ঢাকা,শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪

কুতুবদিয়া পিআইও অফিস দুর্নীতির আখড়া-চেক না দিয়ে বুঝে পাবার দস্তখত আদায়

এইচএম এরশাদ, কক্সবাজার ::   দ্বীপ উপজেলা কুতুবদিয়ায় পিআইও অফিস দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে। প্রায় ৬০লাখ টাকার বিভিন্ন প্রকল্পকাজে মোট বরাদ্দের অর্ধেক টাকার চেক বিতরণ করে পিআইও নিজেই টাকা উত্তোলন করার সুবিধার্থে দ্বিতীয় চেকেরও স্বাক্ষর আদায় করে নিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
জানা যায়, প্রধানমন্ত্রীর তহবীল থেকে স্থানীয় সংসদ সদস্যের মাধ্যমে গ্রাম উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য চাহিদা মতে গোটা দেশে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। তদ্রæপ কুতুবদিয়াতেও জনসেবামুলক প্রতিষ্টান ও রাস্তাঘাট সংস্কারকল্পে বরাদ্দ এসেছে। গত এপ্রিল মাসে স্থানীয় সংসদ সদস্যের দেয়া প্রকল্প কমিটি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অনুমোদন দিয়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার অফিসে (পিআইও) প্রেরণ করে কাজ আরম্ভের নির্দেশ প্রদান করেন। পিআইও বিভিন্ন কাবিকা ও টিআর প্রকল্প ভাগ করে বরাদ্দের টাকা টিআর-এ ২কিস্তি ও কাবিকা প্রকল্পে তিন কিস্তি করে টাকার দেয়ার নিয়ম করে প্রথম কিস্তির একটি করে চেক ঠিকাদার তথা প্রকল্প বাস্তবায়নকারীর হাতে তুলে দেন। সোনালী ব্যাংকে চেক জমা করে প্রকল্পের প্রথম কিস্তির অর্ধেক টাকা পেয়ে কেউ কেউ ইতোমধ্যে কাজ শুরু করে দিয়েছেন। অনেকে কাজ শুরু করার উপকরণ প্রস্তুত করে কাজ আরম্ভ করার অপেক্ষায় আছেন। গত ২৫ এপ্রিল থেকে সর্বশেষ ৪মে পর্যন্ত নির্ধারিত প্রকল্পের অনুকুলে এই চেকগুলো বুঝে নেন স্ব স্ব প্রকল্প বাস্তবায়ন কারী সভাপতিরা।
সূত্র জানায়, কুতুবদিয়া উপজেলার বিভিন্ন রাস্তাঘাট, কবরস্থান, পাঠাগার, মসজিদ-মন্দির, কালভার্ট সংস্কার ও বিদ্যুতায়ন প্রকল্প কাজে দলীয় নেতা, ঠিকাদার/প্রকল্প বাস্তবায়নকারী ব্যক্তি-প্রতিষ্টানকে নিয়োগ করা হয়। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রত্যেক প্রকল্প সভাপতির হাতে প্রথম কিস্তির চেক তুলে দেয়ার সময় প্রতিটি চেকের বিপরিতে অফিস খরচের দোহাই দিয়ে দুই হাজার টাকা করে হাতিয়ে নিয়েছেন পিআইও। এখানে অশ্চর্যজনক বিষয় হচ্ছে- পিআইও খোকন চন্দ্র সাহা প্রথম কিস্তির চেক দেয়ার সময় দ্বিতীয় কিস্তির চেকও প্রকল্পের স্বস্ব সভাপতিরা বুঝে পেয়েছেন বলে কৌশলে খাতায় দস্তখত আদায় করে নিয়েছেন। তাদের অভিযোগ দ্বিতীয় কিস্তির চেক বিতরন না করে রেজিষ্টারে বুঝে পাবার দস্তখত আদায় করা বিধি সন্মত না হলেও ওইসব চেকের বিপরিতে সমস্ত টাকা উত্তোলন করবেন পিআইও। কাজ বাস্তবায়নকারী অনেকে অভিযোগ করে বলেন, শুনা যাচ্ছে ব্যাংক থেকে প্রকল্পগুলোর টাকা উত্তোলন শেষে প্রকল্প সমভাপতিদের জিন্মি করে ১০হাজার টাকা হারে ঘুষ আদায় করার জন্য পিআইও এই অবৈধ কাজটি (অগ্রিম দস্তখত) আদায় করেছেন। তারা আরও বলেন, কাজ শেষে কাজের গুণগত মান ভাল হয়নি বা বিভিন্ন কৈফিয়ত তলব করে ইতোপূর্বে ঠিকাদার ও প্রকল্প সভাপতির কাছ থেকে মোটা অঙ্কের উৎকোচ আদায় করেছেন তিনি। গত দুইবছর ধরে কুতুবদিয়া উপজেলার একই পদে বহাল থেকে পিআইও খোকন চন্দ্র সাহা দু’হাতে কামাই করছেন উৎকোচের টাকা।
জানা যায়, ২০১৯-২০অর্থ বছরে কুতুবদিয়ার উন্নয়ন কাজের জন্য বিভিন্ন অঙ্কে তথা ৪৫, ৫০ ও ৯০হাজার টাকায় টি.আর এবং দেড় লাখ থেকে দুই লক্ষ টাকায় কাবিকা প্রকল্পের টাকা বরাদ্দ করা হয়। দলীয় নেতাকর্মী ও চেয়ারম্যান-মেম্বারদের এইসব প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। ৪৫হাজার টাকা বরাদ্দের প্রকল্পে ২২হাজার ৫০০টাকার করে প্রথম কিস্তির চেক দেয়া হয়েছে যথা নিয়মে। ওই চেক দেয়ার সময় অফিস খরচের কথা বলে আদায় করা হয়েছে ২হাজার টাকা করে। বাকী ২২৫০০টাকা নেয়ার সময় ১৪হাজার টাকা করে নগদ দিয়ে ৮৫০০টাকা করে বিভিন্ন অজুহাতে কেটে নেয়ার পায়তারা করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। সরকারী বরাদ্দের দ্বিতীয় কিস্তির চেক না দিয়েও অগ্রিম দস্তখত আদায় করে নিয়ে সব প্রকল্পের সভাপতিকে জিন্মি করে রাখায় তারা ঠিকমত প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়ন করতে হিমশিম খাচ্ছেন বলে জানা গেছে। অভিযোগ উঠেছে কুতুবদিয়ায় পিআইও হিসেবে টানা গত ২বছর ধরে দায়িত্ব পালন করে খোকন সাহা লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ ও ঠিকাদারদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের ঘুষ আদায় করে বিভিন্ন স্বজনদের একাউন্টে ওই টাকা জমা করে রেখেছেন।
সারা দেশের ন্যায় সরকার কুতুবদিয়াতেও গ্রামীণ বিভিন্ন অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য নগদ টাকা ও চাল বরাদ্দ দিয়ে আসছে। ওইসব প্রকল্পের এক তৃতীয়ংশ টাকা কৌশলে পিআইও আদায় করে নিয়ে থাকেন বলে অভিযোগ রয়েছে। যার কারণে প্রকল্পের কাজগুলো ঠিকমত বাস্তবায়ন হচ্ছেনা। এতে সরকারের বরাদ্দ মতে স্থানীয়রা জনসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন বারবার। #

পাঠকের মতামত: