ঢাকা,শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪

কক্সবাজারে বিসিক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ

durnitiশাহজাহান চৌধুরী শাহীন, নিজস্ব প্রতিনিধি, কক্সবাজার, ৩০ আগষ্ট ॥

বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুঠির শিল্প কর্পোরেশন (বিসিক) কক্সবাজার সদরের ইসলামপুর শিল্প এলাকার মনিটরিং অফিসার সঞ্জয় বড়–য়ার বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। অস্তিত্ববিহীন বেশ কয়েকটি লবণ কারখানাকে ‘ভূয়া প্রত্যয়নপত্র’ ইস্যু করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। বিদেশ থেকে লবণ আমদানী করার জন্য ইতোমধ্যে ইসলামপুরের অন্তত ১০টি অস্তিত্বহীন লবণ কারখানার মালিক আবেদন করেছে।

জানা গেছে, দেশে প্রচুর পরিমাণ লবণ উৎপাদন হওয়ার পরেও একটি সিন্ডিকেট ঘাটতি দেখিয়ে বিদেশ থেকে লবণ আমদানীর জন্য তৎপর হয়ে উঠে। এমনকি চটক্রটি কৌশলে লবণ আমদানীর জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে আবেদনও করেছেন। এর মধ্যে অস্তিত্ব নেই এমন কিছু লবণ কারখানার মালিকও আবেদন করেন। বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুঠির শিল্প কর্পোরেশন (বিসিক) কক্সবাজার সদরের ইসলামপুর শিল্প এলাকার মনিটরিং অফিসার সঞ্জয় বড়–য়া উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে সম্পূর্ণ অন্ধকারে রেখে ওই সব অস্তিত্বহীন লবণ কারখানা মালিককে ‘ভূয়া প্রত্যয়নপত্র’ ইস্যু করেন। প্রতি প্রত্যয়নপত্র বাবদ উৎকোচ হিসাবে নেও য়া হয়েছে দশ হাজার টাকা থেকে ৫০ হাজার টাকা। বিসিক কর্মকর্তার এমন জালিয়াতি বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলেছেন সংশ্লিষ্টদের। এমনকি ‘ভূয়া’ প্রত্যয়নপত্র’ দিয়ে কিছু ব্যক্তিকে লবণ আমদানির আবেদন করার সুযোগ সৃষ্টি করে দেয়ায় বিসিককে দুষছেন প্রকৃত লবণ কারখানা মালিকরা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কক্সবাজার সদর উপজেলার বিসিক শিল্প নগরী খ্যাত ইসলামপুর গোমাতলী ঠিকানা উল্লেখ করে ‘ন্যাশনাল আয়োডাইজ সল্ট’ নামের একটি অস্তিত্বহীন লবণ কারখানাকে প্রত্যয়ন দিয়েছেন বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুঠিরশিল্প করপোরেশন (বিসিক)’র ইসলামপুর মনিটরিং অফিসার সঞ্জয় বড়–য়া। এই কারখানা মালিক দেখানো হয়েছে আবদুল্লাহ খান নামের এক বিএনপি নেতাকে। অথচ ওই স্থানে ‘ন্যাশনাল আয়োডাইজ সল্ট’ নামে কোন লবণ কারখানার অস্তিত্ব নেই বলে বেশ কয়েকজন প্রকৃত লবণকারখানা মালিক জানিয়েছেন।

আরো জানা গেছে, একইভাবে সদরের ইসলামপুর লবণশিল্প এলাকায় রাইসা সল্ট, মাজেদা সল্ট, গোমাতলী এলাকায় সাগর সল্ট, মহেশখালী মাতারবাড়ী এলাকায় আলিফ সল্ট, কুতুবজুম এলাকায় সাগরিকা সল্ট, চকরিয়া উপজেলার ডুলাহাজারা এলাকায় চৌধুরী সল্ট, বদরখালীর বিলকিস সল্ট নামের অস্তিত্বহীন লবণ কারখানার প্রত্যয়নপত্র ইস্যু করা হয়েছে। অস্তিত্বহীন লবণ কারখানার মালিক হিসেবে যাদের দেখানো হয়েছে, তারা সকলেই এলাকার প্রভাবশালী ব্যক্তি বলে জানিয়েছেন প্রকৃত কারখানা মালিকরা। ওইসব এলাকায় এধরনের কোন লবণমিল নেই। তবে কয়েকটি থাকলেও তা অস্তিত্বহীন এবং সচল নেই। অথচ এসব মিলকে সম্পূর্ণ চালু আছে উল্লেখ করা হয়েছে বিসিকের প্রত্যয়নপত্রে। মূলতঃ সরকারের লবণ আমদানির অনুমতির খবরে সুবিধাভোগী চক্রটি বিসিক কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে প্রত্যয়নপত্র হাতিয়ে নিয়েছেন।

অভিযুক্ত বিসিক কর্মকর্তা সঞ্জয় বড়–য়া বলেন, ‘এসব মিলের নামে আগে নিবন্ধন ছিল। তারা নতুন করে আবেদন করেছে। ‘আবেদিত’ হিসেবে প্রত্যয়নপত্র দেয়া হয়েছে। তবে, টাকা নেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেন তিনি।

বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুঠিরশিল্প কর্পোরেশন (বিসিক)’র উপ-মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ আবসার উদ্দিনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমাকে না জানিয়ে ওই সব প্রত্যয়নপত্র দেয়া হয়েছে। বিষয়টি তিনি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছেন বলেও জানান তিনি।

বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুঠিরশিল্প কর্পোরেশন (বিসিক) কক্সবাজার কার্যালয়ের মতে, উৎপাদিত লবণ পরিশোধন ও বাজারজাতকরণের লক্ষে দেশের বিভিন্ন স্থানে গড়ে উঠেছে ৩৬০ টির মতো লবণ মিল-কারখানা। এসব মিলের মধ্যে শুধু কক্সবাজার সদরের বিসিক শিল্প নগরী ইসলামপুর কেন্দ্রিক ৪০ মিলসহ জেলায় ছোট বড় মিলে গড়ে উঠেছে অন্তত ৫০ টি। এসব মিলের মধ্যে লাইসেন্স নবায়ন করেছে ৩৩টি এবং আবেদিত আছে ৫টি কারখানা।

——————–

পাঠকের মতামত: