ঢাকা,মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪

বিধ্বস্ত সেন্টমার্ন্টিন জেটি,সংস্কারের কেউ নেই

নিউজ ডেস্ক :: দেশের একমাত্র প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিনের জেটি ভেঙে তছনছ হয়ে গেছে। ঘূর্ণিঝড় ইয়াস পরবর্তী থেকে ভরা পূর্ণিমাসৃষ্ট জোয়ারের প্রভাবে টেকনাফের সেন্টমার্টিনের একমাত্র পর্যটক জেটিটি ভেঙে একাকার। প্রতিবছর পর্যটন মৌসুমে দৈনিক ৫ থেকে ১৫ হাজার পর্যটক এবং স্থানীয় বাসিন্দারা এই জেটি দিয়ে জাহাজে ওঠানামা করে।

সম্প্রতি ভারী বৃষ্টির ফলে জেটির অবস্থা আরো ভয়াবহ হয়ে যায়। প্রতিনিয়ত জোয়ারের পানির উত্তাল ঢেউ একের পর একে জেটিতে আঘাত করতে থাকে। ফলে জেটির পল্টুনে ছোট-বড় ফাটল দেখা গিয়েছে। এরপর উত্তাল সাগরের ঢেউ আঘাত হানার পর জেটির অধিকাংশ অংশ, রেলিং ও সিঁড়ি নষ্ট হয়ে যায়। এরপর থেকে কোন সংস্কারের কোন উদ্যোগ নেয়নি সংশ্লিষ্ট কতর্ৃপক্ষ। বরাবরের মতো কিছু পর্যটন ব্যবসায়ীরা সেন্টমার্টিন নিয়ে ব্যবসায় মেতে উঠে কিন্তু জেটি সংস্কারের বিষয়ে কোন উদ্যোগ নিতে দেখা যায় না।

দ্বীপের বাসিন্দারা জানান, বর্তমানে একদিকে করোনা মহামারীতে দ্বীপবাসী ও ব্যবসায়ীদের মানবেতর জীবনযাপন করছে। তাছাড়া দ্বীপে ব্যবসা সময়কালীন বলতে মূলত চারমাসকেই বুঝানো হয়। প্রতিবছরই অক্টোবর থেকেই পর্যটকের দ্বীপে আগমণ ঘটে। ইতিমধ্যেই আগস্ট মাস চলমান।

বেশ কয়েকটি বছর ধরে পর্যটন মৌসুম শুরুর আগেই মেতে উঠে পরিবেশের তালবাহানা। করোনায় আর্থিক সংকটে পড়া ও মানবেতর জীবনযাপন থেকে উত্তরন পেতে দ্রুত এই জেটি নির্মাণ করা না হলে সেন্টমার্টিন দ্বীপবাসীর জীবনযাপনে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি ও আর্থিক সংকটের হুমকিতে পড়বে।।

এই জেটির উপর নির্ভর করে দ্বীপের প্রায় দশ হাজার মানুষের জীবন, কক্সবাজারের ১৫০টিরও উর্ধ্বে ট্যুরিজম প্রতিষ্ঠান, ঢাকা-টেকনাফ ট্রান্সপোর্টের কয়েক ডজন প্রতিষ্ঠান, জাহাজ কতর্ৃপক্ষ, স্পীড বোট, ট্রলার, ফিশিং, দিন মজুর, রিক্সা ভ্যানসহ শতশত ক্ষুদ্র প্রতিষ্ঠান।

দেশের একমাত্র এ প্রবালদ্বীপের জেটিতে নোঙর করে শত শত ফিশিং বোট, পণ্যবোঝাই ট্রলার, যাত্রীবাহী নৌকা ও পর্যটকবাহী নৌযান এবং ছোট-বড় অনেক জাহাজ। বিশেষ করে পর্যটন মৌসুমে দিবারাত্রি সেন্টমার্টিন জেটিতে নোঙর করে শত শত নৌযান। হাজার হাজার পর্যটকের পদভারে মূখরিত হয় এই জেটি ঘাট। এই জেটি ঘাট থেকে বছরে কোটি টাকার ওপরে রাজস্ব আদায় করে সরকার।

সেন্টমার্টিনের বাসিন্দা আবদুল মালেক বলেন, আগামী পর্যটন মৌসুমে চরম ভোগান্তি পোহাতে হবে পর্যটকদের। এমন অবস্থায় দ্রুত সময়ের মধ্যে জেটি মেরামত বা সংস্কার না করলে পর্যটন ব্যবসা ও মানুষের আসা-যাওয়া করা সম্ভব হবে না।

সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান জানান, প্রতিবছর জেলা পরিষদ এই জেটি ইজারা দিয়ে লাখ লাখ টাকা আয় করলেও কোনো ধরণের মেরামত কাজ করেনি। তবে গত বছর বিভিন্ন জাহাজ মালিকসহ কিছু টাকা খরচ করে এর দুই পাশে দুটি লোহার পন্টুন স্থাপন করা হয়। এই জেটি ব্যবহার করে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার-সেন্টমার্টিন নৌপথে ৮/১০টি জাহাজ পর্যটক পরিবহন করে আসছিলো।

সেন্টমার্টিন ইউপি চেয়ারম্যান নুর আহমদ জানান, সেন্টমার্টিন দ্বীপের প্রায় সাড়ে ১০ হাজার বাসিন্দা ও দ্বীপে বেড়াতে আসা পর্যটকদের সুবিধার্থে ২০০২-০৩ অর্থবছরে স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী অধিদফতরের (এলজিইডি) তত্ত্বাবধানে এই জেটি নির্মাণ করা হয়। এর দৈঘর্য ৩০০ মিটার। এটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে প্রায় চার কোটি টাকা।

২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর ঘূর্ণিঝড় সিডরের আঘাতে জেটির পার্কিং পয়েন্ট সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত ও দুটি গাডার ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তখন থেকেই জেটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে। প্রতিবছর জেলা পরিষদ এই জেটি ইজারা দিয়ে লাখ লাখ টাকা আয় করলেও কোনো ধরনের মেরামতকাজে হাত দেয়নি।

তিনি আরো বলেন, দ্বীপের মানুষের কষ্টের কথা ভেবে জেটি সংস্কার অথবা পুর্ননির্মানের জন্য ব্যবস্থা নিতে উপজেলা প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। আশা করি পর্যটক ও দ্বীপবাসীদের কথা চিন্তা করে তারা দ্রুত ব্যবস্থা নেবেন।

টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পারভেজ চৌধুরী বলেন, ‘জেটিটি দীর্ঘদিন ধরে জরাজীর্ণ অবস্থায় রয়েছিলো। ঘূর্ণিঝড় ও পূর্ণিমার অস্বাভাবিক জোয়ারের ঢেউয়ের আঘাতে একদম ভেঙে হয়ে গেছে। জেটি বিধ্বস্ত হওয়ার বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।’ আশা করছি দ্রুত বাজেট পাশ হয়ে কাজ করতে পারব।

পাঠকের মতামত: