ঢাকা,শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪

চকরিয়ায় সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৫, তখন ইউনিক বাসের চালক কথা বলছিল মোবাইলে

ছোটন কান্তি নাথ, চকরিয়া  ::: Chakaria Pic. (Accident-2) 03.05.16
চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের চকরিয়ায় যাত্রীবাহী বাস ও যাত্রীবাহী ছারপোকা (ম্যাজিক) গাড়ির মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়েছে। এতে দুমড়ে-মুচড়ে গিয়ে ছারপোকা গাড়িটি মহাসড়ক থেকে অন্তত ২০ গজ দূরে ছিটকে পড়ে। এ সময় ঘটনাস্থলে চারজন এবং হাসপাতালে নেওয়ার পর আরো একজনসহ পাঁচজন নিহত হয়েছে। তন্মধ্যে দুইজন মহিলা (মা-মেয়ে) এবং তিনজন পুরুষ। আহত হয়েছে শিশু, মহিলাসহ আরো অন্তত ১৫জন যাত্রী। আহতদের উদ্ধার করে মালুমঘাট মেমোরিয়াল খ্রিষ্টান হাসপাতাল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। তন্মধ্যে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে মুমুর্ষ অবস্থায় শিশু, মহিলাসহ চারজনকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আহতদের মধ্যে বেশিরভাগ ছারপোকা গাড়ির যাত্রী এবং চালকসহ কয়েকজন ইউনিক বাসের যাত্রী বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছে। দুর্ঘটনার পর পরই হতাহতদের উদ্ধারে নামে ঘটনাস্থল সংলগ্ন ব্রিগেডের সেনাবাহিনীর সদস্য, থানা ও হাইওয়ে পুলিশ, ফায়ার সার্ভিসের কর্মীসহ স্থানীয় লোকজন। গতকাল মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে মহাসড়কের চকরিয়ার ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের মইগ্যারমারছড়া পয়েন্টে মহাসড়কের ঝুঁকিপূর্ণ বাঁকে মর্মান্তিক এই দুর্ঘটনাটি ঘটে।
নিহতরা হলেন চকরিয়া উপজেলার ডুলাহাজারা ইউনিয়নের রংমহল গ্রামের আহমদ হোসেনের পুত্র মোহাম্মদ তারেক ((১৮), একই ইউনিয়নের সুয়াজিন্নাহ এলাকার বাহাদুর আলমের স্ত্রী নুর নাহার বেগম (৪০) ও তার মেয়ে আয়েশা বেগম (১৪), সাহারবিল ইউনিয়নের মাইজঘোনা গ্রামের শিব্বির আহমদের পুত্র এসএসসি পরীক্ষার্থী আহাদুল করিম (১৮) ও কুতুবদিয়া উপজেলার আলী আকবর ডেইল ইউনিয়নের সিকদার পাড়ার মৃত মিয়া আজমের পুত্র আবু ছৈয়দ (৬৫)।
আহতরা হলেন চমেক হাসপাতালে ভর্তি কাকারা ইউনিয়নের মেনিবাজারের মো. মারুফ হোসেনের স্ত্রী সানজিদা বেগম (৩৫), তার ৬ মাস বয়সের শিশু মোহাম্মদ আবদুল্লাহ, মহেশখালী উপজেলার কালারমারছড়া গ্রামের আবু ছিদ্দিকের স্ত্রী মুর্শিদা বেগম (৩৫), বান্দরবানের লামার ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের হায়দারনাশী গ্রামের মৌলভী মো. জকরিয়ার কন্যা তাসমিনা জন্নাত (১৮)। এছাড়াও চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি আছেন ডুলাহাজারা ইউনিয়নের ডুমখালী গ্রামের গিয়াস উদ্দিনের স্ত্রী আনোয়ারা বেগম (৩৩) ও তার কন্যা জন্নাতুল মরিয়ম (২)। মালুমঘাট মেমোরিয়াল খ্রিষ্টান হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তিনজনকে। তারা হলেন ডুলাহাজারা ইউনিয়নের চা-বাগান এলাকার মৃত আমীর আলীর ছেলে আবদুল মতলব (৫৫), সুয়াজিন্নাহ এলাকার কামাল হোসেনের স্ত্রী পারভীন আক্তার (৩৫) ও ছারপোকা গাড়ির সহকারী সাহারবিল ইউনিয়নের পূর্ব পাড়ার আহমদ কবিরের ছেলে কফিল উদ্দিন (৪২)। এছাড়া আরো ৭জন যাত্রী প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন। আহতদের মধ্যে যাত্রীবাহী ইউনিক বাসের চালকসহ কয়েকজন রয়েছেন বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন।
ঘটনাস্থলে কক্সবাজার সদর সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (বর্তমানে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার) মো. মাসুদ আলম জানান, ভয়াবহ এই দুর্ঘটনায় ঘটনাস্থলে এক মহিলাসহ চারজন এবং হাসপাতালে নেওয়ার পর আরো এক মহিলাসহ ৫জন যাত্রী নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন উভয় গাড়ির অন্তত ১৫ জন যাত্রী। তাদেরকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তন্মধ্যে মুমুর্ষ অবস্থায় শিশুসহ চারজনকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
আহত বাস যাত্রী ও প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে পুলিশ কর্মকর্তা মাসুদ আলম বলেন, ‘দুর্ঘটনায় পতিত ইউনিক বাসটি (ঢাকামেট্টো-ব-১৪-৮৮৭০) যখন ফাঁসিয়াখালী সেগুন বাগান অতিক্রম করছিল, তখন বাসের চালক মোবাইল ফোনে কথা বলছিলেন। এই মুহূর্তে সামনে থাকা কলাবোঝাই একটি পিকআপ ভ্যানকে ওভারটেক করতে গিয়ে মহাসড়কের বিপজ্জনক বাঁকের মধ্যে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয় বিপরীত দিক থেকে আসা যাত্রীবাহী ছারপোকা (ম্যাজিক) গাড়ির (নম্বর বিহীন) সঙ্গে। এ সময় ছারপোকা গাড়ির ইঞ্জিনসহ সামনের অংশ ২০ গজ দূরে পাশ্ববর্তী গাছের সঙ্গে ধাক্কা খায় এবং পেছনের যাত্রী বসার অংশটি বিচ্ছিন্ন হয়ে হতাহতের ঘটনা ঘটে।’
চকরিয়া থানার ওসি মো. জহিরুল ইসলাম খান জানান, ঘাতক ইউনিক বাসের চালক-হেলপার পালিয়ে গেছে। গাড়ি দুটি মালুমঘাট হাইওয়ে পুলিশ জব্দ করেছে। এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আইনগত প্রক্রিয়া শেষে নিহতদের লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

পাঠকের মতামত: