আগামী ২৮ডিসেম্বর জেলা পরিষদ নির্বাচন। জেলার ওয়ার্ড বিভক্তির কাজ সম্পন্ন হয়েছে। ১৫ জন ওয়ার্ড সদস্য ৫ জন নারী সংরক্ষিত সদস্য ও ১জন চেয়ারম্যান নিয়ে গঠিত হবে জেলা পরিষদ। চেয়ারম্যান প্রার্থীদের এখন দৃষ্টি পুরো জেলার সহ¯্রাধিক জনপ্রতিনিধি ভোটার। ধীরে ধীরে সরগরম হয়ে উঠেছে জেলা পরিষদ নির্বাচন। চেয়ারম্যান প্রার্থী, সদস্য ও সংরক্ষিত নারী সদস্য প্রার্থীরা নিজেদের মতো করে গণসংযোগ ও মতবিনিময় সভা চালিয়ে যাচ্ছেন। এদিকে জেলা পরিষদের নির্বাচন দলীয় না হলেও আওয়ামীলীগ থেকে বর্তমান প্রশাসক মোস্তাক আহমদ চৌধুরীর নাম চেয়ারম্যান পদে প্রার্থীতা ঘোষণা করেছে। এই নির্বাচনে বড় দল বিএনপি-জাতীয় পার্টি অংশ নিচ্ছে না তা অনেকটা নিশ্চিত। তবে আওয়ামীলীগ, খালি মাঠে ফাঁকা গোল দিতে চাইলেও সেটিও হচ্ছে না। জাতীয় পার্টির (জেপি) প্রেসিডিয়াম সদস্য জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান সাবেক সাংসদ মুক্তিযোদ্ধা এএইচ সালাহউদ্দিন মাহমুদ প্রার্থীতায় তুমুল লড়াইয়ের আভাষ পাওয়া যাচ্ছে নির্বাচনি মাঠে। তিনি ২৬ নভেম্বর জেলা নির্বাচন অফিসে গিয়ে তিনি নির্বাচনের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহ করে নিজেকে ‘স্বতন্ত্র প্রার্থী’ হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন। তার প্রার্থীতা ঘোষণা দেওয়ায় ৭০’এর জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকার গণজোয়ারের মধ্যে স্বতন্ত্র এমপি নির্বাচিত হওয়া মোস্তাক আহমদ চৌধুরী এখন কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। মাঠে ময়দানে একাধিক চেয়ারম্যান প্রার্থীর নাম শোনা গেলেও শেষ পর্যন্ত ভোটের মাঠে মোস্তাক আহমদ চৌধুরী ও সালাহউদ্দিন মাহমুদের মধ্যে শক্ত লড়াই হবে এমনটাই জানালেন জনপ্রতিনিধিরা।
গত পাচ বছর সরকারের মনোনিত প্রশাসক হিসেবে মোস্তাক আহমদ চৌধুরী দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি দীর্ঘদিন জেলা পরিষদের প্রশাসক হিসেবে জেলার ব্যাপক উন্নয়ন করছেন। বিশেষ করে স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও রাস্তা ঘাট ব্রিজ কালভার্ট সহ বিভিন্ন উন্নয়ন সাধিত হয়েছে।
মোস্তাক আহমদ চৌধুরী জানান, পুরো কক্সবাজারে চোখে পড়ার মতো উন্নয়ন করেছেন। অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করার জন্য এবারও চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়েছি। গণসংযোগ ও মতবিনিময় সভা চালিয়ে যাচ্ছি। তিনি জনপ্রতিনিধিদের কাছে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। তার উন্নয়ন কাজের জন্য এবারও জনপ্রতিনিধিরা বিপুল ভোটে নির্বাচিত করবেন জানান তিনি।
এদিকে চকরিয়া উপজেলার বরইতলী ইউনিয়নের সম্ভান্ত মুসলিম পরিবারে ১৯৫০সালের ২৫ শে নভেম্বর ডেপুটি বাড়িতে সালাহউদ্দিন মাহমুদের জন্ম গ্রহণ করেন। তার পিতার নাম মরহুম এ.এ সুলতান মাহমুদ বিএ, দাদার নাম মরহুম গোলাম কাদের এম.এ (ডবল) ডেপুটি ম্যাজিষ্ট্রেট।
তার শৈশব কাটে চট্টগ্রাম শহরে। সেখানেই প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষাজীবন শেষ করেন। সালাহউদ্দিন মাহমুদ মুজিব বাহিনীর কক্সবাজার মহকুমার কমান্ডার হিসেবে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। রাজনৈতিক জীবনে সালাহউদ্দিন মাহমুদ ১৯৮৫সালে চকরিয়া উপজেলার প্রথম উপজেলা চেয়ারম্যান, ১৯৮৬ ও ১৯৮৮ সালে জাতীয় সংসদের এমপি ছিলেন। ১৯৮৮সালে উপ-মন্ত্রীর পদমর্যাদায় কক্সবাজার জেলা পরিষদের প্রথম জেলা চেয়ারম্যান নিযুক্ত হন। সালাহউদ্দিন মাহমুদ জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান থাকাকালীন সময়ে জেলায় নানান উন্নয়ন কর্মকান্ড পরিচালিত হয়েছে। বিশেষ করে চকরিয়া সরকারি হাসপাতাল নির্মাণ, চকরিয়া কলেজকে ডিগ্রি কলেজে উন্নীতকরণ, চকরিয়া পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় ও বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় সরকারীকরণ, বাটাখালী সেতু নির্মাণ, পেকুয়া কাটাফাড়ি সেতু নির্মাণ, বাগগুজরা সালাহ উদ্দিন ব্রীজসহ বরইতলী মগনামা সড়ক, বদরখালী সড়কের উন্নয়ন, চিংড়ি জমির সঠিক বরাদ্দের মাধ্যমে চাষের উন্নয়ন, মাদ্রাসা, মসজিদ, মন্দির,কবরস্থানসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নসহ গ্রামীণ বিভিন্ন সড়ক, ব্রিজ, কালভার্ট নির্মাণ, বিভিন্ন ইউনিয়নে পরিবার পরিকল্পনা ও স্বাস্থ্যকেন্দ্র নির্মাণসহ উন্নয়নমূলক কাজ সাধিত হয়েছে।
জীবনের শেষ সময়ে তার সাজানো ঘরে আরেকবার জেলা পরিষদে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে মানবসেবা, সমাজ সংস্কার, শিক্ষার উন্নয়ন কিভাবে করতে হয় তা দেখিয়ে যেতে চান মুক্তিযোদ্ধা এএইচ সালাহ উদ্দিন মাহমুদ। স্বাধীনতার পর কক্সবাজারের চকরিয়া ও পেকুয়া উপজেলার অর্থনৈতিক ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে সালাহউদ্দিন মাহমুদের অবদান এখনো স্বরণ করছেন এই অঞ্চলের মানুষ। সর্বজন নেতা হিসাবে সকল শ্রেণি পেশার মানুষের কাছে এখনো জনপ্রিয় নেতা। তার বিরুদ্ধে কোন সময় অনিয়ম ও দূর্নীতির অভিযোগ উঠেনি। তিনি একজন বরণ্য রাজনীতিবীদ এবং তেমনি সুবক্তাও। ভালো বক্তার কারণে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে প্রশাসনিক দক্ষতার অর্জনের জন্য স্বাধীনতার পর তাকে সরকারীভাবে স্কলারশীপ দিয়ে বুলগেরিয়ায় পাঠিয়েছিলেন।
পাঠকের মতামত: