ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪

জয়ের টাকার উৎস জানতে চায় জনগণ : খালেদা

khaleda-zia_1নিউজ  ডেস্ক  :

বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে একটি মামলার নথি থেকে জানা যায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে আড়াই হাজার কোটি টাকা জমা রয়েছে, এই টাকার উৎস কী জনগণ তা জানতে চায়।’

২০ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক দল জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) ৩৬তম জাতীয় কনভেনশনে প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি এ কথা বলেন। ‘পথের বাধা সরিয়ে দাও’ শিরোনামে এই কনভেনশনে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে জাগপার কাউন্সিলররা ও নেতাকর্মী অংশ নেন।

খালেদা জিয়া বলেন, ‘বর্তমানে যে সীমাহীন দুর্নীতি, নির্যাতন, লুটপাট চলছে দেশের মানুষ অতীতে তা কখনো দেখেনি। যুক্তরাষ্ট্রের একটি আদালতে একটি মামলার রায় নিয়ে এখন আমাদের দেশে ব্যাপক আলোচনা চলছে। কী সেই মামলা? এফবিআইয়ের একজন এজেন্টকে ঘুষ দিয়ে এক প্রবাসী বাংলাদেশী তরুণ বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর পুত্রের ব্যাপারে কিছু তথ্য সংগ্রহ করেছিল। সেই মামলার নথিতেই আছে প্রধানমন্ত্রীর পুত্রের একটি অ্যাকাউন্টেই আড়াই হাজার কোটি টাকার সমপরিমাণ তিনশ মিলিয়ন ডলার জমা আছে।’

তিনি বলেন, ‘এই টাকা কোথায় থেকে গেছে? এই টাকার উৎস কী? এভাবে তাদের তাদের আরো কত টাকা আছে? দেশের মানুষ তা জানতে চায়।’

সাবেক প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দেশের মানুষ মনে করে এই টাকা তাদের টাকা। এভাবে দুর্নীতি ও লুটপাটের মাধ্যমে অর্জিত বিপুল টাকা বিদেশে পাচার করে সম্পদের পাহাড় গড়ে তোলা হয়েছে। এ নিয়ে তদন্ত হওয়া উচিৎ। এ টাকা ফিরিয়ে আনা দরকার। কিন্তু এ টাকার ব্যাপারে সরকার নীরব।’

সরকারকে সময়ক্ষেপণ না করে দ্রুত রাজনৈতিক সংকট সমাধানের আহ্বান জানিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, ‘সময় দ্রুত ফুরিয়ে যাচ্ছে। দেশের মানুষের ওপর আস্থা রাখুন। চলমান সংকট আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করুন।’

সরকার ডিজিটাল কারচুপির মাধ্যমে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ চুরি করেছে বলেও মন্তব্য করেন বিএনপি প্রধান।

বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, ‘দেশে গত তিন মাসে পত্রিকার হিসাবে দেড় হাজার লোক খুন হয়েছে। দুর্নীতি ও লুটপাট করে দেশের সম্পদ বিদেশে পাচার করা হচ্ছে। শেয়ার বাজার থেকে লক্ষ কোটি টাকা লুটে নেয়া হয়েছে। ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদেরকে নিঃস্ব করে ফেলা হয়েছে। ব্যাংকগুলো থেকে লুটপাট হয়েছে হাজার হাজার কোটি টাকা।’

সাবেক প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার কাউকে কোনো নিরাপত্তা দিতে পারছেনা। কোথাও সুবিচার নেই। তবুও তারা দাবি করছে, পরিস্থিতি স্বাভাবিক। যা কিছু ঘটছে তা সব বিচ্ছিন্ন ঘটনা। অথচ দেশে প্রতিদিন গড়ে ১৪ জন খুন হচ্ছে। গুপ্তহত্যা ও অতর্কিতে হামলা চালিয়ে কুপিয়ে হত্যার ঘটনা আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে।’

তিনি বলেন, ‘ব্লগার, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, লেখক, প্রকাশক, বিদেশি নাগরিক, দূতাবাস কর্মী ও বিভিন্ন ধর্মীয় সম্প্রদায়ের লোকেরাও এ ধরণের হামলা ও হত্যার শিকার হচ্ছে।’

খালেদা জিয়া বলেন, ‘আজ আতঙ্কের ব্যাপার হচ্ছে, বিভিন্ন জঙ্গিগোষ্ঠির নামে এই সব হত্যার দায় স্বীকার করা হচ্ছে। এইসব ঘটনায় প্রতিটি নাগরিক আজ নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে শংকিত ও উদ্বিগ্ন। সরকার এসব হামলা ও হত্যার ঘটনা বন্ধ করতে পারছে না। আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসীদের উপস্থিতির কথা তারা অস্বীকার করছে। কিন্তু প্রকৃত অপরাধীদের সনাক্ত ও বিচার নিশ্চিত করতে পারছে না। বরং তারা এর দায়-দায়িত্ব চাপাচ্ছে বিরোধী দলের উপর। এতে তদন্ত প্রভাবিত হচ্ছে এবং প্রকৃত অপরাধীরা আড়ালে থেকে যাচ্ছে।’

২০ দলীয় জোট প্রধান বলেন, ‘আজ দেশের সম্মানিত নাগরিকদের মিথ্যা মামলা দিয়ে রিমান্ডে নিয়ে তাদেরকে অসম্মান করা হচ্ছে। তারই পরিপ্রেক্ষিতে প্রবীণ সাংবাদিক শফিক রেহমানকে গ্রেফতার করে রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন করেছে। কারারুদ্ধ আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকেও এই মামলায় জড়িয়ে রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। মিথ্যা অভিযোগ আনা হয়েছে, তারা না-কি প্রধানমন্ত্রীর পুত্রকে অপহরণ ও হত্যার পরিকল্পনা করেছিলেন। অথচ যুক্তরাষ্ট্রের আদালতের রায়েই এধরনের অভিযোগকে নাকচ করে দেয়া হয়েছে। এভাবে মিথ্যা প্রচারণা, অত্যাচার, নানা ইস্যু সৃষ্টি করে তারা তাদের অপরাধগুলো ঢেকে রাখতে চায়। জনগণের দৃষ্টিকে অন্যদিকে সরিয়ে দিতে চায়।’

দেশের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী তাদের কাজ স্বাভাবিকভাবে করতে পারছেন না অভিযোগ করে খালেদা জিয়া বলেন, ‘আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে শুধু রাখা হয়েছে গণবিচ্ছিন্ন ও অবৈধ সরকারকে জনগণের ক্ষোভ থেকে রক্ষা করার জন্য। তারা সাধারণ মানুষের ওপর নির্যাতন চালাচ্ছে। বিচারবহির্ভূতভাবে যাকে খুশি তাকে হত্যা করছে। জোর করে ধরে নিয়ে গিয়ে গুম ও খুন করে ফেলছে। যেখানে সেখানে খুনের শিকারদের লাশ পাওয়া যাচ্ছে।’

সাবেক প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা একটি দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দল হিসাবে প্রতিবেশীসহ সকল দেশের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ ও মৈত্রীর সম্পর্ক চাই। আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সকল দেশের সঙ্গে সব সমস্যা নিরসনের নীতিতে আমরা বিশ্বাসী। তবে একটি স্বাধীন দেশ হিসাবে আমরা সবকিছুই করবো সমমর্যাদার ভিত্তিতে। আমরা কারো কাছে মাথা নত করবো না।’

জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি-জাগপার সভাপতি শফিউল আলম প্রধানের সভাপতিত্বে সম্মেলনে আরো বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য এমাজউদ্দীন আহমদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও গবেষক ড. সুকোমল বড়ুয়া, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, যুগ্ম মহাসচিব মাহবুব উদ্দিন খোকন, খায়রুল কবির খোকন, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সাংগঠনিক সম্পাদব বিলকিস জাহান শিরিন, শ্যামা ওবায়েদ।

২০ দলীয় জোট নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ন্যাশনাল পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এনডিপির সভাপতি খণ্দকার গোলাম মোর্ত্তজা, জাতীয় পার্টি (জাফর) মহাসচিব মোস্তফা জামাল হায়দার, বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, খেলাফত মজলিসের নায়েবে আমির সৈয়ধ মুজিবুর রহমান প্রমুখ। সুত্র : পরিবর্তন

পাঠকের মতামত: