ঢাকা,মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪

চকরিয়ায় খেটে খাওয়া মানুষ রাস্তায়, নেই ত্রাণ তৎপরতা

নিজস্ব প্রতিবেদক, চকরিয়া ::  করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবেলায় দুই দফায় ঘোষিত লকডাউন মানছেন না কক্সবাজারের চকরিয়ার সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ। লকডাউনের দিন যতই বাড়ছে ততই হাট-বাজার, রাস্তা-ঘাটে মানুষের উপস্থিতি বাড়ছে। বিশেষ করে দিনমজুরসহ খেটে খাওয়া মানুষগুলো পরিবার সদস্যদের মুখে দুই বেলা খাবার জুটাতে প্রতিনিয়তই কাজের সন্ধানে বের হয়ে পড়ছেন। এদের মধ্যে কেউ ব্যাটারী চালিত ইজিবাইক টমটম, আবার কেউ ব্যাটারী চালিত অটোরিক্সা নিয়ে সড়ক-মহাসড়কে নেমে পড়ছেন। পাল্লা দিয়ে সাধারণ মানুষও ঘর থেকে বেরিয়ে পড়ায় রীতিমতো স্বাভাবিক পরিস্থিতি বিরাজ করছে চকরিয়া পৌরশহর চিরিঙ্গায়।
এদিকে রমজান মাস হওয়ায় আগামী ঈদের কেনাকাটা সারতেও প্রত্যন্ত এলাকা থেকে মানুষ পৌরশহর চিরিঙ্গামুখি হচ্ছেন। কোন ধরনের বিপনী বিতান বা শপিংমল খোলা না রাখার বিষয়ে স্পষ্ট সরকারি নির্দেশনা থাকলেও তা পৌরশহরের চিরিঙ্গার বিপনী বিতানগুলোতে মানা হচ্ছে না। পৌরশহরের বেশ কয়েকটি বিপনী বিতানের ভেতরে অসংখ্য দোকান খোলা রেখে দিব্যি ব্যবসা চালানো হচ্ছে। বিপনী বিতানের বাইরে নিজেদের লোক দাঁড় করিয়ে রেখে অনেকটাই গোপনে ভেতরে ঢোকানো হচ্ছে ক্রেতাদের। এক্ষেত্রে পুলিশের কোন ধরণের নজরদারীর দেখা মিলছে না।
অপরদিকে চকরিয়া পৌরশহর চিরিঙ্গা এবং অভ্যন্তরীণ সড়কগুলোতে চলাচলরত ব্যাটারীচালিত ইজিবাইক টমটম ও রিক্সাগুলোও অবাধে চলাচল করতে দেখা গেছে। মাঝে মধ্যে পুলিশ অভিযান চালিয়ে কিছু কিছু গাড়ি ধরে থানায়ও নিয়ে যাচ্ছে, আবার ট্রাফিক বিভাগের পক্ষ থেকে মামলাও দেওয়া হচ্ছে। এসব কিছু করেও লকডাউন কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন সম্ভব হচ্ছে না। এতে মাঠপর্যায়ে করোনার সংক্রমণের ঝুঁকি দিন দিন বেড়েই চলেছে।
লকডাউনে রাস্তায় বের হওয়া প্রসঙ্গে খেটে খাওয়া ও দিনমুজর শ্রেণীর অসংখ্য মানুষ জানিয়েছেন, সরকার করোনা মোকাবেলায় লকডাউন ঘোষণা করেছে ঠিকই। কিন্তু দিনমজুর, খেটে খাওয়া মানুষগুলোর জন্য এখনো পর্যন্ত কোন ধরনের সহায়তা দেওয়া হয়নি। এতে এই রমজানের মধ্যে পরিবারের সদস্যদের দুই বেলা খাবার জোগাড় করা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। তাই বাধ্য হয়েই পেটের দায়ে তারা কাজের সন্ধানে বা ইজিবাইক টমটম-রিঙা নিয়ে রাস্তায় নেমেছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে চকরিয়া অসংখ্য সচেতন ব্যক্তি বলেন, করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবেলায় দুইদফায় সরকারের ঘোষিত লকডাউন ও সর্বাত্মক লকডাউন শেষ হতে চললেও এখনো পর্যন্ত সরকারি বা বেসরকারীভাবে কোন ত্রাণ তৎপরতা চোখে পড়ছে না। এই অবস্থায় আবারো একসপ্তাহ সর্বাত্মক লকডাউন বাড়িয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সরকার। এই পরিস্থিতিতে সরজমিন খেটে খাওয়া মানুষগুলোর পেটের ক্ষুধা নিবারণে রাস্তায় নামতে বাধ্য হচ্ছেন।
তারা আরো বলেন, সরকার যদি দিনমজুর ও খেটে খাওয়া মানুষগুলোর তালিকা করে তাদের বাড়িতে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য পণ্যসামগ্রীর ব্যবস্থা করতো তাহলে সবকিছুই ঠিকঠাকভাবে চলতো। তা না করে সরকার যতই লকডাউন দিক না কেন তা কোনভাবেই সফল হবে না।
সচেতন নাগরিক কমিটি চকরিয়ার সদস্য এম আর মাহমুদ বলেন, গত বছর লকডাউন চলাকালে সরকারি, বেসরকারী এবং ব্যক্তিপর্যায় থেকে ব্যাপকভাবে ত্রাণ তৎপরতা চালানো হয়েছিল। সেই সময় সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষও লকডাউন অনেকটাই মেনে ঘরে অবস্থান করছিলেন। কিন্তু এবারের লকডাউন কার্যত কাগজে-কলমে সীমাবদ্ধ রয়েছে। এর কারণ হিসেবে দেখা যাচ্ছে, লকডাউনের কারণে হাজার হাজার পরিবার কর্মহীন হয়ে পড়েছে। তারা এখনো পায়নি কারো কাছ থেকে কোন ধরণের সহায়তা। তাই কর্মহীন হয়ে পড়া মানুষগুলোকে আর ঘরে বন্দি করে রাখা যাচ্ছে না। পেটের ক্ষুধার তাড়নায় তারা ঘর থেকে বেরিয়ে পড়ছে কাজের সন্ধানে।
এ ব্যাপারে চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ শামসুল তাবরীজ বলেন, লকডাউনে ক্ষতিগ্রস্ত খেটে খাওয়া পরিবারগুলোর পাশে দাঁড়ানোর জন্য আমি বিভিন্ন এনজিও সংস্থা এবং বিত্তবানদের সাথে যোগাযোগ করে যাচ্ছি। যাতে লকডাউনের সময় এই শ্রেণীর মানুষগুলো অন্তত সহায়তা পায়।
কক্সবাজার-১ আসনের সংসদ সদস্য জাফর আলম বলেন, ঈদের আগে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে উপহার হিসেবে নগদ টাকা দেওয়া হবে গরীব, দিনমজুর, অসহায় শ্রেণীর পরিবারগুলোকে। এজন্য জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। করোনার সংক্রমণ মোকাবেলায় সবাইকে একটু কষ্ট মেনে নিতে হবে।

পাঠকের মতামত: