ঢাকা,সোমবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৪

কক্সবাজার বেতারে অনিয়ম, শিল্পীদের স্বাক্ষর জাল করে টাকা আত্মসাতের চেষ্টা

oniyom durnitiকক্সবাজার প্রতিনিধি :::

বাংলাদেশ বেতার কক্সবাজারের এফএম সম্প্রচার জনপ্রিয় করা ও সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড তুলে ধরতে কক্সবাজার পাবলিক লাইব্রেরি মাঠে সম্প্রতি বহিরাঙ্গন অনুষ্ঠান ‘আলোকিত বাংলাদেশ’ করা হয়। স্থানীয় শিল্প সাহিত্য ও সংস্কৃতি চর্চাকে বেগবান করতে একইভাবে রামু, চকরিয়া ও মহেশখালী উপজেলায়ও চলে এ অনুষ্ঠান। কিন্তু সরকারের এ মহৎ উদ্যোগের বিপরীতে দুর্নীতির মহোৎসব করছেন কক্সবাজার বেতারের আঞ্চলিক পরিচালক মো. হাবিবুর রহমান। হাতেগোনা কয়েকজন শিল্পীর অংশগ্রহণে দায়সারাভাবে দুয়েকটি অনুষ্ঠান করে শিল্পীদের নামে-বেনামে কন্ট্রাক্ট বানিয়ে এসব অনুষ্ঠানের অনুকূলে প্রায় সাড়ে ১৮ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন তিনি। তার এসব অনিয়মে প্রধান সহযোগী হিসেবে রয়েছেন বেতারের সঙ্গীত সংকলক মোসলেহ উদ্দিন। ২০০৪ সালে বেতার প্রতিষ্ঠার শুরু থেকেই তিনি এ স্টেশনে কর্মরত। তাই সব অপকর্ম সংঘটনের পুরোধা হয়ে আরডির সহকারী হিসেবেই তিনি কাজ করছেন বলে তথ্য পাওয়া যায়। সংশ্লিষ্ট শিল্পীরা বলছেন, বাস্তবে চারটি অনুষ্ঠানে তিন লাখ টাকার অধিক খরচ করা হয়নি। অনুষ্ঠানে অংশ নেয়া শিল্পীদের বিপরীতে করা তালিকার অংক অনুযায়ী সম্মানীও দেয়া হচ্ছে না। জেলা হিসাবরক্ষণ অফিসে অনুমোদনের জন্য পাঠানো বিলের তাালিকায় দেখা গেছে, পাবলিক লাইব্রেরি মাঠে ‘আলোকিত বাংলাদেশ’ শীর্ষক বহিরাঙ্গন অনুষ্ঠানে ৬৪ জন একক শিল্পীর পাশাপাশি দলগত পরিবেশনাও দেখানো হয়। ‘মলকা বানুর বিয়ের হঁলা’র শিল্পী সম্মানী, পোশাক ও প্রসাধনী সরবরাহ, যাতায়াত বাবদ ৩০ হাজার, একইভাবে ‘পরিবানুর বিয়ের হঁলা’ বাবদ ২৭ হাজার, ‘রাখাইন প্রজাপতি নৃত্যে’র জন্য ৩১ হাজার ৭৫০ এবং ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ শীর্ষক নাটিকার জন্য ৩১ হাজার ৭৫০ টাকাসহ এ চারটি পরিবেশনার জন্য মোট ১ লাখ ২০ হাজার ৫০০ টাকা ব্যয় দেখানো হয়। একইভাবে চার উপজেলায় শুধু এসব দলীয় পরিবেশনার জন্য ৪ লাখ ৮২ হাজার টাকা ব্যয় দেখানো হলেও শুধু রামুতে মলকাবানুর বিয়ের হঁলা ছাড়া আর কোনো অনুষ্ঠানই বাস্তবে হয়নি বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট শিল্পীরা। এছাড়াও, কক্সবাজার, রামু, চকরিয়া ও মহেশখালীতে চারটি অনুষ্ঠানে একক শিল্পীর তালিকায় (প্রতিটিতে ৬৪ জন করে) শিল্পীর সম্মানী বাবদ ৭ লাখ ৫২ হাজার ৪৫০ টাকা ব্যয় দেখানো হলেও বাস্তবে ১৫ জনের বেশি একক শিল্পী কোনো অনুষ্ঠানেই অংশ নেননি। বাকিদের সই নকল করে ভুয়া কন্ট্রাক্ট দেখানো হয়েছে। বিলের জন্য তৈরি তালিকায় এমন নামও আছে বেতারে যে নামের কোনো অস্তিত্বই নেই। প্রতিটি অনুষ্ঠানে যেসব শিল্পীর নামে বিল করা হয়েছে তাদের অনেকেই এসব অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেননি। বিলের তালিকায় নাম থাকা কক্সবাজার বেতারের নাট্য প্রযোজক স্বপন ভট্টাচার্য্য বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, নাটক পরিবেশন তো দূরের কথা বহিরাঙ্গনের কোনো অনুষ্ঠানেই আমি এবং আমার স্ত্রীর (বনানী চক্রবর্তী) অংশগ্রহণ ছিল না। শুনে অবাক হলাম রামু, চকরিয়া ও মহেশখালীতে তিনটি অনুষ্ঠানেই আমাদের অংশগ্রহণ দেখিয়ে আমাদের নামে মোটা অংকের বিল বানানো হয়েছে। নিশ্চয়ই আমাদের স্বাক্ষর নকল করে এ কাজটি করা হয়েছে। বেতারের মতো প্রতিষ্ঠানে এ রকম জগন্য জালিয়াতি মোটেও কাম্য নয়। এমনটি হয়ে থাকলে আমি আইনের আশ্রয় নেব। অভিযোগের বিষয়ে জানতে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে কক্সবাজার বেতারের আঞ্চলিক পরিচালক (ভারপাপ্ত) মো. হাবিবুর রহমান অনিয়ম ও আত্মসাতের অভিযোগ সঠিক নয় দাবি করে বলেন, সব অনুষ্ঠানের বাজেট এক। কিন্তু কক্সবাজার সদরের খরচে মহেশখালী-চকরিয়ায় অনুষ্ঠান করা সম্ভব হয় না। তাই সমন্বয় করতেই অনেক কিছু করতে হয়। বিল পাস হয়ে না আসায় অনেকের সম্মানী এখনও দেয়া সম্ভব হয়নি। এপ্রিল-মে-জুন তিন মাসের বিল একসঙ্গে জমা দিয়েছি। তাই কোন মাসে কত টাকা এবং শিল্পী কতজন তা এ মুহূর্তে মনে পড়ছে না। অনুষ্ঠানে অংশ না নিয়েও শিল্পীদের নামে মোটা অংকের বিল করার বিষয়ে জানতে চাইলে কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি তিনি। এসব নিয়ে সংবাদ পরিবেশন না করতে অনুরোধ করে প্রতিবেদকের সঙ্গে বসে কথা বলার প্রস্তাব দেন আরডি।

পাঠকের মতামত: