ঢাকা,শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪

পুলিশের ‘কথিত সোর্স’পরিচয়ে ৪ ভাইয়ের অত্যাচারে অতিষ্ট মানুষ

নিজস্ব প্রতিবেদক :: পুলিশের কথিত সোর্স পরিচয়ে আমির সোলতান চকরিয়া উপজেলার খুটাখালীর মানুষের মাঝে আতঙ্কের নাম। সোলতান এলাকায় নিরীহ মানুষকে প্রতিনিয়ত হয়রানী করে আসছে বলে স্থানীয় এলাকাবাসীর অভিযোগ। আমির সোলতান উপজেলার খুটাখালী ইউনিয়নের ৬নম্বর ওয়ার্ডের ফরেষ্ট অফিস পাড়া এলাকার মৃত মোকতার আহমদের ছেলে।

সোর্স সোলতানের ছত্রছায়ায় এলাকার চিহ্নিত ডাকাত, অস্ত্রধারী, মাদক কারবারী, সাজাপ্রাপ্ত ও পালাতক আসামীরা থানা পুলিশের কাছে অধরা রয়েছে বলে দাবী করেছেন স্থানীয়রা।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, পুলিশ সোর্স পরিচয়ে এলাকায় দাঁপিয়ে বেড়ানোর সুযোগে তার আপন চার ভাই ও এক নিকট আত্মীয় খোদ প্রশাসনের চোখকে ফাঁকি দিয়ে বিভিন্ন অপরাধ কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েছে। তার ভাইয়েরা হলেন, ওবায়দুল্লাহ (প্রকাশ ওবাইদুল ডাকাত), নজির আহমদ সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামী, হামিদুল্লাহ সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামী ও তাদের ছোটভাই হেলাল উদ্দিন।

হেলাল বালুভর্তি ট্রাক নিয়ে কক্সবাজার যাওয়ার পথে বর্ডার গার্ড হাতে অস্ত্রসহ আটক হয়ে বর্তমানে জেল হাজতে। এ ছাড়া সাজাপ্রাপ্ত পলাতক ভাইয়েরা এলাকায় বীরদর্পে ঘুরে বেড়ালেও পুলিশের চোখে তারা পলাতক। তার প্রত্যেক ভাইয়ের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অপরাধে একাধিক মামলা রয়েছে। সোলতানের ছত্রছায়ায় তার ভাই ওবাইদুল ডাকাত এলাকায় গড়ে তুলেছে বড় অপরাধী চক্র। ওইসব অপরাধী চক্র দিয়ে খুটাখালীর বিভিন্ন জনপদে নানা অপরাধ কর্মকান্ড চালিয়ে আসছে ডাকাত ওবায়দু।

ওই এলাকায় ওবাইদু দল প্রধান হিসেবে কাজ করছে। একই ওয়ার্ডের সেগুনবাগিচা এলাকার নাজু মিয়ার পুত্র মো. হোসেন তার নেতৃত্বে শফিউল আলমের পুত্র পরোয়ানাভুক্ত আসামী রেজাউল করিম, আলী হোসেনের পুত্র নুরুল আজিম, মৃত সোলতান আহমদের পুত্র আব্দুল খালেক ও অল খায়ের-এ জামাই আনোয়ার আলম। তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অপরাধে মামলা রয়েছে।

এলাকাবাসীর তথ্যমতে, কথিত সোর্স পরিচয়ধারী আমির সোলতান নিজের অপরাধী ভাইদের রক্ষা করতে মূলত পুলিশের সোর্স হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে বলে স্থানীয়দের দাবী। কারণ তার বড়ভাই ওবায়দু ডাকাত চিহ্নিত একজন বনদস্যু ও বনখেকো। তার বিরুদ্ধে রয়েছে ডাকাতি, অপহরণ, চুরি, দাঙ্গা-হাঙ্গামা, বন মামলাসহ একাধিক মামলা। যার মধ্যে জিআর ৩৪০/১৫, ৩৩৯/১৫, ৩৩৫/১৫)। সেগুনবাগিচা এলাকার মধ্যে তার নাম শুনলে এলাকার নিরীহ লোকজন ভয়ে শিহরিত হয়ে উঠে। বিভিন্ন অপরাধের কারণে থানা ও আদালতে মামলা হলেও পুলিশের কাছে সম্পূর্ণ ধরা ছোঁয়ার বাহিরে রয়েছে ওবায়দু ডাকাত। ওবায়দুর নেতৃত্বে দিনদুপুরে খুটাখালী বাজারে মুদির দোকান ডাকাতি, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ওমর আলীর বসতঘর ডাকাতি, হরিখোলা দোকান ডাকাতি তার মধ্যে অন্যতম। আইনশৃংখলা বাহিনীর হাত থেকে তাকে রক্ষা করতে ভাই সোলতান সোর্স হিসেবে কাজ করছে। এছাড়াও তার ভাই হামিদ উল্লাহ (হামিদ) বিরুদ্ধে রয়েছে নানা অপরাধের ঘটনায় জিআর-৩৪০/১৫, ৩৩৯/১৫, ১২/১২ সহ একাধিক মামলা। বর্তমানে সেও সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামী।

তার নিকটাত্মীয় রেজাউল তিনিও সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামী। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অপরাধ কর্মকান্ডে রয়েছে ডজন মামলা যার মামলা নং-জিআর-১২১/১৪, ৩৪৪/১৪, ৩৪০/১৫, ৩৩৯/১৪, ১৮/১৪, ২০৬/১৪, ২০৫/১৪ সহ একাধিক মামলা। তার ভাই নজির আহমদ বর্তমানে সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামী।

প্রত্যক্ষ ভাবে পুলিশের সোর্স পরিচয়ে সোলতান তার অপরাধী ভাইদের বাঁচাতে নিজেকে সোর্স হিসেবে ব্যবহার করছে। তবে, স্থানীয়দের দাবী সোর্স সোলতানের ভাইদের ব্যাপারে পুলিশ প্রশাসন একটু নজর দিলে বড়সরে প্রত্যকের নামে কি ধরণের মামলা রয়েছে তাদের পিসিপিআর চেক করলেই তার জট খুলবে বলে জানায়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সেগুনবাগিচা এলাকার কয়েক ব্যক্তি বলেন, আমির সোলতান নিজের ভাই ও ভাইয়ের গ্যাংকে বাঁচানোর জন্য সোর্স হিসেবে পেশাকে বেঁচে নেন। এলাকায় ভয়ঙ্কর সোর্স সোলতানের অপকর্মে অতিষ্ঠ সাধারণ জনগণ। কারণ সোলতান পুলিশের ভয় দেখিয়ে এলাকার মানুষের কাছ থেকে টাকা আদায় করছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

সম্প্রতি সময়ে মো. ফারুক নামের এক ব্যক্তির কাছ থেকেও নানা হুমকি-দমকি ও ভয় দেখিয়ে টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ তুলেছে সোর্স সোলতান বিরুদ্ধে। সোর্স সোলতান সম্পর্কে এলাকার নিরীহ লোকজন পুলিশের ভয়ে মুখ খুলছেন না। কারণ সোলতান পুলিশকে দিয়ে তাদের হয়রানী ও হেনস্থা করার ভয়ে। পুলিশ আসামী ধরতে খুটাখালী এলাকায় আসলেই আগে সোর্স সোলতানকে খুঁজে। সোলতান পুলিশের সাথে বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে বেড়ায় অপরাধী ধরতে।

সোলতান থানা পুলিশের কয়েকজন কর্মকর্তার সাথে সখ্যতা থাকার কারণে দিন দিন তার অপকর্ম বেড়েই চলেছে। সোলতান নিজেকে পুলিশের সোর্স পরিচয় দিয়ে বীরদর্পে ঘুরে বেড়ায়। এতে আইন শৃংখলায় নিয়োজিত পুলিশ প্রশাসনের চরমভাবে সুনামও ক্ষুন্ন হচ্ছে।

তারা আরও বলেন, এ সোর্স পরিচয়দারী সোলতানকে পুলিশ আটক করলে তার অপরাধী ভয়ংকর ডাকাত ভাইদেরকে আইনের আওতায় নিয়ে আসলে এলাকাটি অপরাধ মুক্ত হবে।

খুটাখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মৌলানা আবদুর রহমান জানান, পুলিশের সোর্স পরিচয়ে নিরীহ লোকজনকে যে হয়রানী করুক তাকে অবশ্যই আইনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। পুলিশ প্রশাসনের প্রতি বিষয়টি দ্রুত প্রদক্ষেপ নেওয়ার জন্য জোর দাবী জানাচ্ছি।

চকরিযা থানার ভারপ্রাপ্ত ইনচার্জ (ওসি) শাকের মোহাম্মদ যুবায়ের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, পুলিশের নিয়োজিত কোন সোর্স নেই। কেউ যদি সোর্স পরিচয়ে মানুষকে হয়রানী করে তাকে অবশ্যই আইনের আওতায় আনা হবে বলে তিনি জানান।acn:

 

পাঠকের মতামত: