ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৪

চকরিয়ায় স্লুইস গেট ভেঙে ভেসে গেছে মাঠের ৭ হাজার মণ লবণ

Chakaria-Picture-12-02-2017-2নিজস্ব প্রতিবেদক, চকরিয়া :::

চকরিয়া উপজেলার পশ্চিম বড়ভেওলা ইউনিয়নের দরবেশকাটা এলাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাঁধ সংস্কার কাজে ঠিকাদাারি প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রামের ইউনুছ এন্ড ব্রাদার্সের বিরুদ্ধে চরম গাফেলতির অভিযোগ উঠেছে।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজনের দায়িত্বহীন কাজের ফলে বেড়িবাঁধের স্লুইস গেট ভেঙে জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে স’ানীয় লম্বাখালী ঘোনাসহ বিপুল পরিমাণ লবণ মাঠ। এতে পানিতে ভেসে গেছে ওই এলাকার শতাধিক প্রান্তিক চাষির উৎপাদিত প্রায় সাত হাজার মণ লবণ। মৌসুমের মাঝপথে এসে উৎপাদিত লবণ ও চাষের ক্ষেত্র নষ্ট হওয়ায় বর্তমানে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন ভুক্তভোগী চাষিরা। ক্ষতিগ্রস্ত চাষিরা এ ব্যাপারে তদন্তপূর্বক ক্ষতিগ্রস্ত স্লুইস গেটটি মেরামত এবং ভেসে যাওয়া লবণের ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করতে প্রশাসনের কাছে জরুরি ভিত্তিতে হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
অভিযোগে স’ানীয় লবণচাষি মোহাম্মদ এখলাছ, মোহাম্মদ কায়কোবাদ, মনছুর আলম, নাজেম উদ্দিন, গিয়াস উদ্দিন, সাহাব উদ্দিন, আবদুল করিম, জকরিয়া, মোহাম্মদ ছাদেক, বাদশা মিয়া, নাজু মাঝি, আবদুর রহমান, ছলিমউদ্দিন, নুরুল আমিন, ছলিম বাদশা, আবছার মিস্ত্রী, গিয়াস উদ্দিন, নাছির উদ্দিন, কবির আহমদ, মনির উল্লাহ ও মোক্তার আহমদসহ উপসি’ত শতাধিক চাষি দাবি করেন, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজন বেড়িবাঁধের নির্মাণ কাজের সময় এস্কেভেটর দিয়ে মাটি কাটতে গেলে একটি স্লুইস গেট ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এরপর রাতের বেলায় বেড়িবাঁেধর ওপারে নদীতে জোয়ার আসলে পানির প্রবল চাপে স্লুইস গেটের ক্ষতিগ্রস্ত অংশটিতে বড় আকারের ফাটল সৃষ্টি হয়ে অনায়াসে পানি ঢুকে পড়ে এপারের লবণ মাঠ তলিয়ে যায়।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে পশ্চিম বড়ভেওলা ইউপি চেয়ারম্যান ও মাতামুহুরী উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বাবলা বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ড সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা নির্মাণ কাজের স’লে উপসি’ত না থাকার কারণে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজন শুরু থেকে নির্মাণ কাজে নানা ধরনের অনিয়ম করছেন। বিশেষ করে স্কেভেটর দিয়ে মাটি কাটার সময় স্লুইস গেটটি ভেঙে গেলেও স’ানীয় চাষি কিংবা এলাকার জনপ্রতিনিধি অথবা পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের না জানিয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্টরা কাজ চালিয়ে যেতে থাকেন। এ অবস’ার ফলে তাদের ভুলের মাশুল দিতে হচ্ছে এখন এলাকার পান্তিক লবণ চাষিদের। তিনি বলেন, বিষয়টি লিখিতভাবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানানো জন্য পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যানকে বলা হয়েছে।
জানতে চাইলে ক্ষতিগ্রস্ত লবণ মাঠ লম্বাখালী ঘোনার পরিচালক মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, উপজেলার পশ্চিমবড় ভেওলা ইউনিয়নের দরবেশকাটা গ্রামের অদূরে ৩৫৩ একর আয়তনের লম্বাখালী ঘোনায় চলতি মৌসুমে প্রায় ৩৬০জন চাষি লবণ চাষ করছেন। এছাড়াও পাশের বিপুল পরিমাণ জমিতে এলাকার আরো ৬ শতাধিক চাষি জমি বর্গা নিয়ে লবণ চাষে রয়েছেন। তিনি বলেন, মৌসুমের মাঝপথে এসে উৎপাদনের এ সময়ে বেড়িবাঁধের স্লুইস গেটটি ভেঙে নদীর পানি ঢুকে পড়ার কারণে বেশির ভাগ লবণ মাঠ তলিয়ে গেছে। ভেসে গেছে চাষিদের প্রায় সাত হাজার মণ উৎপাদিত লবণ। বর্তমানে বাজারে প্রতিমণ লবণ ২৮০ টাকা ধরে বিক্রি হচ্ছে। সেই হিসেবে ধারণা করা হচ্ছে চাষিদের প্রায় ২০ লাখ টাকার বেশি ক্ষতি হয়ে গেল।
কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সবিবুর রহমান বলেন, চকরিয়া উপকূলীয় অঞ্চলের চিংড়িজোন ও লবণচাষ নিশ্চিত করতে সরকারের সংশ্লিষ্টমহলের নির্দেশে পানি উন্নয়ন বোর্ড তিনটি প্যাকেজের আওতায় সেখানে প্রায় ১১ কিলোমিটার আয়তনের বেড়িবাঁধ সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে। বেড়িবাঁধ সংস্কার কাজ শেষ হলে সুফল পাবে ওই এলাকার মৎস্য ও লবণচাষিরা।
তিনি বলেন, নির্মাণ কাজে হয়তো ভুলের কারণে ছোট-খাটো দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। স্লুইস গেট ভেঙে যাওয়ার ঘটনাটি তেমন একটি দুর্ঘটনা। তারপরও ক্ষতিগ্রস্ত স্লুইস গেটটি মেরামত করে দেয়ার জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে নির্দেশ দেয়া হবে।

পাঠকের মতামত: