কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার উপকূলীয় বদরখালী ইউনিয়নে এশিয়ার বৃহত্তম সমবায়ী প্রতিষ্টান হিসেবে পরিচিত বদরখালী সমবায় কৃষি ও উপনিবেশ সমিতি। ১৯২৯ সালে ২৬২টি শেয়ার (ব্যাক্তি)নিয়ে এ সমিতি প্রতিষ্টা করা হয়। বদরখালী সমবায় কৃষি ও উপনিবেশ সমিতির ব্যবস্থাপনা কমিটির নির্বাচন আগামী ৫অক্টোবর১৬ইং অনুষ্টিত হবে। নির্বাচন পরিচালনা কমিটির ঘোষিত তফসিলে নিয়মনুযায়ী প্রার্থীদের যাচাই-বাছাই ওপ্রতীক বরাদ্ধের পর পরই পুরো এলাকা জুড়ে বিরাজ করছে নির্বাচনী হাওয়া ও উৎসবের আমেজ। বদরখালী অলিগলিতে শোভা পাচ্ছে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের নানান রখম পোষ্টার,পেষ্টুন ও ডিজিটাল ব্যানার এবং তোরণ।
স্থানীয়দের মতে বদরখালী সমিতির নির্বাচন হল একটি মিনি পার্লামেন্ট নির্বাচন। এ নির্বাচন জাতীয় ও স্থানীয় সরকার পরিষদ নির্বাচনকে হার মানাবে এমনটায় ধারণা অনেকের। প্রতি তিন বছর অন্তর অন্তর এ সমিতির নির্বাচন অনুষ্টিত হয়। সমিতির মোট ভোটার (সভ্য) রয়েছে ১৫০০জন। এ সমিতিকে নয়টি ওয়ার্ডে ভাগ করা হয়েছে। সমিতির নির্বাচনে ১২টি পদে ৪৪প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তৎমধ্যে সভাপতি পদে রয়েছে ৪জন,সহ-সভাপতি পদে ৩জন,সম্পাদক পদে ৩জন ও সাধারণ সদস্য পদে ৩৪জন। সভাপতি পদের প্রার্থীরা হলেন,সাবেক সভাপতি হাজ্বী নুরুল আলম সিকদার(চেয়ার), সাবেক সম্পাদক মোহাম্মদ আলী চৌধুরী(হারিকেন), সাবেক সভাপতি মৌলানা আবদুল মন্নান (দোয়াত কলম) ও ছরওয়ার আলম(প্রজাপতি),সহ-সভাপতি পদে সাবেক সহ-সভাপতি আলী মোহাম্মদ কাজল(বাই সাইকেল), আলী আজম বাহাদুর ( মই ) ওছালেহ আহমদ(কলসি)। এবং সম্পাদক পদে প্রার্থীরা হলেন, বর্তমান সম্পাদক এ.কে.এম ইকবাল বদরী(আনারস), নুরুল আমিন জনি(চাকা) ও এম.ওয়াইজ উদ্দিন(গোলাপ ফুল)।এছাড়াও সদস্য পদে ৩৪জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। বদরখালীর ৫০হাজার জনগোষ্টি সমিতির ভাগ্যেন্নয়ের উপর নির্ভরশীল। সেহেতু নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার পর থেকে সমিতির সভ্য (ভোটার), পোষ্য ও অংশীদারদের মাঝে নির্বাচন নিয়ে দেখা মেলেছে উৎসব মুখর পরিবেশ। প্রার্থীরা রাত-দিন পাড়া,মহল্লায় ভোটারদের দ্বারে দ্বারে গিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, বদরখালী পুরো ইউনিয়ন জুড়ে সমিতির নির্বাচনকে ঘিরে চলছে প্রার্থীদের ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা। গ্রামের বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায় অলিগলিতে নির্বাচনী ব্যানার, পোষ্টার, পেষ্টুনে ছেয়ে গেছে । তাছাড়া সমিতির এরিয়ার আওতাধীন জনগুরুত্বপূর্ণ এলাকায় নির্মাণ করা হয়েছে বড় বড় তোরণ। স্ব স্ব পদের প্রার্থীরা নিজেদের মত করে বিভিন্ন ধরণের প্রতিশ্রুতি দিয়ে পোষ্টার ব্যানারের মাধ্যমে নিজ নিজ পরিচয় ফুটিয়ে তুলছে। নির্বাচনকে ঘিরে ভোটার ও সাধারণ জনগণের মাঝে তৈরি হয়েছে যেন এক আনন্দঘন উৎসব। বেলা বাড়ার সাথে সাথে বেড়ে যায় বদরখালী বাজার জুড়ে প্রার্থী ও কর্মী সমর্থকদের পদচারণা। দুপুর দুইটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত চলে প্রার্থীদের মাইকিং ও কর্মী সমর্থকদের শ্লোগান। বাজারের অলিগলিতে দফায় দফায় বের করা হয় স্ব স্ব প্রার্থী ও সমর্থকদের নানা ধরণের মিছিল। তবে ইতিমধ্যে এ নির্বাচন নিয়ে ভোটের মাঠে নানা গুনজন ও শোনা যাচ্ছে আদৌ কি সমিতির নির্বাচন হবে কিনা ! এ নিয়ে সংশয় রয়েছে নির্বাচনে অংশে নেয়া প্রার্থীরাও।
নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণ হওয়ার পর পরই প্রাথীরা মাঠে চষে বেড়াচ্ছেন। সমিতি পরিচালনায় আগামী তিন বছরের জন্য সমিতির দেড় হাজার সভ্য ও ৫০ হাজার জনগোষ্টির ভাগ্যেন্নয়ের নেতৃত্ব ভোটারা(সভ্য)কাদের হাতে তুলে দিতে চায় তা এখন দেখার বিষয়। সমিতির ভোটার নাছির উদ্দিনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, জনগনের কল্যানার্থে যে সকল নেতৃবৃন্দ সমিতির উন্নয়ন মূলক কর্মকান্ডে নিয়োজিত রাখবে এবং সমিতকে দুর্নীতি মুক্ত সমিতি গঠনে ভূমিকা রাখবে তাদেরকে ভোট প্রদান করে নেতা নির্বাচিত করা হবে।
ভোটার গিয়াস উদ্দিন বলেন,এবারের নির্বাচনটা অন্যান্য অতীতের নির্বাচনের চেয়ে ব্যাতিক্রম হতে পারে।কারণ সভাপতি ও সম্পাদক এ দুটি পদে নবীন ও প্রবীণের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। অতীতে যে সমস্ত নেতৃবৃন্দ সমিতির বৃহত্তর জনগোষ্টির স্বার্থ সংশ্লিষ্টতা অক্ষুন্ন রেখেছে সে বিবেচনা করে ভোটারেরা ভোট প্রয়োগ করতে পারে।
সুত্রে জানান,বদরখালী সমিতির নির্বাচনে এ বারে সভাপতি পদে নির্বাচিত হওয়াটা বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ এ পদে সাবেক সভাপতি হাজ্বী নুরুল আলম সিকদার ও সাবেক দু’বারের সম্পাদক মোহাম্মদ আলী চৌধুরীর মধ্যে হতে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা। বিগত সময়ে সম্পাদক মোহাম্মদ আলী চৌধুরী দায়িত্ব পালন কালে সমিতির ব্যাপক ভাবে উন্নয়ন সাধিত হয়েছে বলে জানান ভোটার এবং সংশ্লিষ্টরা। এতে সভাপতি পদে তিনি সহসাই নির্বাচিত পার পেতে পারেন এমনটা ধারণা করা হচ্ছে।
সহ-সভাপতি আলী আজম বাহাদুর জানান, দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে সমিতি ও পরিষদের মানুষের সুখে-দুঃখে পাশে থেকে কল্যাণমূলক কাজ করে আসছি। এবারের সমিতির নির্বাচনে সভ্যদের ভোটে আমি নির্বাচিত হলে সমিতিকে শতভাগ দুর্নীতিমুক্ত ও সভ্যদের হয়রাণি বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
এ ব্যাপারে নির্বাচনে সভাপতি প্রার্থী মোহাম্মদ আলী চৌধুরীর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সমিতির সভ্য (ভোটার), পোষ্য ও অংশীদারদের অকুন্ঠ ভালবাসা ও সমর্থন নিয়ে সভাপতি পদে প্রার্থী হয়েছি। ভোটারেরা আমার পূর্বের উন্নয়ন কর্মকান্ড বিবেচনা করে নিশ্চয় আমাকে বিজয়ী করবেন।
তিনি আরো বলেন, আল্লাহ আমাকে নির্বাচিত করলে দারিদ্র দুরীকরণে বেকারদের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা হবে। সমিতির নামীয় যে সমস্ত জায়গা-জমি সন্ত্রাসী ও ভুমিদস্যুদের দখলে রয়েছে তা দখলমুক্ত করে মালিকনা প্রতিষ্টা করা হবে। সমিতির সদস্যদের মাঝে শেয়ার ভিত্তিক ভাবে জমি বরাদ্ধ দেওয়া ও কর্মচারীদের দুর্নীতি রোধ করাসহ স্বচ্চতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হবে।##
পাঠকের মতামত: