জসিম মাহমুদ, টেকনাফ সংবাদদাতা ::
টেকনাফ শাহপরীর দ্বীপের নাফ নদী পাড় থেকে বালি উত্তোলণ করছে টেকনাফ জালিয়ার দ্বীপ ট্যুরিজম পার্কের মাটি ভরাটের কাজ পাওয়া ঠিকাদারি প্রতিষ্টান। ট্রলারে করে বালি তুলে নিয়ে ইকো-ট্যুরিজম এলাকা হিসাবে ঘোষিত টেকনাফের জইল্যারদিয়া (আবদুল জলিলের দ্বীপ) ভরাট করা হচ্ছে । গত চার দিন ধরে শাহপরীর দ্বীপে নাফ নদের চরে ইঞ্জিন চালিত যন্ত্র বসিয়ে উত্তোলন করা হচ্ছে সে বালি। এতে মারাত্মক ঝুঁকিতে পড়েছে নাফ নদের বেড়িবাধ,পর্যটক জেটি, ঘোলার চর সহ বিভিন্ন স্থাপনা ।শাহপরীর দ্বীপের নাফ নদের চর থেকে তোলা এসব বালু দিয়েই ভরাট করা হচ্ছে ট্যুরিজম পার্ক জালিয়ার দ্বীপ।
সরেজমিনে শনিবার সকাল ১০টায় শাহপরীর দ্বীপ জেটি ঘাটে গিয়ে দেখা যায়, শাহপরীরদ্বীপের নাফ নদীর পাড় থেকে বালি উত্তোলণ করছে ৮-১০টি ট্রলারে করে।বালি উত্তোলণ করে টেকনাফের জইল্যারদিয়ায় এনে ভরাট করা হচ্ছে। এভাবে হঠাৎ করে বালি উত্তোলন করায় স্থানীয় বাসিন্দাদের মাঝে বিরুপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। শাহপরীরদ্বীপের চারদিকে ভয়াবহ ভাঙ্গণ চলছে গত কয়েক বছর ধরে।শাহপরীরদ্বীপ থেকে টেকনাফ যাওয়ার একমাত্র সড়ক যোগাযোগও গত কয়েক বছর ধরে বিচ্ছিন্ন। এমতাবস্থায় শাহপরীরদ্বীপ ঘেঁষে নাফ নদী থেকে ব্যাপক হারে বালি উত্তোলণ করায় স্থানীয় বাসিন্দাদের মাঝে বিরুপ প্রতিক্রিয়া এবং নানা সমালোচনা চলছে। এভাবে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা থেকে বালি উত্তোলণ করার সরকারী কোন অনুমতি আছে কি-না তাও আমরা তথা শাহপরীরদ্বীপের স্থানীয় বাসিন্দারা জানেনা’।
জেলা আওয়ামীলীগ সদস্য সোনা আলী বলেন,‘জলবায়ু পরিবর্তনে দ্বীপের পশ্চিমে প্রায় আড়াই কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে এক তৃতীয়াংশ জনপদ বিলীন হয়ে গেছে। এমন অবস্থায় দ্বীপের নাফ নদের চর থেকে বালু উত্তোলন করা হলে নাফ নদের বেড়িবাঁধও বিলীনের সম্ভাবনা রয়েছে। এ অংশের বেড়িবাঁধটি বিলীন হয়ে গেলে তখন দ্বীপের অর্ধ লক্ষ মানুষের ঠিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়বে।’ তিনি আরো বলেন, বালু উত্তোলনের এত জায়গা থাকতে শাহপরীর দ্বীপ থেকে বালু উত্তোলন করা কোন মহলের ষড়যন্ত্র হতে পারে। আমরা দ্বীপবাসী এক সাথে শাহপরীর দ্বীপের যেকোন প্রান্ত থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন প্রতিহত করবো।
টেকনাফ উপজেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি মাস্টার জাহেদ হোসেন বলেন, গত ৩ দিন ধরে শাহপরীর দ্বীপের বিভিন্ন পয়েন্টে নাফ নদের চর থেকে মাটি উত্তোলন করেছে জালিয়ার দ্বীপ ট্যুরিজম পার্কের মাটি ভরাটের কাজপাওয়া ঠিকাদারি প্রতিষ্টানের মাধ্যমে। বালু উত্তোলন করা দরকার মিয়ানমার নাইক্ষ্যংদিয়া সীমান্তে নাফ নদের অংশে। বালু উত্তোলন দ্রুত স্থায়ীভাবে বন্ধ করা জন্য বিষয়টি উর্ধ্বতন মহলের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
সাবরাং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব নুর হোসেন বলেন ‘বিষয়টি শুনেছি। তবে প্রশাসন থেকে এব্যাপারে কোন তথ্য জানানো হয়নি। শাহপরীরদ্বীপ এননিতেই অতি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে। উপরন্ত যে স্থান থেকে বালি উত্তোলণ করা হচ্ছে তা অব্যাহত থাকলে পুরো শাহপরীরদ্বীপ হুমকির মুখে পড়বে। প্রতিবছর সেন্টমার্টিনগামী জাহাজ গুলো বালুচরে আটকে যায়। সেখান থেকে বালু উত্তোলন করা হলে একটি নদীর ড্রেজিংও হয়ে যাবে, পাশাপাশি জালিয়ার দ্বীপ ট্যুরিজম পার্কের মাটিও মিলবে। কিন্তু শাহপরীর দ্বীপের কোন অংশে নাফের চর থেকে বালু উত্তোলন দ্বীপবাসী মেনে নেবেনা ,হুমকির মুখে পড়বে শাহপরীরদ্বীপ।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) জাহিদ হোসেন সিদ্দিক বলেন ‘জইল্যারদ্বীপ উন্নয়নের কাজ শুরু হয়েছে। ভরাটের জন্য বালির প্রয়োজন। ক্ষতি না হয় মতো নাফ নদীর বাহির থেকে বালি উত্তোলণ করতে বলা হয়েছে’।
পাঠকের মতামত: