এম.জিয়াবুল হক, চকরিয়া ::
চকরিয়ায় প্রতিমা বালা নাথ নামের সংখ্যালঘু পরিবারের এক বৃদ্ধ মহিলার ক্রয়সূত্রে প্রায় ৩০ বছরের ভোগদখলীয় বিপুল পরিমাণ জায়গা জোরপূর্বক দখলে নিয়ে রাতারাতি ইমারত নির্মাণকাজ চালাচ্ছে প্রভাশালীরা। বিরোধীয় এই জায়গায় আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকলেও তা না মেনে দখলবাজ চক্র আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। জায়গা দখলে বাধা দেওয়ায় বৃদ্ধ প্রতিমা বালাকে মধ্যযুগীয় কায়দায় শারিরিক নির্যাতন চালানোরও অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এ ঘটনায় গত মঙ্গলবার রাতে বৃদ্ধ প্রতিমা বালা বাদী হয়ে দখলবাজ চক্রের ৬ জনের নামে থানায় লিখিত এজাহার দিলেও গতকাল বুধবার বিকেল পর্যন্ত তা মামলা হিসেবে নেওয়া হয়নি।
তবে পুলিশ বলেছে, প্রতিমা বালার ওপর যদি কেউ হামলা বা শারিরিক নির্যাতন করার ঘটনায় প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয় তাহলে মামলা নেওয়া হবে।
ডুলাহাজারা নাথপাড়ার বাসিন্দারা অভিযোগ করেন, ডুলাহাজারা ইউনিয়নের উলুবুনিয়া গ্রামের জহির উল্লাহর ছেলে ছৈয়দ আহমদ সশস্ত্র একদল ভাড়াটিয়া লোক নিয়ে গত একমাস ধরে প্রতিমা বালা নাথের ক্রয়কৃত এক কানি (৪০ শতাংশ) জমির অর্ধেকাংশ দখলে নিতে বেশ তৎপর হয়ে উঠে। এনিয়ে প্রতিমা বালা কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট’র আদালতে ১৪৪ ধারা জারি চেয়ে আবেদন করেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট খালি জায়গায় স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে উভয়পক্ষকে নির্দেশনা দিয়ে উপজেলা সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কাছ থেকে প্রতিবেদন এবং থানার ওসিকে শান্তি-শৃক্সক্ষলা বজায় রাখতে নির্দেশ দেন। কিন্তু ছৈয়দ আহমদ এসব নির্দেশনা অমান্য করে বিধবা মহিলার জায়গা দখলে নিতে আরো বেশি বেপরোয়া হয়ে উঠেন।
ভুক্তভোগী প্রতিমা বালা নাথের ছোট ভাই বাদল কান্তি নাথ অভিযোগ করেন, প্রভাবশালী ছৈয়দ আহমদ তার বোনের ৩০ বছর আগের ক্রয়কৃত খালি জায়গা দখলে নিয়ে ইমারত নির্মাণকাজ তো চালাচ্ছেন কয়েকদিন ধরে। গত মঙ্গলবার দুপুরে সশস্ত্র সন্ত্রাসী নিয়ে বোনের বসতবাড়ি গুঁড়িয়ে দেওয়ার পর লুটপাটও চালিয়েছে তারা। এ সময় বাধা দেওয়ার চেষ্টা করায় বোন প্রতিমা বালা নাথকে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন করায় তিনি গুরুতর আহত হয়েছেন। এ ঘটনা এলাকার লোকজন দেখেছে।
মঙ্গলবার রাতে চকরিয়া থানায় প্রতিমা বালা বলেন, ‘৩০ বছর আগে আমি এক কানি জমি ক্রয় করার পর খতিয়ান সৃজনসহ সরকারী নানা খাজনাদি পরিশোধ করে অদ্যাবদি পর্যন্ত ভোগদখলে রয়েছি। কিন্তু আমার ক্রয়কৃত জমিতে গত কয়েকমাস আগে হঠাৎ করে এসে জায়গা দাবি করে ছৈয়দ আহমদ। এনিয়ে আমি আদালতের শরণাপন্ন হলেও সে কোন কিছুই মানছেন না। আমাকে জায়গা থেকে উচ্ছেদ করতে ছৈয়দ আহমদ সদলবলে সেখানে অবস্থান করে জোরপূর্বক জায়গা দখলে নিয়ে ইমারত নির্মাণ করছে। এতে বাধা দিতে গেলে আমাকে পিটিয়ে আহত করে তারা। আমার জাত ধরে গালিগালাজসহ হুমকি দেওয়া হয়।’
চকরিয়া উপজেলা সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের আইনজীবী লুৎফুল কবির বলেন, ‘পুলিশের অসহযোগিতার কারণেই অসহায় প্রতিমা বালার জায়গাটি জোরপূর্বক দখলে নিয়ে ইমারত নির্মাণ করতে পারছে। এজন্য দখলবাজ ছৈয়দ আহমদ দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসার (এসআই) দেবব্রত রায়কে মোটা অংকের টাকায় ম্যানেজ করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘পুলিশ যদি আন্তরিক হতো তাহলে আজ প্রতিমার জায়গাটি বেদখল হতো না। জায়গা দখলে বাধা দেওয়ায় বৃদ্ধ প্রতিমাকে মারধর এবং হিন্দু সম্প্রদায়কে গালাগাল করার বিষয়টি থানার ওসিকে ব্যক্তিগতভাবে জানিয়েছি।’
অভিযোগ অস্বীকার করে থানার এসআই দেবব্রত রায় বলেন, ‘প্রতিমা বালাকে থানায় বৈঠকে ডাকলেও উপস্থিত হন না। এতে আমার কিছুই করার নেই।’
বিধবা প্রতিমা বালার ক্রয়কৃত জায়গা দখলে অভিযুক্ত ছৈয়দ আহমদ বলেন, ‘আমি একবছর আগে ওই জায়গা ক্রয় করেছি। আমার ক্রয়কৃত জায়গায় ইমারত নির্মাণকাজ চালাচ্ছি। এখানে কোন হিন্দু মহিলার জায়গা দখলে নেওয়া হয়নি এবং কাউকে মারধরও করিনি।’
ছৈয়দ বলেন, ‘আমি যা করছি তার সবকিছুই থানার অফিসার দেবব্রত স্যার জানেন। মঙ্গলবার রাতেও থানায় গিয়ে স্যারের সঙ্গে দেখা করেছি।’
চকরিয়া থানার ওসি মো. বখতিয়ার উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘প্রতিমা বালাকে কেউ মারধর করার বিষয়টি সত্য হয় তাহলে তদন্তপূর্বক ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তাছাড়া শুরু থেকে দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসার দেবব্রত রায়ের পরিবর্তে প্রতিমাকে মারধরের বিষয়টি তদন্তের জন্য নতুন একজন অফিসারকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।’ ##
পাঠকের মতামত: