ঢাকা,সোমবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৪

উন্মুক্ত হল দেশের প্রথম ইকো অ্যাডভেঞ্চার বন্যপ্রাণী দেখা রোমাঞ্চকর বনাঞ্চল ভ্রমণ

নিজস্ব প্রতিবেদক, কক্সবাজার ::

দেশে প্রথম ইকো অ্যাডভেঞ্চার পার্ক স্থাপন করা হয়েছে কক্সবাজারের ফাঁসিয়াখালী বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য ও মেধাকচ্ছপিয়া জাতীয় উদ্যানে। নীরবে নিরাপত্তায় বন্যপ্রাণী দেখার পাশাপাশি ইকো অ্যাডভেঞ্চারের নানা ব্যতিক্রম আইটেম রয়েছে এথানে।

১৭০০ হেক্টর বনভূমিতে গড়ে ওঠা দেশের প্রথম ইকো অ্যাডভেঞ্চার সম্প্রতি উন্মুক্ত করা হয়েছে।

উন্মুক্ত হওয়ার পর পর রোমাঞ্চকর ভ্রমণপ্রিয় দেশের মানুষ ছুটে আসছে এই পার্কে। এই পার্কে ভ্রমণের সাথে সাথে বন ও বন্যপ্রাণী বিষয়ে শিক্ষা অর্জন করছে দর্শনার্থীরা।

গত ২৪ জানুয়ারি পার্কটির উদ্বোধন করেন পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব আবদুল্লাহ আল মোহসীন চৌধুরী। এ সময় তিনি বলেন, ‘এই ইকো অ্যাডভেঞ্চার পার্ক পর্যটনে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে। সারা পৃথিবীতে প্রকৃতি পর্যটকদের আকর্ষণ করে। প্রচার প্রসার হলে প্রকৃতি পর্যটন সম্প্রসারণে এটি হবে মাইলফলক।’

আলোচনা সভা, প্রতিযোগিতা আর পুরস্কার বিতরণসহ নানা আয়োজনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন উপ-প্রধান বন সংরক্ষক ও ক্রেল প্রকল্পের পিডি আবদুল লতিফ মিয়া, চট্টগ্রামের বন সংরক্ষক ড. জগলুল হোসাইন, ক্রেল ডিসিওপি আবু মোস্তফা কামাল, কক্সবাজারের দক্ষিণ বন বিভাগীয় কর্মকর্তা মো. আলী কবীর, উত্তর বন বিভাগীয় বন কর্মকর্তা হক মাহবুব মোর্শেদ, চকরিয়ার ইউএনও মোহাম্মদ শিবলী নোমান।

নেকম-ক্রেল প্রকল্পের চকরিয়া সাইট অফিসার মো. আবদুল কাইয়ুমের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন নেকম-ক্রেল প্রকল্পের সমন্বয়কারী আবদুল মান্নান, ক্রেল কমিউনিকেশন ম্যানেজার ওবায়দুল ফাতাহ তানভীর, এসিল্যান্ড কে এমডি ইকতিয়ার উদ্দিন, এসিএফ বেলায়েত হোসেন, পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক সাইফুল আশ্রাফ ও মেধাকচ্ছপিয়া ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি আবুল হোসেন।

ইকো অ্যাডভেঞ্চারে দেখা মেলবে মেছো বাঘ, হাতির পাল, বানর, উল্টো লেজ বানর, বনবিড়াল, খাটাশসহ শত প্রকার বন্যপ্রাণী, বনমোরগ. শুশুক, ঈগল, সবুজ ঠোঁট, ফিংগে, চিল, শ্যামাসহ দেড়শতাধিক প্রজাতির পাখি, গুই সাপ, হ্যাজা সাপসহ নানা প্রজাতির সাপ, নানা বিরল প্রজাতির বন্যপ্রাণী। তাও আবার দর্শনার্থীদের নিরাপত্তায় রেখে। তবে শর্ত হচ্ছে দর্শকদের নীরবতা পালন।

শুধু তাই নয় বন ভ্রমণকারীদের জন্য রয়েছে ইকো অ্যাডভেঞ্চার। এর মধ্যে অনেক নতুন অ্যাডভেঞ্চার রয়েছে যা অত্যন্ত রোমাঞ্চকর। একদিকে বনের ভিতর বন্যপ্রাণী দেখার সুযোগ অন্যদিকে রোমাঞ্চকর ইকো অ্যাডভেঞ্চারে নিজেদের মাতিয়ে রাখতে পারবেন প্রকৃতিপ্রেমী ভ্রমণকারীরা। যা বাংলাদেশে প্রথম। এমন তথ্য দেন কক্সবাজার বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (উত্তর) মাহবুব মোরশেদ।

বাংলাদেশে প্রথম পর্যটক আর দর্শনার্থীদের জন্য ইকো অ্যাডভেঞ্চার ব্যবস্থাপনা করছে ন্যাচার কনজারভেশন ম্যানেজমেন্ট (নেকম) এর ক্রেল প্রজেক্ট।

ন্যাচার কনজারভেশন ম্যানেজমেন্ট (নেকম) এর আঞ্চলিক সমন্বয়কারী মো. আলম খান জানান, কক্সবাজারের মেধাকচ্ছপিয়া জাতীয় উদ্যান ও ফাঁসিয়াখালী বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যে হচ্ছে এ ইকো অ্যাডভেঞ্চার। ২৪ জানুয়ারি থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে পর্যটকসহ সকল দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে। তবে অবশ্যই বন্যপ্রাণীদের স্বার্থে কিছু শর্ত পালন করতে হবে দর্শনার্থীদের।

নেকম এর সাইট অফিসার মো. আবদুল কাইয়ুম বলেন, ‘বিশাল বনাঞ্চলে যে সব অ্যাডভেঞ্চার রয়েছে তা হচ্ছে. ট্রি অ্যাডভেঞ্চার, সাইক্লিন, হ্রদে বোটিং, ফিসিং, টি হাউস, ইকো হাউস, তাঁবু জলসা, হেমগ, গাছে ঝোলা, ট্রেল হাইকিং, পর্যবেক্ষণ টাওয়ারসহ ব্যতিক্রম অ্যাডভেঞ্চার।’

তিনি জানান, রাতে বা দিনে গাছের মাছায় উঁচু স্থানে নিরাপদে বন্যপ্রাণী দেখা, রাতে গাছে রাত্রিযাপন। ঝুলিয়ে এক গাছ থেকে অন্য গাছে যাওয়া, গাছের দোলনায় গা দুলিয়ে দেওয়াসহ প্রকৃতির কোলে বিশ্রাম নেওয়ার অনন্য সুযোগ। দর্শনার্থীদের জন্য ইকো ট্যুর গাইড রয়েছে। তাছাড়া রয়েছে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা।

মেধাকচ্ছপিয়া বিট অফিসার সৈয়দ আবু জাকারিয়া জানান, এটি বাংলাদেশের বৃহৎ মাদার গর্জনবাগান। উঁচু নিচু পাহাড়, সমতল এলাকা নিয়ে ৩৯৫.৯৩ হেক্টর বনভূমিতে গর্জন ছাড়াও ডুমর, বহেড়া, অর্জুন, বাঁশঝাড়, বেত, বাদাম, ছাতিমসহ নানা প্রকারের গাছ রয়েছে। যা পর্যটকদের ভ্রমণে আকৃষ্ট করবে। এই বনভূমি রক্ষা করা হয়েছে জীবন ঝুঁকি নিয়ে।

ফাঁসিয়াখালীর বিট অফিসার এস এম এনামুল হক জানান, ফাঁসিয়াখালী অত্যন্ত ঘন বন। এখানে বিরল প্রজাতির শুশুক পাখি, বিরল প্রজাতির উল্টো লেজ বানর রয়েছে। রয়েছে হাতির প্রজনন স্থান। নীরবে হাঁটা আর উঁচু স্থানে অবস্থান করে নানা প্রজাতির বন্যপ্রাণী দেখার সুযোগ রয়েছে।

ইকো অ্যাডভেঞ্চার বিষয়ে অবহিত করার জন্য প্রকৃতি পর্যটন প্রসারে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় ও প্রকৃতি পর্যটন স্থান পরিদর্শনের আয়োজন করে। সভায় বক্তব্য দেন ক্রেল আঞ্চলিক সমন্বয়কারী মো. আলম খান, ফাঁসিয়াখালীর বিট অফিসার এস এম এনামুল হক, মেধাকচ্ছপিয়া বিট অফিসার সৈয়দ আবু জাকারিয়া, সহ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি আবুল হোসেন, সদস্য আক্তার কামাল, জাহাঙ্গীর আলম আকাশ, মকতুল হোসেন। সভা পরিচালনা করেন ক্রেল সাইট অফিসার মো. আবদুল কাইয়ুম।

এতে বক্তারা বলেন, প্রকৃতি নিয়ে পর্যটনের সম্প্রসারণ এটি হবে মাইলফলক।

পাঠকের মতামত: