ঢাকা,শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪

ডুবেছে ১০ হাজার হেক্টর কৃষি জমি, মৃত্যু ২২

প্রাকৃতিক দুর্যোগে বিপর্যস্ত কক্সবাজার

নিজস্ব প্রতিবেদক :: টানা ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে ডুবে গেছে কক্সবাজার জেলার ১০ হাজার ১৫ হেক্টর কৃষি জমি ও মাছের ঘের। ভেঙ্গেছে প্রায় ৩০ কিলোমিটার সড়ক। ভেঙ্গেছে অসংখ্য বেধিবাঁধ, ডুবেছে বাড়িঘর। ভেসে গেছে হাজার হাজার লোকের স্বপ্ন।ঝরে গেছে ২২ টি তাজা প্রান। আর ওই বিপর্যয় ঠেকাতে প্রসাশন পানিবন্দী ও পাহাড়ে ঝুকিপূর্ণদের আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে আসার চেষ্টা করছে। কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের সূত্রমতে, জেলায় চলতি মাসে ৯৬৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। এরমধ্যে চলতি ৪ দিনেই ৩৯২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এই ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে জেলার ৮ টি উপজেলার ৫২ টি ইউনিয়নের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হযেছে। ওইসব ইউপির ৭৬ হাজার ৫০০ পরিবারের প্রায় ৪ লাখের মানুষ বন্দী বন্দী রয়েছে। বানের পানিতে বিলীন হয়েছে ৪ হাজার ২৫৬ হেক্টর মৎস্য ঘের ও পুকুর। পানিতে নিমজ্জিত আছে ৫ হাজার ৭৫৯ হেক্টর চাষের জমি।

সূত্রটি আরো জানায়, ২৭ জুলাই পাহাড় ধসে ও বানের পানিতে ৬ জন রোহিঙ্গার মৃত্যু হয়। একইদিন মহেশখালি বাড়ির দেয়াল চাপায় এক নারী ও টেকনাফে পাহাড় ধসে এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়। তারপরের দিন ২৮ জুলাই পাহাড় ধসে ধসে টেকনাফের হ্নীলায় একই পরিবারের ৫ জন, মহেশখালিতে একজনের মৃত্যু হয়। সেদিনই উখিয়া উখিয়াতে বানের পানিতে ভেসে যাওয়া ৩ জনের মৃতদেহ এবং ঈদগাওতে বানের পানিতে মাছ ধরতে গিয়ে ৩ জনের মৃত্যু হয়। ২৯ জুলাই চকরিয়া এক শিশু বাবামায়ের উঠানে জমা পানিতে পড়ে গেলে তার মৃত্যু হয়। ৩০ জুলাই বানের পানিতে খেলেতে গিয়ে পেকুয়ায় এক শিশুর মৃত্যু হয়। এবিষয়ে কক্সবাজার জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এস.এম খালেকুজ্জামান বলেন, জেলার ৮ টি উপজেলার ৫২ টি ইউনিয়নের ৪৮৯ টি পুকুর যার আয়তন ২১৬ হেক্টর ও ঘের / খামার ৭৬২ টি যার আয়তন ৪ হাজার ৫০ হেক্টর বানের পানিতে বিলীন হয়ে গেছে। এতে প্রায় ২ হাজার ৭’শ ৬৬ লাখ টাকা ক্ষতি হয়েছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কক্সবাজারের উপপরিচালক ড. মো. এখলাছ উদ্দিন বলেন, অনেক ফসলি জমিতে এখনো পানি রয়েছে। অন্যদিকে বৃষ্টিও থামেনি । তাই ক্ষয়ক্ষতির পরিমান নির্ণয় সম্ভব হয়নি । তবে টানা বর্ষণে এখনো পর্যন্ত জেলার আউশ ধান চাষের ৪৯১ হেক্টর, আমনের বীজ তলার ৭৬২ ও আমন ধানের ৪ হাজার ১৭০ হেক্টর এবং সবজি চাষের ৩১২ হেক্টর জমি পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। এছাড়া ২৪ হেক্টর পান চাষের জমি প্লাবিত হয়েছে। স্থানীয় সরকার অধিদপ্তরের (এলজিআইডি) কক্সবাজারের নির্বাহি প্রকৌশলী মো. আনিসুর রহমান বলেন, বর্ষা গেলেই ক্ষতির প্রকৃত তথ্য জানা যাবে। তবে টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে ৮ উপজেলার ৪০ টি রাস্তার বিভিন্ন পয়েন্টে ২৫ কিলোমিটার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব সংস্কারে ৬ কোটি টাকার উপরে ব্যয় হবে।

কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহি প্রকৌশলী বলেন, টানা বর্ষণে কক্সবাজার জেলার বেড়িবাঁধের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। তবে সেটি পানি পুরো নেমে যাওয়ার পরে বলা যাবে। কিন্তু সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে চকরিয়ায়। সেখানে ৪ টি পয়েন্টের ১৮০ মিটার বেড়িবাধ বিলীন হয়ে গেছে। কক্সবাজার জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, এখনো থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে।

বৃহস্পতিবারও ৬০ মি.লি লিটারের মত বৃষ্টিপাত হয়েছে। তাই ক্ষয়ক্ষতি’র প্রকৃত চিত্র মিলেনি। প্রাকৃতিক বিপর্যয় মোকাবেলায় কক্সবাজারের ৫৭৩ টি আশ্রয় কেন্দ্রই প্রস্তুত রয়েছে। তৎমধ্যে ৩৮ টি তে ৮ হাজার ৫৬৫ জন আশ্রয় নিয়েছেন। এছাড়া ৮ টি উপজেলার ২’শ মেট্রিকটন চাল, নগদ ১৫ লাখ টাকা ও ২ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) জাহিদ হাসান বলেন, টানা বর্ষণ ও পাহাড় ধসে বিপর্যস্ত কক্সবাজার।

পাহাড় ধস , বাড়ির দেয়াল চাপা ও পানিতে ডুবে শিশু সহ ২১ জন মৃত্যুবরণ করেছেন। তাদের পরিবারকে ২৫ হাজার টাকা করে নগদ অর্থ সহায়তা দেয়া হয়েছে। তিনি আরো বলেন, এখনো থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত এতে জেলার ৫২ টি ইউনিয়ন পানিতে ডুবেছে। পানিবন্দী আছে ৭৬ হাজার ৫০০ পরিবার। তাদেরকে ত্রাণ সহায়তা দেয়া হচ্ছে। এ পর্যন্ত ২০০ মে.টন চাল ও ১৫ লাখ নগদ টাকা বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া উপজেলা পর্যায়ে জমা থাকা ত্রাণও দেয়া হয়েছে কয়েকটা উপজেলায়।

পাঠকের মতামত: