিষদ প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ পর্যন্ত এই ইউনিয়নে নের্তৃত্ব দেয়া জনপ্রতিনিধি, তাদের পরিবারের সদস্য, আত্মীয় স্বজন কেউবা তুলছেন সেলফি, কেউবা প্রিয়জনের ছবি ক্যামেরাবন্দি করছেন নিজের মোবাইল ফোনে। বুধবার সকাল ১০টা থেকে দুপুর গড়াতেই হাজারো মানুষের পদচারণায় মুখরিত হয় ঝিলংজা ইউনিয়ন পরিষদ প্রাঙ্গন।

————–

পাঠকের মতামত: