ঢাকা,শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪

চকরিয়ার ৬ ইউপি নির্বাচন সমানে আচরণবিধি লঙ্ঘন

স্টাফ রিপোর্টার, চকরিয়া :
চকরিয়া উপজেলার উপকূলীয় ছয়টি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে আগামী ৭ মে। নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে ততই প্রার্থীদের প্রচার-প্রচারণায় উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে সবকটি ইউনিয়নে। প্রতিদিন খুব ভোরেই প্রচারণায় নেমে পড়ছেন প্রার্থীরা। এতে প্রত্যন্ত এলাকায়ও ছড়িয়ে পড়েছে ভোট উৎসবের আমেজ। এদিকে ছয় ইউনিয়নের প্রতিটিতে আচরণবিধি না মেনেই প্রচারণা চালাচ্ছেন প্রার্থীরা। দেওয়াল, বৈদ্যুতিক খুঁটি, সরকারী-বেসরকারী স্থাপনাসহ বিভিন্ন জায়গা ছেয়ে গেছে প্রার্থীদের পোষ্টারে। তাছাড়া গভীর রাত অবদি মাইক নিয়ে প্রচারণা চালানোয় অনেকে ত্যক্ত-বিরক্ত। আচরণবিধি না মেনে প্রার্থীরা প্রচারণা চালালেও সংশ্লিষ্টদের এনিয়ে কোন তৎপরতা নেই।
উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, উপজেলার ১৮ ইউনিয়নের মধ্যে গত ২৩ এপ্রিল অনুষ্ঠিত হয়েছে ১২টি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন। বাকী ৬ ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে আগামী ৭ মে। ৬ ইউনিয়ন যথাক্রমে পশ্চিম বড় ভেওলা, পূর্ব বড় ভেওলা, কোনাখালী, ভেওলা মানিকচর (বিএমচর), ঢেমুশিয়া ও বদরখালীতে চেয়ারম্যান পদে ৩১ জন, সংরক্ষিত ও সাধারণ সদস্য পদে ২৫৮ জন প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্ধিতা করছেন।
আচরণবিধি না মেনে প্রচারণা চালানোর বিষয়ে জানতে চাইলে কয়েকটি ইউনিয়নের বিএনপি দলীয় ও স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থীরা বলেন, ‘সরকার দলের প্রার্থীরা তো এভাবেই প্রচারণা চালাচ্ছেন। তাহলে আমরা কেন আচরণবিধি মেনে প্রচারণা চালাবো।’
চকরিয়া উপজেলার ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের আইন-শৃক্সক্ষলা সমন্বয়কারী ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. সাহেদুল ইসলাম বলেন, ‘আচরণবিধি না মেনে যারা প্রচারণা চালাচ্ছেন তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এসব কিছু দেখার জন্য একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে মাঠে নামানো হবে। তিনি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে আচরণবিধি ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে।’
আওয়ামীলীগের ৩ বিদ্রোহী প্রার্থীসহ ৮ নেতাকে বহিষ্কার ঃএদিকে উপকূলীয় ৬ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামীলীগ দলীয়ভাবে একক প্রার্থী মনোনয়ন দিলেও প্রতিটি ইউনিয়নে বিদ্রোহী প্রার্থীর ছড়াছড়ি। দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে একক প্রার্থীর বিরুদ্ধে গিয়ে নির্বাচন করছেন এমন বিদ্রোহী প্রার্থী এবং তাদের পক্ষে কাজ করা মাতামুহুরী সাংগঠনিক উপজেলা আওয়ামীলীগের ৮ নেতাকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করেছেন জেলা আওয়ামীলীগ। কেন্দ্রীয় নির্দেশনার আলোকে প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে সোমবার রাতে তাদের বহিষ্কার করা হয়। একইসঙ্গে যেসব নেতাকর্মী একক প্রার্থীর পক্ষে মাঠে কাজ করা থেকে বিরত রয়েছেন তাদেরকেও সতর্ক করা হয় এবং ২৪ ঘন্টা সময় বেঁধে দিয়ে তাদেরকে একক প্রার্থীর পক্ষে মাঠে নামতেও বলা হয়। না হয় তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারী দেওয়া হয়।
কক্সবাজার জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট সিরাজুল মোস্তফা ও সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান স্বাক্ষরিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে যাদের বহিষ্কার করা হয়েছে তারা হলেন বদরখালী ইউনিয়নে বিদ্রোহী প্রার্থী ছাত্রলীগ নেতা আ.ন.ম হেফাজ সিকদার, আওয়ামীলীগ নেতা খাইরুল বশর ও মোহাম্মদ আলী। পশ্চিম বড় ভেওলা ইউনিয়নে বিদ্রোহী প্রার্থী আওয়ামীলীগ নেতা বর্তমান চেয়ারম্যান সাহাব উদ্দিন। এছাড়া বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে কাজ করায় বহিস্কার করা নেতারা হলেন মাতামুহুরী সাংগঠনিক উপজেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এম. আজীজুর রহিম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হারুন সরওয়ার বাদল, উপজেলা আওয়ামীলীগ সহ-সভাপতি মকছুদুল হক ছুট্টু, কোনাখালী ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ নেতা মোক্তার আহমদ।
তবে বহিষ্কৃত বিদ্রোহী প্রার্থী ও আওয়ামীলীগ নেতারা প্রতিক্রিয়ায় বিরূপ মন্তব্য করেছেন। অনেকে বলেছেন, আমরা দলের নাম ভাঙিয়ে কোন অপকর্মে জড়িত নই। তাছাড়া এসব ইউনিয়নে যাদেরকে আওয়ামীলীগের মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে এলাকায় অনেকের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে যথেষ্ট প্রশ্ন রয়েছে। মনোনয়ন বাণিজ্যের মাধ্যমে তাদেরকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হলেও ভোটারেরা তাদের কাছ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। তাই তাদের বিরুদ্ধে কথিত এই বহিষ্কারাদেশ কোন কাজ দেবেনা আওয়ামীলীগ প্রার্থীদের।

পাঠকের মতামত: