ঢাকা,শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪

কক্সবাজারে টেলিমেডিসিন সেবাবঞ্চিত জেলাবাসী

medicalঅনলাইন ডেস্ক :::

স্বাস্থ্যখাতে ই-সেবা বা সরকারি টেলিমেডিসিন সুবিধা পাচ্ছে না কক্সবাজারের সাধারণ জনগণ। এ অবস্থায় স্বাস্থ্যখাতে নেয়া বিভিন্ন সুবিধাবঞ্চিত হচ্ছে গ্রামাঞ্চলের মানুষগুলো। তাছাড়া ডিজিটাল পদ্ধতির এ সেবা সম্পর্কেও অবগত নয় জেলার প্রান্তিক জনগোষ্ঠী।
জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তাদের উদাসীনতায় এ সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে তারা। এতে স্বাস্থ্যখাতে নেয়া সরকারের উদ্যোগ ভেস্তে যাচ্ছে বলে মনে করেন সচেতন মহল। এ সেবা চালু হলে একদিকে যেমন গরিব দুস্থ মানুষের ব্যয় কমে আসবে, তেমনি চিকিৎসক হয়রানি থেকে রক্ষা পাবে। তবে টেলিমেডিসিনের ব্যাপারে কোনো নির্দেশনা নেই বলে জানিয়েছেন কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক ডা. আখতারুল ইসলাম।
তিনি বলেন, সরকারি সচেতনতামূলক অনুষ্ঠানগুলোতে কর্তৃপক্ষের নির্দেশনায় আমরা স্কাইপের সামনে একজন ডাক্তার বসিয়ে বিভিন্ন রোগের উপদেশ দিয়ে থাকি। তিনি বলেন, টেলিমেডিসিন ব্যবস্থা চালু রাখতে হলে হাসপাতালে দুই শিফ্‌ট এ দু’জন ডাক্তার রাখা প্রয়োজন। কিন্তু এমনিতে আমাদের ডাক্তারের সংকট রয়েছে সেখানে এ ব্যবস্থা চালু করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে হাসপাতালের ইমার্জেন্সিতে একটি মোবাইল ফোন রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, এ ফোনের মাধ্যমে রোগীদের ছোট ছোট উপদেশ দেয়া হয়।  কিন্তু এ ব্যবস্থায় রোগীদের তেমন কোনো সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না বলে জানান তিনি।
হাসপাতাল তত্ত্বাবধায়কের বক্তব্যকে নাকচ করে দিয়ে সিভিল সার্জন পুচনু বলেছেন, জেলার প্রতিটি হাসপাতালে টেলিমেডিসিন ব্যবস্থা চালু করা রয়েছে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সাহায্যে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে আমরা রোগীদের সেবা দিয়ে যাচ্ছি। তিনি বলেন, টেলিমেডিসিন সেবা নিয়ে জনগণকে সচেতন করার লক্ষ্যে কর্তৃপক্ষ কাজ করছে।
জানা যায়, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের ন্যায় স্বাস্থ্যখাতেও ই-সেবা চালু করার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। তারই আলোকে গরিব দুস্থ মানুষের কাছে স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে সরকারি স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে টেলিমেডিসন সেবা ব্যবস্থার চালু করা হয়েছে। মূলত স্বাস্থ্য অধিদপ্তর টেলিমেডিসিন সেবা দেয়ার এ সকল উদ্যোগের সঙ্গে যুক্ত থাকলেও সমপ্রতি বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগও এখানে সম্পৃক্ত হয়েছে। মোবাইল ফোনের মাধ্যমে বা ভিডিও কনফারেন্সের সাহায্যে জেলা বা উপজেলার সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে এ চিকিৎসা সেবা দেয়া হয়। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ জেলা কক্সবাজারের মানুষের কাছে এখনো এ সেবা পৌঁছেনি। সরকারের এ সেবা থেকে বঞ্চিত হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সাধারণ মানুষ। তাদের মতে এ সেবা চালু হলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দেখানোর জন্য রোগীর সময় ও অর্থব্যয় দু’টিই কমে আসবে। তবে সাধরণ মানুষ জানে না কিভাবে এ সেবা নিতে হবে। এমনকি হাসপাতালের অনেক কর্মীই জানে না এ সেবার পদ্ধতি কি।
জেলা সদর হাসপাতালের কর্মরত চিকিৎসক জানিয়েছেন, টেলিমেডিসিন সেবা বলতে মূলত মোবাইল ফোন বা ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমের সেবা। অর্থাৎ প্রযুক্তি ব্যবহার করে স্বাস্থ্য সেবাকে জনগণের কাছে পৌঁছে দেয়া। সরকার দেশকে ডিজিটালের আওতায় নিয়ে আসার জন্য স্বাস্থ্যখাতে টেলিমেডিসিন সেবা ব্যবস্থার চালু করেছে।
এদিকে কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে সেবা নিতে আসা সাধারণ রোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মোবাইলে সেবার নেয়ার বিষয়টি জানেনা তারা। তাছাড়া ইমার্জেন্সিতে যে নম্বার দেয়া হয়েছে তাও জানেনা তারা। তাদের দাবি এ সেবা চালু হলে ডাক্তারদের রোগীর সংখ্যা কমে আসার ভয়ে নম্বরটি সেবা প্রার্থীদের কাছে দেয়া হয় না।
উখিয়ার মনখালী গ্রামের রোজিনা আক্তার নামে এক মহিলা জেলা সদর হাসপাতালে এই প্রতিবেদককে জানান, মোবাইল ফোনে যে সেবা নেয়া যায় সেটি প্রথমবার শুনছি। এটি সম্পর্কে কেউ আমাদের অবগত করেনি। তিনি বলেন, এ সেবা সম্পর্কে অবগত করা হলে আমাদের অনেক ব্যয় কমে আসতো।
শহরের ঘোনার পাড়া এলাকার রিকশাচালক আবদুল গফুর ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সরকারের সুযোগ সুবিধা আমাদের মতো গরিব মানুষের নয়, সবকিছু বড়লোকের জন্য।
মহেশখালী থেকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা নিতে আসা অন্তঃসত্ত্বা মহিলার স্বামী একরামুল হক জানান, শুধু ডাক্তারের পরামর্শ নিতে মহেশখালী থেকে কক্সবাজারে এসেছি। এ সেবা সম্পর্কে অবগত করা হলে ফোনের মাধ্যমে সেবা নিতে পারতাম। এতে আমার অনেক টাকাও বাঁচতো তেমনি যাতায়াতের ভোগান্তিও পোহাতে হতো না।
তথ্য প্রযুুক্তির এ যুগে ২৪ ঘণ্টা সাধারণ মানুষকে মোবাইল ফোনের মাধমে জরুরি সেবা বা পরামর্শ দেয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সিভিল সার্জন ডা. পুঁচনু। সরকার স্বাস্থ্যখাতে সহস্রাব্দ লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনার এটি একটি অংশ বলে দাবি করেছেন তিনি।
জেলা সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার সুলতান আহমদ সিরাজি বলেন, সরকারি সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি করলে হাসপাতালে এ সেবা চালু করা হবে। ইমার্জেন্সিতে যে মোবাইল ফোন রয়েছে তা দিয়ে আপাতত সেবা দেয়া হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, এখন মাত্র ২০ থেকে ৩০টি ফোন আসে। জনগণ সচেতন হলে আশা করি ভবিষ্যতে আরো ফোন পাব।
উল্লেখ্য, গত ১২ই জানুয়ারি জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেয়ার সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বর্তমান সরকারের আমলে ইতিমধ্যে দেশের ৪১৮টি উপজেলায় মোবাইল ফোনের মাধ্যমে চিকিৎসা সেবা দেয়া হচ্ছে। সরকারের পরিকল্পনা রয়েছে প্রযুক্তি-ভিত্তিক স্বাস্থ্যসেবা কাঠামোকে আরো সমপ্রসারিত করার?

পাঠকের মতামত: