ঢাকা,বুধবার, ১৩ নভেম্বর ২০২৪

জেলার ফসলি জমির মাটি ইটভাটায়ঃ কৃষি উৎপাদন হ্রাসের আশঙ্কা

pic30-01-17নুরুল আমিন হেলালী, কক্সবাজার ::

কক্সবাজার জেলার বিভিন্ন উপজেলায় বৈধ-অবৈধভাবে গড়ে উঠা প্রায় অর্ধশত ইটভাটায় নিয়ম ভঙ্গ করে ফ্রি-স্টাইলে ব্যবহার হচ্ছে ফসলি জমির মাটি। এছাড়া পাহাড় কেটে ও নদীর তীর কেটে নিয়ে ভাটায় মাটি নেয়া হচ্ছে। ফলে ফসলি জমি অনুর্ভর হয়ে কৃষি উৎপাদন হ্রাস এবং বিভিন্ন স্থানে জনবসতি হুমকির মুখে পড়েছে। জেলার ৮টি উপজেলায় বৈধ ও অবৈধ মিলিয়ে প্রায় অর্ধশত ইটভাটা রয়েছে। সরেজমিনে দেখা যায়,প্রতিটি ভাটায় ইট তৈরীতে ব্যবহার হচ্ছে ফসলি জমির মাটি। জমির মালিকরা ১ থেকে ২ ফিট গভীর করে টপ সয়েল বিক্রি করছেন ভাটার মালিকদের। ভাটা মালিকরা ভ্যাকুমেশিন ও স্থানীয় পদ্ধতিতে মাটি কেটে নিচ্ছে। এর ফলে কৃষিজমি অনুর্বর ও পরিত্যক্ত বা কৃষির অনুপযোগী হয়ে পড়ে। পাশাপাশি পাশের জমিতেও ভাঙন দেখা দেয়। বর্তমানে প্রতিটি উপজেলায় বিভিন্ন স্পটে ফসলি জমির মাটি ইটভাটায় বিক্রি হচ্ছে। অপরদিকে সদর উপজেলার ঈদগাঁও,জালালাবাদ,ইসলামাবাদে প্রায় ৮টি ইটভাটায় ফ্রি স্টাইলে ফসলি জমির মাটি কেটে নেয়ার ফলে অনাবাদি থেকে যাচ্ছে শত শত একর ধানি জমি। এছাড়া মেহের ঘোনা থেকে ঝাঁইক্কা কাটা বিলের উপর দিয়ে যাওয়া দক্ষিণ মাইজ পাড়ার সড়কের গাঁ ঘেষে জমির মাটি কেটে নেয়া এবং সড়কটি দিয়ে অনবরত মাটি বাহী ট্রাক-ডেম্পার চলাচলের ফলে সড়কটি হুমকির মুখে পড়েছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। অন্যদিকে রামু উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে বিভিন্ন স্পটে বাঁকখালী তীর থেকে মাটি কেটে ইটভাটায় বিক্রি করা হচ্ছে। পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজার সূত্রে জানা যায়,ফসলি জমি নষ্ট করে ভাটা স্থাপন ও ফসলি জমির টপসয়েল বা উপরিভাগের মাটি ইটভাটায় ব্যবহারে নিষেধাঙ্গা থাকলেও জেলায় তা মানা হচ্ছে না। এছাড়া জেলার অধিকাংশ ইট ভাটা গড়ে উঠেছে ফসলিজমিতে ও জনবসতিপূর্ণ এলাকায়। ইট তৈরীর মাটিও ফসলিজমি ধ্বংস করে সংগ্রহ করা হচ্ছে। প্রতিবছর যেভাবে ইট তৈরীর পুরোটাই মাটি ফসলি জমি থেকে সংগ্রহ করা হচ্ছে এভাবে চলতে থাকলে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে জেলায় ফসলি জমি অর্ধেকেরও নিচে নেমে আসবে বলে আশংঙ্কা করছেন সচেতন মহল। ঈদগাঁও ইউনিয়নের জমি মালিক ছৈয়দ আহম্মদ,শওকত আলী,নুরুচ্ছফা জানান,শুষ্ক মৌসুমে পানি সেচ ব্যাহত হওয়ার কারনে তাদের জমিতে ফসল আবাদ করে পোষায় না। তাই অনাবাদি রেখে জমির মাটি ইট ভাটায় বিক্রি করছেন। তবে ভাটা মালিকরা জানান,মাটি বিক্রেতাদের কাছ থেকে তারা মাটি ক্রয় করে থাকেন। বিক্রেতারা কিভাবে মাটি সংগ্রহ করেন তা তারা জানেন না। উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা জিকু দাশ জানান, একদিকে ফসলি জমির উপর ইটভাটা স্থাপন অপরদিকে ফসলি জমির মাটি ইট তৈরীর কাজে ব্যবহার করার কারণে আবাদি জমি কমে যাওয়ার পাশাপাশি আশঙ্কাজনকভাবে ফসল উৎপাদন কমে যাচ্ছে। জনবসতি এলাকায় ইটভাটা স্থাপন ও ফসলি জমির মাটি ব্যবহার বন্ধে প্রশাসনের যতদ্রুত সম্ভব কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহন করা জরুরী বলে অভিমত সচেতন মহলের।

পাঠকের মতামত: