এম.এ আজিজ রাসেল ::
সমুদ্র স্নান, আনন্দ-উচ্ছ্বাস আর নাচ-গানের মধ্য দিয়ে সম্পন্ন হয়েছে রাখাইন সম্প্রদায়ের বর্ষা উৎসব। ৭ জুলাই শুক্রবার উৎসবের সমাপনীতে সৈকতের শৈবাল পয়েন্টে বসে পর্যটক ও স্থানীয়সহ রাখাইন নারী-পুরুষের মিলন মেলা। ঝাউবীথিতে প্রায় তিনমাস ধরে চলছিল এই উৎসব। জানা গেছে, প্রতি বছর বৌদ্ধদের অন্যতম ধর্মীয় অনুষ্ঠান প্রবারণা পূর্ণিমার আগে (আষাঢ়ী পূর্ণিমা থেকে আশ্বিনী পূর্ণিমা পর্যন্ত তিন মাস ব্যাপী) আড়াই থেকে তিনমাস রাখাইন সম্প্রদায় এ উৎসব পালন করে থাকে।
রাখাইন সম্প্রদায়ের লোকজন জানায়, এটি তাদের কোনো সামাজিক বা ধর্মীয় উৎসব নয়, শুধুমাত্র সবাই মিলে মিশে মজা করার জন্যই এই আয়োজন। বিশেষ করে বর্ষায় বৃষ্টি এবং সাগরের জলে সিক্ত হয়ে আনন্দে মেতে ওঠার উৎসবের অন্যতম উপলক্ষ। রাখাইন নেত্রী মাটিন টিন জানান, প্রায় শতাব্দীকাল ধরে রাখাইন সম্প্রদায় এ উৎসব পালন করে আসছে। এক সময় হিমছড়ির অরণ্যে এ উৎসব উদযাপন করা হতো। রাখাইন তরুণ-তরুণীরা নানা রকমের খাবার নিয়ে চলে যেতো সেখানে। গত কয়েক বছর থেকে সমুদ্র আর প্রকৃতিকে আরও নিবিড়ভাবে কাছে পেতে সৈকতের ঝাউবাগানে পালন করা হচ্ছে মন রাঙ্গানো বর্ষা উৎসব। রাখাইন ফ্রি-স্টাইল রিলেশন শীপের উথিন য়ে, বাওয়ান, মংহ্লা ওয়ান, মংসি আই, মংথেন নাই, ক্যওয়ান, চ লাইন, মংবাসেন, জনি ও থেন থেন নাই জানান, এ উৎসবের সাথে ধর্মীয় উৎসবের কোন সম্পৃক্ততা নেই। তবে ৩ মাস ব্যাপী চলে অন্যরকম আনন্দ। শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে সকল বয়সী মানুষ উৎসবে আসেন। আনন্দ, হাসি ও আর গানে মেতে ওঠে সবাই। আজ শেষ দিনে সকলে হিংসা বিদ্বেষ ভুলে একে অপরের সাথে আনন্দে মেতে উঠে। শুক্রবার সৈকতের ঝাউবাগানে গিয়ে দেখা যায়, দুপুরে তপ্ত রোদ উপেক্ষা করে মহেশখালী, রামু, চকরিয়া, টেকনাফ ও শহরের বিভিন্ন রাখাইন পল্লী থেকে শিশু-কিশোর, যুবক, বৃদ্ধাসহ পরিবার-পরিজন নিয়ে এক কাতারে সামিল হয়। কেউ নাচছে, কেউ গাইছে, আবার অনেকে নিজেদের রান্না করা মজার মজার খাবার-দাবার নিয়ে ব্যস্ত। রয়েছে ঐতিহ্যবাহী পানীয়। রৌদের প্রখরতা হ্রাস পাওয়ার সাথে সাথে ঝাউবীথি জুড়ে রাখাইন সম্প্রদায়ের মিলন মেলা বসে।
রামু থেকে আসা অ জ রাখাইন উচ্ছসিত কণ্ঠে জানালেন, এ উৎসবে এলেই অনেক পুরনো বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে দেখা হয়। তাই প্রতি বছর এখানে আসার লোভ সামলাতে পারিনা। খুব মজা হয়।
রাখাইন হ্যাংগিং গার্ডেন এর ওয়ানশে, কিংজ, ববি, মং মং, ওয়ান জ্য, জওয়ান, কমংটেন, উচ্য থেন বলেন, বিশাল সমুদ্র সৈকতকে সামনে রেখে ঝাউ বাগানে চলে এ আনন্দ আয়োজন। সবকিছু মিলে আসলেই অসাধারণ। যে যাই বলুক। আমরা বলব বর্ষা উৎসব। বৃষ্টির সাথে এ উৎসবের রয়েছে গভীর সম্পর্ক। কারণ যে দিন বৃষ্টি বেশী হয়, ওই দিন মজা হয় বেশী। তাই আগামী বছর আবার আমরা মিলিত হবো ভাতৃত্বের বন্ধন অটুট রাখতে। উৎসবে এসে কেমন লাগছে? এমন প্রশ্নে হাগই জনগোষ্ঠীর জ জ, আক্য, জ জ ইয়ুদি, মং ম ও আবুরী জানান, সবাই মিলে-মিশে বৃষ্টি এবং সাগরের জলে সিক্ত হয়ে আনন্দে মেতে ওঠার জন্যই মূলত এখানে আসা। এটিকে বর্ষাকালীন পিকনিকও বলা যায়। ঝাউ বাগানে দিনভর আনন্দ উল্লাসের পর বিকালে দল বেঁধে সবাই নামেন সমুদ্র স্নানে। সমুদ্র স্নান শেষে সবাই সমাপনীর বেদনায় নীল হয়ে নীজ নীড়ে ফেরেন। কক্সবাজার সিটি কলেজের অধ্যক্ষ ক্যাথিন অং রাখাইন জানান, ধর্মীয় রীতিনীতির সাথে এ উৎসবের কোনো সম্পর্ক নেই। শুধুমাত্র আনন্দ করার জন্য এ আয়োজন। প্রথম দিকে কক্সবাজারের রাখাইন সম্প্রদায় এ উৎসব শুরু করলেও বর্তমানে এ উৎসব শুধুমাত্র কক্সবাজারের রাখাইনদের মাঝে সীমাবদ্ধ নেই। জেলার গন্ডি পেরিয়ে বান্দরবান, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি থেকেও লোকজন এ উৎসবে যোগ দেন।
পাঠকের মতামত: