চকরিয়ায় ভেজাল বেগুন ও মরিচের বীজ জমিতে রোপন করে এবছর ব্যাপক ফলন বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে কৃষকরা। পৌরসভার দুই নম্বর ওয়ার্ডের মাতামুহুরী নদীর তীর এলাকার জমিতে রোপন করা বেশির ভাগ বেগুন ও মরিচ ক্ষেত ভেজাল বীজের কারনে মরে যাচ্ছে। এ অবস্থার কারনে ওই এলাকার শতাধিক কৃষক আর্থিকভাবে ক্ষতির শিকার হয়েছেন।
ভুক্তভোগী কৃষকরা জানিয়েছেন, সরকারিভাবে অনুমোদন না থাকলেও ওসমান গনী নামের এক ব্যক্তি সুপার এগো প্রতিষ্টানের নামে প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে স্থানীয় সুরমা জাতের বেগুন ও মরিচ বীজ অন্য কোম্পানীর প্যাকেটে ঢুকিয়ে দিয়ে তা গ্রীণবল ও গ্রীণবয় নামে বাজারে বিক্রি করেছেন। শুধু সুপার এগ্রো কোম্পানী নয়, চকরিয়া সদরে অবস্থিত বেশির দোকানে ভেজাল বীজ ও কীটনাশক বিক্রি করা হচ্ছে। এতে কোম্পানীর বিক্রয় প্রতিনিধি ও ডিলারদের সাথে যোগসাজস রয়েছে। তাঁরা সিন্ডিকেট করে ভেজাল বীজ বিক্রির মাধ্যমে প্রতিবছর লাখ লাখ টাকা কৃষকদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে।
কৃষকরা জানিয়েছেন, চকরিয়া শহরের বালিকা বিদ্যালয় সড়কে নিউ সুপার এগ্রো এবং সোসাইটি মসজিদ মার্কেটের দক্ষিনে নিজের দুটি দোকান থেকে ওসমান গণি প্যাকেটজাত এসব বেগুন ও মরিচ বীজ কৃষকদের মাঝে ছড়া দামে বিক্রি করেছেন। অভিযোগ পাওয়া গেছে, অভিযুক্ত ওসমান গণির দুটি দোকান থেকে চলতি মৌসুমে বেগুন ও মরিচ বীজ ক্রয় করেছেন বেশিরভাগ কৃষক পৌরসভার দুই নম্বর ওয়ার্ডের হালকাকারা মৌলভীর চর ও পুর্বচর এলাকার বাসিন্দা। কৃষকরা অভিযোগ করেছেন, যেখানে সপ্তাহের ব্যবধানে একটি বেগুন গত মৌসুমে দুইশত থেকে তিনশত গ্রাম ওজনে বিক্রি করা হয়েছে চলতি মৌসুমে সেই ধরণের একটি বেগুনের ওজন মাত্র ২০ গ্রাম কিংবা ৫০ গ্রাম ওজনে গিয়ে দাঁিড়য়েছে।
পৌরসভার হালকাকারা সওদাগর পাড়া গ্রামের বাসিন্দা কৃষক মোহাম্মদ ইব্রাহিম জানিয়েছেন, তিনি এবার সাড়ে তিন কানি জমিতে বেগুন ও দেড় কানি জমিতে মরিচ চাষ করেছেন। সুপার এগ্রো কোম্পানীর গ্রীণবল, গ্রীণবয় জাতের হাইব্রিট বেগুন বীজ রোপন করেছিলেন জমিতে। পাশাাশি একই কোম্পানীর ১৭০১ জাতের মরিচ বীজ রোপন করেন। এ পর্যন্ত তার যা খরচ পড়েছে বেগুন ও মরিচ বিক্রি করে তা উঠানো সম্ভব হচ্ছেনা। কৃষক ইব্রাহিম অভিযোগ করেছেন, চলতি মৌসুমে ফলন বিপর্যয়ের কারনে তার প্রায় দুই লাখ টাকার ক্ষতিসাধন হয়েছে।
একই বিলে কৃষক মোহাম্মদ ইসলাম চাষ করেছেন ৩ কানি বেগুন ও ৩ কানি মরিচ, ফজল করিম সাড়ে তিন কানি বেগুন ও দেড় কানি মরিচ, টমেটো, জহির আহমদ এক কানি জমিতে বেগুন ও তিন কানি জমিতে মরিচ, মিজানুর রহমান ৩ কানি বেগুন ও ২কানি মরিচ, মোক্তার আহমদ এক কানি জমিতে বেগুন ও মরিচ, ছরওয়ার আলম ৩ কানি জমিতে বেগুন, মরিচ ও টমেটো, জিয়াবুল করিম ২ কানি জমিতে বেগুন ও এক কানি জমিতে মরিচ, জামাল উদ্দিন তিন কানি জমিতে বেগুন ও মরিচ, নাছির উদ্দিন এক কানি জমিতে বেগুন ও মরিচ, জাহাংগীর আলম ২ কানি জমিতে বেগুন ও এক কানি জমিতে মরিচ, ইউনুছ দুই কানি জমিতে বেগুন ও মরিচ, নুরশেদ ২ কানি জমিতে বেগুন ও মরিচ। এছাড়াও একই বিলে রোস্তম আলী, বাবলু, বেলাল উদ্দিন, মনছুর আলমসহ অন্তত শতাধিক কৃষক প্রতিবছরের মতো এবারও বেশির ভাগ জমিতে চাষ করেছেন বেগুন ও মরিচের। কৃষকরা জানিয়েছেন, চাষের এ অবস্থার কারনে তাদের কমপক্ষে কোটি টাকার ক্ষতিসাধন হয়েছে।
ভুক্তভোগী কৃষকরা অভিযোগ করেছেন, সুপার এগ্রো নামের ওই কোম্পানীর পাশাপাশি তাঁরা শহরের একাধিক দোকান থেকে আরো কয়েকটি কোম্পানীর বেগুন ও মরিচ বীজ ক্রয় করে জমিতে রোপন করেছেন। কিন্তু রোপন করা বীজ গুলো ভেজাল হওয়ার কারনে তাঁরা এবছর আশানুরূপ ফলন পাচ্ছেনা। এ ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকরা চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন ক্ষতিগ্রস্থ কৃষক মোহাম্মদ ইব্রাহিম। একই সাথে কৃষকরা জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন পুর্বক তাদের ক্ষতিপুরণের ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য প্রশাসনের কাছে হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো.আতিক উল্লাহ বলেন, ভেজাল বীজ রোপনে ফলন বিপর্যয়ের ঘটনায় কৃষকরা কোন ধরণের অভিযোগ দেয়নি। তবে লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে এব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাহেদুল ইসলাম বলেন, ভেজাল বীজের কারনে যদি কৃষকের জমিতে ফলন বিপর্যয়ের ঘটনা প্রমাণিত হলে অবশ্যই জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। #
পাঠকের মতামত: