ঢাকা,শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪

ঈদগাঁওর কিন্ডার গার্টেন স্কুলগুলো নানা কৌশলে হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা

indexশাহিদ মোস্তফা শাহিদ, ঈদগাঁও :::

কক্সবাজার সদরের বৃহত্তর ঈদগাঁওর আনাছে কানাছে গড়ে উঠেছে প্রায় ৫০টিরও অধিক ছোটবড় কেজি স্কুল। এসব প্রতিষ্ঠানে কোমলমতি শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা তাদের উপর স্কুল কর্তৃপক্ষের নানা কৌশলে চাপিয়ে দেওয়া তথাকথিত নিয়মনীতিকে নুজ্য হয়ে পড়েছে। এক শ্রেণীর মুনাফা লোভী ব্যক্তি স্বঘোষিত স্কুল প্রধান, অধ্যক্ষ বা প্রিন্সিপাল সেজে কেজি স্কুলের নামে এসব প্রতিষ্ঠান খুলে হাতিয়ে নিচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকা। তাছাড়া সরকারের বিশালাকার রিজার্ভ ও খাস জমি দখল করে অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপিত হয়েছে বলে জানা গেছে। বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, দীর্ঘ ১ যুগ ধরে বৃহত্তর ঈদগাঁওর ইসলামপুরে ৩টি, ইসলামাবাদে ৩টি, পোকখালীতে ২টি, জালালাবাদে ৩টি, চৌফলদন্ডীতে ৩টি, ঈদগাঁওতে ৩টিসহ অর্ধশতাধিক কেজি স্কুল নামের প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব কেজি স্কুলে কোমলমতি শিশুদের শিক্ষা দেওয়ার কথা বলে গড়ে উঠেছে এক শ্রেণীর স্ব স্ব এলাকার শিক্ষিত বেকার ও অর্ধ শিক্ষিত যুবকরা। অল্প বিনিয়োগে অধিক লাভের জন্য এসব প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছে। শিক্ষার কথা বললেও মূলত তারা এসবকে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেছে। এসব প্রতিষ্ঠানে সরকারী কোন নিয়মনীতি মেনে চলা হয় না। নেই কোন স্কুল পরিচালনা পরিষদ। যে কোন স্থানে একটি টিনের বেড়া কিংবা দালান তৈরি করে সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে চলছে স্কুল নামের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান কেজি স্কুলে শিক্ষিত বেকার বা অধ্যয়নরত কলেজ-মাদ্রাসা পড়–য়া মেয়েদের নামে মাত্র বেতনে নিয়োগ দিয়ে কোমলমতি শিশুদের শিক্ষা দেওয়া হয়। ঈদগাঁওতে হাতে গোনা দুয়েকটি কেজি স্কুল গড়ে উঠলেও বর্তমানে প্রত্যন্ত অঞ্চলের আনাছে কানাছে ব্যাঙের ছাতার মত গজে উঠেছে এসব ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান। বেশির ভাগ কেজি স্কুলের মালিক নিজেই অধ্যক্ষ বা প্রধান হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। তারা ইচ্ছানুযায়ী নির্ধারণ করে ভর্তি ফি ও মাসিক ফি। অধিকাংশ স্কুলে নার্সারী থেকে ৩য় শ্রেণী ততোধিক ৫ম শ্রেণী পর্যন্ত পড়ানো হয়। এসব প্রতিষ্ঠানে ভর্তির পর কোমলমতি শিক্ষার্থীদের পোষাক, টাই, জুতা, খাতা-কলম, বই কিনতে হয় নিজ স্কুলের নির্দিষ্ট করা দোকান বা লাইব্রেরী থেকে। পরে ঐসব দোকান থেকে মোটা অংকের টাকার কমিশন হিসাবে দেওয়া হয় স্কুল মালিক বা প্রধানকে। পোকখালী কেজি স্কুলের এক ছাত্রের অভিভাবক ও আইডিয়াল কেজি স্কুলের অপর অভিভাবক নাম প্রকাশ না করার শর্তে অভিযোগ করেন, এ যেন মগের মুল্লুক। গলা কেটে ফি নিয়ে ইচ্ছামত চালানো হচ্ছে এসব প্রতিষ্ঠান। নাপিতখালী এসকে ইন্টারন্যাশনাল গ্রামার স্কুলের এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক জানান, বাচ্চাদের কথা ভেবে নিরবে অনেকেই অভিযোগ জানান না। জানালেও কোন লাভ হয় না। কেজি স্কুলের বেতন নিয়ে পোকখালী আইডিয়াল কেজি স্কুলের আরেক ছাত্রের মা জানান, কলেজ লেভেলের বেতন যেখানে ৬০-৭০ টাকা, সেখানে প্লে নার্সারীর বেতন ২০০ – ২৫০ টাকা হয় কিভাবে? তাছাড়া বিভিন্ন খাতের কথা বলেও অতিরিক্ত টাকা আদায় করা হয়। ঈদগাঁও প্রি-ক্যাডেট স্কুলের এক অভিভাবক জানান, শুধু প্রকাশনী সংস্থার কাছ থেকে মোটা অংকের কমিশনের জন্য বাচ্চাদের উপর জটিল বই নির্ধারণ করা হয়। মূলত কিছু কিছু মুনাফালোভী ব্যক্তির কারণেই এসব প্রতিষ্ঠান গলাকাটা ব্যবসা করছে। এছাড়া সরকারী কোন নিয়ম-নীতি না থাকায় তারা ইচ্ছামত বেতন ফি আদায় করছে। এ ব্যাপারে ঈদগাঁওর বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ফিরোজ আহমদ বলেন, উচ্চ মাধ্যমিক ও স্নাতক শ্রেণীর প্রতিষ্ঠান নিজেকে অধ্যক্ষ বা প্রিন্সিপাল লিখতে পারেন। এইচএসসি বা ডিগ্রী পাশ অনেক কেজি স্কুলের প্রধান নিজেকে প্রিন্সিপাল হিসেবে পরিচয় দেন। এটা তার বোধগম্য নয়। তার পদবী হল প্রধান শিক্ষক। তারা টাকার জন্য পদ-পদবী ও কৌশলে পরিবর্তন করেছেন। সদর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা জানান, সরকারের সুনির্দিষ্ট নিয়ম-নীতি না থাকার কারণে এসব প্রতিষ্ঠানে অবৈধভাবে অর্থ আদায় করছে। বিষয়টি নিয়ে প্রশাসনের নীতি নির্ধারকরা দিক নির্দেশনা দিলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

পাঠকের মতামত: