ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৪

গ্রামীণ জনপদ সংস্কারের বেশি টাকা অপচয় হচ্ছে

1কক্সবাজারে গ্রামীণ জনপদ সংস্কার বা পুনঃ নির্মাণে বিশাল অংকের টাকা খরচ করা হয়। স্থানীয় সংসদ সদস্যদের গৃহীত প্রকল্প, উপজেলা পরিষদ, ইউনিয়ন পরিষদ, এছাড়া স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগসহ আরো কয়েকটি প্রতিষ্ঠান থেকে খরচ করা হয় এসব অর্থ। তবে বাস্তবে গ্রামীণ জনপদের অবস্থা খুবই করুণ। এখনো বেশির ভাগ ইউনিয়নে ৫০% এর উপরে রাস্তাঘাট কাদা মাটির। সেখানে ইট পর্যন্ত বসেনি। প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের দাবি রাস্তা সংস্কার বা অবকাঠামো গত উন্নয়নের কথা বলে বেশির অর্থই লুটপাট হয়। অনেকের দাবি একটি রাস্তার জন্য ৩টি প্রতিষ্ঠান থেকে বরাদ্দ নিলেও কোন কাজ না করেই সব টাকা আত্মসাৎ করে। অথবা লোকদেখানো কিছু কাজ করে যা সামান্য বৃষ্টিতেই ধয়েমুছে চলে যায়। এ অবস্থায় গ্রামীণ রাস্তাঘাট সংস্কারে সমন্বয় করে কাজের তদারকি বাড়নোসহ প্রকল্প এলাকার সাধারণ মানুষকে কাজে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার দাবি জানান।
কক্সবাজার সদর উপজেলার ঘাটকুলিয়া পাড়ার প্রবীণ মুরব্বি হাজী আলী আকবর বলেন, আমার বয়স এখন ৭০ এর কাছাকাছি। আমি এলাকার অনেক উন্নয়ন দেখেছি। তবে আমাদের ঘাটকুলিয়া পাড়া থেকে রাবারডেম যাওয়ার রাস্তাটি আজ পর্যন্ত একটি ইটও বসেনি। আমরা সারাজীবন কাদামাটি দিয়ে চলাচল করছি। বিশেষ করে বর্ষা আসলে একেবারে ঘর থেকে বের হওয়া মুশকিল হয়ে পড়ে। কিছুদিন আগে আমার এক প্রতিবেশী মেয়ের সন্তানসম্ভবা হওয়ার পর রাস্তার কাদামাটির কারণে রিক্সা না আসায় অনেক কষ্ট করে কোলে করে তাকে নিয়ে যেতে হয়েছে। তিনি বলেন, আমি শুনেছি এই রাস্তাটি সংস্কার করার জন্য কয়েকবার নাকি বরাদ্দ হয়েছে। তবে কোন বারেও কাজ হয় নি।
একই ইউনিয়নের ছনখোলা এলাকার অবসরপ্রাপ্ত বিজিবি সৈনিক মোহাম্মদ আলম বলেন, সত্যি কথা বলতে আমাদের এলাকার প্রধান রাস্তাতে কিছু জায়গায় ইট আছে বেশির জায়গায় নাই। আর বাকি উপ-সড়কগুলোতে এখনো কাদা মাটির। প্রায় সময় শুনি এবার উপজেলা বা ইউনিয়ন পরিষদ থেকে রাস্তা সংস্কারের জন্য ক্ষুদ্র বাজেট দেওয়া হয়েছে সেসব বাজেট নেয় স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী লোকজন। তারা সেগুলো ভুয়া বিল ভাউচার করে উপজেলা পরিষদের পিআই ও অফিস খাদ্য অফিস ম্যানেজ করে টাকা ভাগভাটোয়ারা করে ফেলে। কাজের কাজ কিছুই হয় না। না হলে দেশের এমন উন্নয়নের ঢলের মধ্যে গ্রামের কোন রাস্তাঘাট কাঁচা থাকার কথা নয়।
তিনি বলেন, বিশেষ করে টিআর, কাবিখা নিয়ে যেসব প্রকল্প হয় তা সাধারণ মানুষের কোন কাজে আসে না। শুধু কিছু বিশেষ ব্যক্তিরা লাভবান হয়।
রামু উপজেলার গর্জনিয়া ইউনিয়নের মাদ্রাসা অধ্যক্ষ মৌলানা ফরিদুল ইসলাম বলেন, আমাদের ইউনিযনের রাস্তাঘাট বা গ্রামীণ অবকাঠামো যে পরিমাণ উন্নয়ন হওয়ার কথা তা আসলেই হয় নি। এখনো গ্রামের বেশির ভাগ সড়ক যানবাহন চলাচলের অনুপোযুক্ত। আমি যতটুকু জানি এসব রাস্তাঘাট বা গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কারের জন্য সম্মানিত সংসদ সদস্যদের বেশকিছু সুনির্দিষ্ট প্রকল্প আছে। তার উপর উপজেলা পরিষদ ইউনিয়ন পরিষদ থেকে নেওয়া প্রকল্প টিআর, কাবিখা প্রকল্প আছে। তবুও কেন এসব রাস্তা-ঘাটের এ অবস্থা সেটা আমরাও বুঝতে পারি না। তিনি বলেন, আবার ঢালাওভাবে সবাই কিন্তু এক রকম নয়। অনেক সময় ভাল কাজও হয়।
রামু উপজেলার বশিরুল ইসলাম বলেন, আমার জানা মতে যদি ঠিকমত প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে আমাদের গ্রামীণ জনপদ বা অবকাঠামো উন্নত বিশ্বের চেয়ে ভাল হতো। এখানে রাস্তা করলে তা খুব বেশি হলে এক বছর টিকে যেন মিয়াদি রাস্তা করে। সামান্য বৃষ্টি দিলেই সব মাটি বালি আলাদা হয়ে যায়। মোটকথা সঠিক এবং টেকসই উন্নয়ন হয়ে না বলেই আমরা এই অবস্থায় আছি। এই পরিস্থিতি বদলানো দরকার।
চকরিয়া উপজেলার আইনজীবী এড, লুৎফুল কবির বলেন, আমাদের রাজনৈতিক সামাজিক এবং পেশাগত কাজে বেশির ভাগ ইউনিয়নে যাওয়া আসা হয়। আসলেই গ্রামীণ জনপদের অবস্থা খুবই নাজুক। আর স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর যে কাজ করে তা খুবই নি¤œমানের। যার ফলে একটু বৃষ্টিতেই সব ধুয়েমুছে চলে যায়। কারণ এলজিইডি অফিসের দুর্নীতির টাকা দিতেই ঠিকাদারদের সব চলে যায়। আর যেহেতু আগে টাকা নিয়ে ফেলে তাই কাজের মানও সে রকম হয়। আর আমার কাছে এমন প্রমাণ আছে একটি রাস্তার মাটি দিয়ে ইট বিছানোর কাজের জন্য সংসদ সদস্য, উপজেলা পরিষদ, এবং ইউনিয়ন পরিষদ থেকে টিআর প্রকল্প নিয়েছে তাও সে রাস্তায় মাটি দেয়নি। কারণ যারা প্রকল্প নিয়েছে তারা সবাই রাজনৈতিক নেতাকর্মী। এভাবেই বেশির ভাগ গ্রামীণ রাস্তাঘাট সংস্কারের টাকা প্রতিনিয়ত অপচয় হচ্ছে।
এ ব্যপারে চকরিয়া উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান রেজাউল করিম বলেন, আমি একটি কথার সাথে একমত কেন্দ্র থেকে প্রেরিত বাজেট গ্রামের রাস্তায় আসতে আসতে তা আর কিছুই বাকি থাকে না। যদি ঠিকমত প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে গ্রামীণ অবকাঠামোর চিত্র ভিন্ন হতো। আমার মতে প্রকল্প এলাকার সাধারণ মানুষকে সাথে নিয়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন করা দরকার এবং সব প্রতিষ্ঠানে মাঝে একটি সমন্বয় থাকা দরকার।
কক্সবাজারের বিশিষ্ট আইনজীবী সাবেক পিপি এড. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর বলেন, মূলত আমরা দৃশ্যমান দুর্নীতি দেখি। অফিসের ভেতরের দুর্নীতি আমরা চোখে দেখিনা বলে সেগুলো সংবাদে আসে না। উন্নয়ন সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যাপারে সাধারণ মানুষের কমবেশি ধারণা আছে যে তাদের কমিশন বাদে কাজ করার নমুনা। তবে আমি মনে করি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঠিক তদারকি সমন্বয়হীনতা। আর রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দেওয়া প্রকল্পের কারণে বেশির ভাগ টাকা অপচয় হচ্ছে।

পাঠকের মতামত: