চকরিয়া উপজেলার বদরখালী সমবায় ও কৃষি উপনিবেশ সমিতিতে তিনবছর পর পর কমিটি বদল হলেও গত ২২বছর ধরে বহাল তবিয়তে রয়েছেন হিসাবরক্ষক পদে একজন। দায়িত্ব পালনের সুযোগে হিসাব রক্ষক শাহআলম ইতোমধ্যে সমিতির মালিকানাধীন বাজারের জায়গা থেকে নানা কায়দায় ২৪টি দোকানের মালিক হয়েছেন। তার এসব দোকানের বর্তমান বাজার মুল্য অন্তত দশ কোটি টাকা হবে বলে ধারনা করছেন সমিতির সভ্যরা। নির্বাচনের মাধ্যমে সমিতির নতুন কমিটি দায়িত্ব গ্রহণ করলে হিসাবররক্ষক শাহআলম নিজের এসব সম্পদ রক্ষায় তাদেরকে ম্যানেজ করে চলেন বলে অভিযোগ উঠেছে। ফলে সমিতির কোন কমিটিই তার সম্পদের ব্যাপারে পরবর্তী সময়ে কোন ধরণের ব্যবস্থা নেয়না। একইভাবে সমিতিতে বিধি বর্হিভুতভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত সহকারি ব্যবস্থাপক ও ক্যাশিয়ার নুরুল আমিনের অবৈধ আয় ও সম্পদের পরিমাণ নিয়ে সমিতির সভ্য পোষ্যদের মাঝে নানা ধরণের প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে। সমিতির সদস্যরা এব্যাপারেদুদকের অনুসন্ধান দাবি করেছেন।
গত ছয়মাস ধরে সমিতিতে নির্বাচিত কমিটি না থাকার সুযোগে সমিতির নানা খাতে খরচের ভুঁয়া ভাউচার তৈরী করে লাখ লাখ টাকা হরিলুটে নেমেছে বলে দাবি করেছেন সমিতির সভ্যরা। তাদের এই অপতৎপরতার কারনে বর্তমানে সমিতির সভ্য, পোষ্যসহ প্রায় ৪০হাজার জনগোষ্টির ভাগ্য অনিশ্চয়তার মুখোমুখি হয়েছে। অভিযুক্ত তিন কর্মচারী সমবায় আইন, বিধিমালা ও সমিতির উপ-আইন লংঘন করে এসব অনিয়ম করছেন বলে দাবি সমিতির সচেতন সদস্যদের।
সমিতির বেশির ভাগ সদস্য অভিযোগ করেছেন, হিসাবরক্ষক শাহআলম, সহকারি ব্যবস্থাপক নাছির উদ্দিন ও ক্যাশিয়ার নুরুল আমিন দীর্ঘদিন ধরে সমিতিতে চাকুরী করার সুবাদে অনিয়ম ও দুর্নীতিতে অনেকটা পারদর্শী হয়ে উঠেছেন। নতুন কমিটি আসলেই তাঁরা বিভিন্ন চলচাতুরীর মাধ্যমে ভুল তথ্য উপস্থাপন করে নিজেদের অনিয়ম ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করেন। তাঁরা প্রতিবছর বার্ষিক সাধারণ সভায় অনুমোদন যোগ্য বিভিন্ন খাতে অব্যয়িত প্রায় ৫০-৬০লাখ টাকা (তখনকার দায়িত্ব পালনকারী কমিটির কয়েকজনের ) যোগসাজসে ভুঁয়া বিল ভাউচার তৈরী করে খরচের মাধ্যমে এসব টাকা আত্মসাত করে আসছেন। তদন্ত করলে অতীতের অনেক অনিয়ম ধরা পড়বে বলে দাবি করেন সমিতির সদস্যরা। অভিযোগ রয়েছে, ওইসময় সমিতির কেউ এব্যাপারে প্রতিবাদ ও তাদের চুরি ধরিয়ে দিলে পরে তাকেও কিছু দিয়ে ম্যানেজ করেন এ তিন কর্মচারী। ফলে অনিয়মের এ ধরণের বড় ঘটনা আর জনসম্মুখে প্রকাশ পায় না।
সমিতির ক্ষুদ্ধ সদস্যরা অভিযোগ করেছেন, ক্যাশিয়ার নুরুল আমিন সমিতির টাকা মাসের পর মাস তার নিজের মতো নিজের কাছে রেখে দেয়। ওইসময় তিনি সমিতির টাকা ব্যবহার করে খন্ডকালীন ব্যবসাও করে আসছেন দীর্ঘদিন ধরে। এভাবে তিনি সমিতির টাকা ব্যবহার করে প্রচুর সম্পদের মালিক হয়েছেন বলে স্থানীয় সুত্রে অভিযোগ উঠেছে। এছাড়াও তিনি সমিতির আয় খাতের টাকার রশিদ ও ব্যয়খাতে ভাউচার জালিয়াতির মাধ্যমে প্রতিবছর বিপুল পরিমাণ টাকা হাতিয়ে নেন বলে সমিতির একাধিক সদস্য দাবি তুলেছেন। অপরদিকে সহকারি ব্যবস্থাপক নাছির উদ্দিন সমিতিকে নিজের দলিল লিখার অফিসে পরিণত করেছে দীর্ঘদিন ধরে। সমিতির কম্পিউটার, কালি ও কাগজ ব্যবহার করে তিনি প্রতিমাসে ৫০হাজার টাকার বেশি অবৈধ আয় করছেন। এতে সমিতি আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হলেও লাভবান হচ্ছে নাছির উদ্দিন। এছাড়াও তিনি দায়িত্ব পালনকালীন কমিটির অজান্তে জায়গা-জমির ভুঁয়া রেজুলেশন, সমিতির সম্পদের রেজুলেশন, সমিতির মালিকানাধীন দোকানের রেজুলেশন তৈরী করে মাসিক মিটিংয়ে গোপনে ঢুকিয়ে দিয়ে কৌশলে সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে বিপুল টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন।
সমিতির প্রবীণ একাধিক সদস্য দাবি করেছেন, সমিতির এই তিন কর্মচারী নানা কায়দায় সমিতির মালিকানাধীন চিংড়ি প্রকল্প ইজারা ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন খাতে সংশ্লিষ্টদের যোগসাজসে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। তাঁরা বর্তমানে সমিতির দেড়হাজার সভ্য, পোষ্যসহ প্রায় ৪০হাজার জনগোষ্টির ভাগ্য ও সম্পদ নিয়ে লুটপাটের মহোৎসবে মেতে উঠেছে। সমিতির সদস্যরা অভিযোগ তুলেছেন, দুর্নীতিবাজ তিন কর্মচারীকে সমিতির স্ব স্ব পদ থেকে অপসারণ করা না হলে অল্প সময়ের ব্যবধানে বদরখালী সমিতি একটি দেউলিয়া প্রতিষ্টানে রূপ নেবে। তাই ৪০হাজার মানুষের ভাগ্য ও সমিতির সম্পদ রক্ষার স্বার্থে অভিযুক্ত তিন কর্মচারীর অবৈধ সম্পদ উদ্ধারপুর্বক তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য সমিতির সদস্যরা কক্সবাজার জেলা প্রশাসক, জেলা সমবায় কর্মকর্তা, চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা সমবায় কর্মকর্তার কাছে জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। অন্যথায় তাদেরকে অপসারণের জন্য সমিতির সভ্য, পোষ্যরা আগামীতে বড় ধরণের আন্দোলনের প্রস্তুতি নেবে। #
পাঠকের মতামত: