ঢাকা,মঙ্গলবার, ১২ নভেম্বর ২০২৪

কক্সবাজার ও আশপাশে ছড়িয়ে পড়ছে রোহিঙ্গারা

rohinga-bostyঅনলাইন ডেস্ক :::

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের নাইক্ষাপ্রুর জমিলা খাতুন, খেয়ারিপ্রংয়ের খোরশেদ আলম ও পোয়াখালীর রহিমউদ্দিন কক্সবাজারের কুতুপালংয়ের পাহাড়ে বন সাফ করে তুলেছেন ছাপরাঘর। স্থানীয় প্রভাবশালী ফরিদ আহমদের অনুমতি নিয়ে নিজেদের টাকায় ঘর তুলেছেন তাঁরা। এরপরও প্রতিটি ঘরের জন্য মাসে ৩শ  টাকা দিতে হবে ফরিদকে।
তাঁদের সঙ্গে আলাপকালে পাওয়া গেল এই তথ্য। গতকাল রোববার ও গত শনিবার উখিয়ার কুতুপালংয়ে অনিবন্ধিত রোহিঙ্গা শিবিরের পাশের পাহাড়ে গিয়ে অন্তত ৫০ জন রোহিঙ্গার সঙ্গে কথা বলেও মিলল জমিলা, খোরশেদ ও রহিমের বক্তব্যের সত্যতা। বন বিভাগের কর্মকর্তার ভাষ্যও একই রকম।
গত ৯ অক্টোবর রাখাইনে সংখ্যালঘু মুসলিম জনগোষ্ঠী রোহিঙ্গাদের ওপর দেশটির সশস্ত্র বাহিনীর অভিযান শুরু হলে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের একটি বড় অংশ আশ্রয় নিয়েছে কুতুপালংয়ে অনিবন্ধিত শিবিরের পাশে বন বিভাগের পাহাড়ি এলাকায়। শিবিরের আশপাশে রোহিঙ্গা ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গতকাল পর্যন্ত অন্তত সাত হাজার পরিবারের প্রায় ৩০ হাজার মানুষ এখানে ঠাঁই নিয়েছে।
কক্সবাজার জেলা দক্ষিণ বন বিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক সারওয়ার আলম গতকাল দুপুরে বলেন, কুতুপালংয়ের শিবিরের পাহাড়ে বনের পরিমাণ ৫০ হেক্টর। স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় নতুন করে আসা রোহিঙ্গারা প্রায় ২৫ হেক্টর জমিতে ঘর তুলেছে। ঘরের জন্য রোহিঙ্গারা স্থানীয় লোকজনকে মাসিক হারে টাকা দিতে বাধ্য হচ্ছে।
সরকারের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত নতুন করে প্রায় ৫০ হাজার রোহিঙ্গার অনুপ্রবেশের কথা বলা হচ্ছে। গত চার দিন টেকনাফ, উখিয়া ঘুরে এবং কক্সবাজারে সংশ্লিষ্ট দেশি-বিদেশি কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নতুন আসা রোহিঙ্গারা কক্সবাজারের বিভিন্ন এলাকা তো বটেই, চট্টগ্রাম ও ময়মনসিংহেও ছড়িয়ে পড়েছে। বিশেষ করে ইনানী ও হিমছড়ি, টেকনাফের বাহারছড়া, জেলা সদরের কলাতলী ও সৈকতপাড়া, ঈদগাহ, নাজিরেরটেকের শুঁটকিপল্লিতে গিয়ে বসবাস শুরু করেছে। মহেশখালী, দোহাজারী সেতুর আশপাশ, চট্টগ্রাম নগরের মুরাদপুর ও বহদ্দারহাট এবং ময়মনসিংহেও গেছে নতুন আসা রোহিঙ্গারা।
গত কয়েক দিনে টেকনাফের লেদায় মিয়ানমারের অনিবন্ধিত নাগরিকদের অস্থায়ী শিবিরের পাশাপাশি কুতুপালংয়ের শিবির, পাহাড়ের নতুন বসতি এবং কক্সবাজার শহরে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলে জীবিকার খোঁজে তাদের ছড়িয়ে পড়ার কথা জানা গেছে। তারা বলছে, বাংলাদেশে এসে শুরুতে শিবিরে ঠাঁই হচ্ছে। এরপর শিবিরের এবাড়ি-ওবাড়ি থেকে মুঠো চাল নিয়ে কোনোমতে কয়েকটি দিন চলে। কিন্তু ত্রাণসহ মানবিক সাহায্য সামগ্রীতে ন্যূনতম প্রয়োজন না মেটায় একটি অংশ শিবিরের বাইরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিচ্ছে।
রোহিঙ্গাদের ছড়িয়ে পড়ার বিষয়টি নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সরকারি কর্মকর্তারা স্বীকার করেছেন। তাঁদের সঙ্গে কথা বলে স্পষ্ট হয়েছে, নতুন করে রোহিঙ্গাদের ঢোকা নিয়ে মিয়ানমারের সামনে ভবিষ্যতে কোনো বক্তব্য তুলে ধরতে গেলে জোরালো প্রামাণিক উপাদান তুলে ধরার বিকল্প নেই। তাই নতুন যারা এসেছে, তাদের টেকনাফের লেদা ও উখিয়ার কুতুপালংয়ের শিবিরের আশপাশের এলাকাগুলোতে রাখাটা সবচেয়ে কার্যকর। তা না হলে এরা সারা দেশে ছড়িয়ে পড়বে। ইতিমধ্যে এরা ছড়িয়ে পড়ছে এবং এটি অব্যাহত থাকলে তা দেশের জন্য নতুন সমস্যা তৈরি করতে পারে।
জানতে চাইলে কক্সবাজার জেলা নাগরিক সমিতির সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী বলেন, ‘নতুন আসা রোহিঙ্গাদের একটি অংশ টেকনাফ ও উখিয়ার বাইরে ছড়িয়ে পড়েছে। আমরা দীর্ঘদিন থেকে রোহিঙ্গাদের একটি নির্দিষ্ট জায়গায় রাখার দাবি জানাচ্ছি। কারণ, এদের সঙ্গে অতীতে বিভিন্ন উগ্রপন্থী গোষ্ঠীর জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। কাজেই নতুন আসা রোহিঙ্গাদের ছড়িয়ে পড়াটা এখানকার নিরাপত্তার জন্য নতুন করে ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।’
আর্থসামাজিক কারণে রোহিঙ্গাদের আসা নিয়ে স্থানীয় লোকজনের মধ্যে ক্ষোভ রয়েছে। কারণ, রোহিঙ্গারা কর্মসংস্থানের বাজারে অস্থিতিশীলতা তৈরি করে বলে স্থানীয় লোকজন মনে করেন।
নতুন করে রোহিঙ্গাদের প্রবেশ শুরুর পর থেকে সরকারের ভূমিকা নিয়ে স্থানীয় পর্যায়ে প্রশ্ন রয়েছে। স্থানীয় লোকজন মনে করেন, বিশেষ করে প্রবেশ বন্ধের জন্য মিয়ানমারকে চাপ দেওয়া এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ করে দেওয়ার কাজটি সরকার করেনি। বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিদের পরিস্থিতি দেখার সুযোগ করে দিলে আন্তর্জাতিক জনমত আরও জোরদার হতো।
সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) কক্সবাজারের সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুর রহমান বলেন, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের কাজ নতুন করে শুরুর জন্য মিয়ানমারকে সরকার জোর দিয়ে বলছে না। তেমনি এবার রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশের পর তা বন্ধের জন্য সরকারের সোচ্চার হওয়া উচিত ছিল। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, সরকার এ নিয়ে তেমন উচ্চবাচ্য করছে না।

পাঠকের মতামত: