কক্সবাজার সদর প্রতিবেদক ::
কয়েকদিন ধরে ভারী বর্ষণ এবং উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলের কারণে ঈদগাঁও নদীর বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে গিয়ে বিস্তীর্ণ এলাকা ৩/৪ ফুট পানির নিচে তলিয়ে গেছে। ঈদগাঁও নদী দিয়ে ধারন ক্ষমতার অতিরিক্ত পানি প্রবাহিত ও রাবারড্যামের স্লুইচ গেইট বন্ধ রাখায় ৩ জুলাই বিকেলে বেড়িবাধের (জালালাবাদ অংশে) রাবার ড্যাম সংলগ্ন এলাকার বিরাট একটি অংশ পানির প্রবল স্রোতে ভেঙ্গে গেছে। ভাঙ্গন এলাকা দিয়ে ঈদগাঁও খালের বন্যার পানি অনুপ্রবেশ করায় ২ নং ওয়ার্ডের পূর্ব লরাবাক, ছাতিপাড়া এবং বৃহত্তর পালাকাটা ও বাহারছড়া, মোহনবিলা এলাকার ৭ শতাধিক ঘরবাড়ী পানির নিচে তলিয়ে যায়। উনুন জ্বালাতে না পেরে পানির নিচে তলিয়ে যাওয়া বসতবাড়ীর লোকজন বর্তমানে তীব্র খাদ্য ও পানীয় জলের সংকটে পড়েছে বলে জানিয়েছেন ইউপি চেয়ারম্যান ও সাবেক ছাত্রনেতা ইমরুল হাসান রাশেদ এবং ওয়ার্ড মেম্বার আরমান উদ্দিন। বন্যার পানির কারণে বটতলীপাড়া ও উত্তর পালাকাটার অবস্থা অত্যন্ত নাজুক বলেও জানান তারা। জলমগ্ন হয়ে পড়েছে ওই ইউনিয়নের ৯ ওয়ার্ড এবং ১নং ওয়ার্ডের তেলী পাড়া ও মাছুয়াপাড়ার বেড়ীবাধ সংলগ্ন এলাকা। ঈদগাঁও বাজার ফরাজীপাড়া সড়কের পূর্ব লরাবাগের হাফেজখানা পয়েন্ট দিয়ে বন্যার পানি প্রবাহিত হওয়ার কারণে যানবাহন ও জনসাধারণের চলাচলে চরম বিঘ্ন সৃষ্টি হচ্ছে। সংবাদকর্মী নাছির উদ্দিন জানান, পানির তোড়ে ভেঙ্গে গেছে পালাকাটা এলাকায় অনেকের বসত বাড়ি ও সীমানা প্রাচীরের দেয়াল এবং ভেসে গেছে বহু হাঁস-মুরগীসহ গৃহস্থালী সামগ্রী। এদিকে ক্ষতিগ্রস্থ এলাকায় সরকারের পক্ষ থেকে জরুরী ভিত্তিতে ত্রাণ তৎপরতা শুরুর দাবী জানিয়েছে এলাকাবাসী। অনুরূপভাবে ঈদগাঁওর ভোমরিয়াঘোনা, পশ্চিম ভোমরিয়াঘোনা, পালপাড়া, মন্ডল পাড়া, চৌফলদন্ডীর নতুন মহাল কালু ফকির পাড়া, খামার পাড়া, পোকখালীর নাইক্ষ্যংদিয়া, ছমি উদ্দীন পাড়াসহ বেশ কয়েকটি এলাকার মানুষ পানিবন্দী রয়েছে বলে জানা গেছে। এ ব্যাপারে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ নজরুল ইসলামের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন। ড্রেনেজ ব্যবস্থা অকার্যকর হয়ে পড়ায় ঈদগাঁও বাজারের অবস্থাও অত্যন্ত নাজুক হয়ে পড়েছে। সড়ক, উপ-সড়কগুলোতে জমে আছে ময়লা পানি। তাছাড়া ডিসি সড়কের তেলীপাড়া রাস্তার মাথা থেকে বঙ্কিম বাজার পয়েন্টটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হওয়াতে পথচারী ও যানবাহন চলাচলে চরম দুর্ভোগে পড়েছে এলাকার লোকজন। বড় বড় গর্তের কারণে সড়কটি চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে অনেক আগেই। বঙ্কিম বাজার থেকে কক্সবাজার চট্টগ্রাম মহাসড়কের আলমাছিয়া মাদ্রাসা গেইট পর্যন্ত সড়কটির অবস্থা আরো নাজুক হয়ে পড়েছে। খানা খন্দকে ভরপূর ও মিনি পুকুরগুলোতে জমে থাকা ময়লা পানির ছিটায় প্রতিনিয়ত বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয় পথচারীদের। বিশেষ করে স্কুল কলেজ এবং মাদ্রাসাগামী শিক্ষার্থীদের পোহাতে হচ্ছে অবর্ষণীয় দুর্ভোগ। অপরদিকে উপকুলীয় জনপদ পোকখালী ইউনিয়নের গোমাতলী গ্রাম জোয়ারের পানিতে আবারও তলিয়ে গেছে বলে জানালেন ইউপি চেয়ারম্যান রফিক আহমদ। বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে যাওয়ার কারনে ওই এলাকার কয়েক হাজার মানুষ দীর্ঘদিন ধরে কার্যত পানিবন্দী অবস্থায় জীবন যাপন করছেন। এছাড়া ইসলামপুর, চৌফলদন্ডী এবং ভারুয়াখালীর নিম্নাঞ্চলও অতিবর্ষণজনিত কারনে ২/৩ ফুট পানির নিচে তলিয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। এদিকে জালালাবাদের রাবার ড্যাম এলাকার ভাঙ্গন এলাকাটি শীঘ্রই মেরামতের ব্যবস্থা করা না হলে ২ নং ওয়ার্ডের কয়েকশ পরিবার নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে বলে আশংকা প্রকাশ করেছেন ওয়ার্ড মেম্বার সাইফুল হক। ঐদিন খবর পেয়ে কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী এবিএম তাজুল ইসলামের নেতৃত্বে ৭ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন বলে জানান জালালাবাদ চেয়ারম্যান। তিনি আরো জানান, তাৎক্ষনিক বরাদ্ধ না থাকায় মেরামত করা যাচ্ছে না। খুব শীঘ্রই পানির স্রোত কমে গেলে মেরামত কাজ শুরু হবে।
পাঠকের মতামত: