ঢাকা,শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

হাটহাজারীতে পুলিশ-হেফাজতের সংঘর্ষে ৩জন মাদ্রাসা ছাত্রসহ নিহত ৪

চট্রগ্রাম প্রতিনিধি :: স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর আগমের প্রতিবাদে আজ শুক্রবার বাদ জুমা হাটহাজারী বড় মাদ্রাসা থেকে হেফাজতের বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। বিক্ষোভকারীরা হাটহাজারী মডেল থানা এলাকায় পৌঁছালে থানা লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে।

এসময় পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ আনতে ইটপাটকেল নিক্ষেপকারীদের লক্ষ্য করে গুলি ছুঁড়ে। এতে পুলিশ ও বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষে দুই পুলিশ ও এক সাংবাদিকসহ ২৬ জন আহত হয়েছে। আহতদের উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসলে তাদের মধ্যে ১২ জনের আঘাত গুরুতর হওয়ায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (চমেক) হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়।

এ সংঘর্ষের ঘটনায় কুমিল্লার বরিউল ইসলাম, মাদারীপুরের হাফেজ মিরাজুল ইসলাম, ময়মংসিংহের আব্দুল্লাহ মিজান ও হাটহাজারী মো. জসিমের মৃত্যু হয়েছে। নিহতের মধ্যে তিনজন মাদ্রাসার শিক্ষার্থী ও একজন পথচারী বলে জানা যায়।

এঘটনায় বিক্ষোভকারীরা আরো বিক্ষুদ্ধ হয়ে হাটহাজারী-পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ি, হাটহাজারী রাঙ্গামাটি মহাসড়ক অবরোধ করে রাখলে যাত্রীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত সড়কের যানচলাচল বন্ধ ছিল। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পর্যাপ্ত পরিমাণ পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

হেফাজতের কেন্দ্রীয় সহাকারি সাংগঠনিক সম্পাদক মীর ইদ্রিসের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, শুক্রবার বাদ জুমা বায়তুল মোকারমে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভের উপর অতর্কিত পুলিশি হামলার প্রতিবাদে হাটহাজারী বড় মাদ্রাসা থেকে একটি মিছিল বের করলে মিছিলটি থানার কাছাকাছি যাওয়ার সাথে সাথে পুলিশ অতর্কিতভাবে হামলা চালায়।

এতে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় চারজনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদেরকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। তবে তিনি তাৎক্ষণিকভাবে নিহতদের নাম জানাতে পারেননি। আহত আরো বেশ কয়েকজনকে উক্ত হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রাখা হয়েছে।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পুলিশ ফাঁড়ির উপ-পরিদর্শক আলাউদ্দীন তালুকদার গুলিবিদ্ধ চারজন মারা গেছে বলে জানান এবং অন্যান্য আহতদের অর্থোপেডিক সার্জারি ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন রাখা হয়েছে বলে উল্লেখ করেন।

উপজেলা স্বাস্থ্য পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. এএসএম ইমতিয়াজ হোসাইন বলেন, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২৬ জনকে আহত অবস্থায় আনা হলে চারজনকে চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়। ২২ জনের আঘাত গুরুতর হওয়ায় তাদেরকে চমেক হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে।

সহকারি কমিশনার (ভুমি) শরীফ উল্যাহ বলেন, বিক্ষোভকারীরা ভূমি অফিসের প্রধান ফটক, অফিস ভাংচুর করে। এসময় অফিস থেকে গুরুত্বপূর্ণ নথি ও ভূমি অফিসের গাড়ীতে আগুন জালিয়ে দেয়। তাছাড়া ডাকবাংলা ও ভাংচুর করেন।

এদিকে ঘটনার ব্যাপারে থানার ওসি মোহাম্মদ রফিকুল ইসলামকে জানার জন্য ৬টা ৫২ মিনিটে এবং অতিরিক্তি পুলিশ সুপার হাটহাজারী সার্কেল শাহাদাত হোসেনকে ৬ টা ৫৩ মিনিটে ফোন করলে তারা ফোন রিসিভ করেনি।

আহত সংবাদিক খোরশেদ আলম শিমুল জানান, তিনি ভূমি অফিসের গাড়ীতে, নথিপত্রে আগুন ও অফিস ভাংচুর চালানোর সময় ছবি তুলতে গেলে বিক্ষোভকারীরা তার উপর হামলা চালায়। এতে তিনি আহত হয়। এ রির্পোট লেখার সময় হাটহাজারী থেকে নির্বাচিত সাংসদ ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মহামুদ, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মাদ রুহুল আমিন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হাটহাজারী সার্কেল ও থানার ওসি বৈঠকে রয়েছেন।

পাঠকের মতামত: