::: এম.আর মাহমুদ :::
চকরিয়ার উপকূলীয় এলাকায় জোয়ার ভাটার পানি নিয়ন্ত্রণের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে স্লুইচ গেইট নির্মাণ করলেও জনগণ কাঙ্খিত সুফল ভোগ করতে পারছে না। যথাযথ কর্তৃপক্ষের আদর-যতেœর অভাবে বেশিরভাগ স্লুইচ গেইটের অবস্থা বড়ই নাজুক। কোন কোন স্লুইচ গেইটে কপাটও নষ্ট হয়ে গেছে অনেক আগে।
দায়িত্বশীল সূত্র মতে, চকরিয়া উপজেলার উপকূলীয় এলাকায় ২৭টি স্লুইচ গেইট রয়েছে। এসব স্লুইচ গেইট পানি উন্নয়ন বোর্ড নির্মাণ করলেও তাদের নিয়ন্ত্রণে নেই বলা চলে। বেশিরভাগ স্লুইচ গেইটে জাল বসিয়ে মাছ ধরে রমরমা বাণিজ্য করে যাচ্ছে এক ধরণের নব্য জেলে। ওইসব নব্য জনেরা মাছ ধরার জন্য যখন স্লুইচ গেইট খোলা রাখতে হয় তখন রাখে বন্ধ করে। আবার যখন বন্ধ রাখতে হয়, তখন রাখে খোলা। ফলে বন্যার সময় পানিতে তলিয়ে যায় উপকূলীয় এলাকার বেশক’টি ইউনিয়ন। আবার জোয়ারের সময় খোলা রাখার কারণে লোনা পানিতে তলিয়ে যায় আমন ও বোরো মাঠ।
চলতি বর্ষা মৌসুমের শুরুতে ২ দফা বন্যার সময় এসব স্লুইচ গেইটের কপাট বন্ধ থাকায় মাতামুহুরী নদীর মিঠা পানি প্রবেশ করায় ৪৫ হাজার একর চিংড়িঘেরের বিশাল একটি অংশের চিংড়িতে মড়ক দেখা দিয়েছে। মড়কের আকার ধারণ করেছে প্রকটভাবে। চিংড়ি চাষের সাথে জড়িত বেশিরভাগ চাষি দাবী করেছে, বন্যার পানির কারণে তাদের চিংড়িঘেরের সর্বনাশ হয়েছে। ইতিমধ্যে বিশাল অংকের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী কালো স্বর্ণ হিসেবে খ্যাত চিংড়ি মরে সাবাড় হয়ে গেছে। এছাড়া উপকূলীয় ৭ ইউনিয়নে বসবাসকারী বেশিরভাগ মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ হলেও যেন দেখার কেউ নেই। এক্ষেত্রে পানি উন্নয়ন বোর্ড ও প্রশাসন ‘কানে দিয়েছে তুলা আর পিঠে দিয়েছে কুলা’।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেক জনপ্রতিনিধি তাদের অসহায়ত্বের কথা অকপটে স্বীকার করেছে। সেখানে পাবলিকের কথা শুনবে কে? ওই এলাকার একজন প্রবীণ কৃষক এ প্রসঙ্গে বলতে শোনা গেছে ‘যেখানে বাজারে ধান চাল বিক্রি হয় না সেখানে কুমড়া কিনবে কে?’ কথা প্রসঙ্গে একজন জেলে দুঃখ করে মন্তব্য করতে শোনা গেছে, নানা প্রতিকূলতার কারণে প্রকৃত জেলেরা মাছ ধরার পেশা ছাড়তে বাধ্য হয়েছে। এখন নব্য জেলেদেরই সময়। স্লুইচ গেইটের অব্যবস্থাপনা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে, চিংড়ি চাষি সমিতির এক নেতা অনুশোচনার সুরে বলেন, ‘জাল টানে যদু, মাছ খায় মধু!’ এখন সেই সময়ই চলছে। যা বলাও যাচ্ছে না হজম করাও যাচ্ছে না।
বিশেষ করে চকরিয়ার চৌয়ারফাঁড়ি ও ঢেমুশিয়া স্লুইচ গেইট দু’টি রাস্তার উপরে হলেও যে অব্যবস্থাপনা চলছে তা বলা যায় না। সেক্ষেত্রে রামপুর এলাকায় অবস্থিত স্লুইচ গেইটগুলোর কি যে অবস্থা হতে পারে তা বলার মত ভাষা চিংড়ি চাষিদের নেই। চৌয়ারফাঁড়ি ও ঢেমুশিয়া স্লুইচ গেইট ব্যবস্থাপনা কমিটি না থাকায় পূর্ব বড় ভেওলা, সাহারবিলের আংশিক, পশ্চিম বড় ভেওলা, ঢেমুশিয়া, কোনাখালী, বি.এম.চর ও বদরখালী প্রবল বন্যা ও জোয়ারের সময় অনেকাংশে অরক্ষিত। বন্যা ও জোয়ারের পানিতে যখন পুরো এলাকা তলিয়ে যায় তখন প্রশাসনের টনক নড়ে। এবারের বন্যায় উপজলা প্রশাসনের সহায়তায় ঢেমুশিয়ার স্লুইচের পানি সচল করার লক্ষ্যে কপাট খুলতে গিয়ে এস্কেভেটর ব্যবহার করতে হয়েছে।
এছাড়া কচুরিপানা পরিষ্কার করতে জান বেরিয়ে গেছে। এসব অপকর্মের জন্য কারা দায়ী তাদের ব্যাপারে মুখ খুলতে কেউ সাহস পাচ্ছে না। তাদের আকুতি দেখে মনে হয়েছে সাহিত্যের ভাষায় ‘বুক ফাঁটে তো মুখ ফাঁটে না’ অবস্থা। দেশে অনাকাঙ্খিতভাবে চালের সংকট সৃষ্টি হওয়ায় বিদেশ থেকে লাখ লাখ টাকার চাল আমদানি করতে হচ্ছে। আর এমন সময় কিছু স্বার্থনেষী নব্য জেলের আখের গোছানোর কারণে কৃষকদের সর্বনাশ ঘটালে উপকূলবাসী লাভবান হবে না।
উপকূলের বেশিরভাগ কৃষক এক সময় সঙ্গতি সম্পন্ন ছিল। তাদের গোয়ালে গরু-মহিষ, ছাগল-ভেড়া, গোলায় ধান ও মাঠে লবণ সবই ছিল। অথচ এখন তাদের পরিবারের সেই জৌলস ও সচ্ছলতা নেই বলা চলে। হাতে গোনা কয়েকটি জমিদার পরিবারের অবস্থা ভাল থাকলেও যারা কৃষি কাজ করে জীবন জীবিকা নির্বাহ করে তাদের অবস্থা কি জানা দরকার। এ ব্যাপারে সচেতনতার সাথে স্লুইচ গেইট নিয়ন্ত্রণকারী নব্যজনদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া না হলে আগামী জাতীয় নির্বাচনে বর্তমান সরকারের সফলতা নিয়ে প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে।
পাঠকের মতামত: