ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ৯ মে ২০২৪

আগুনে জীবন-প্রদীপ নিভে গেছে তিন ভাই-বোনের

আদরের তিন সন্তান হারিয়ে বাকরুদ্ধ বাবা-মা চকরিয়ায়

এম.জিয়াবুল হক, চকরিয়া :: বাবা জাগির হোসেন পেশায় ইঞ্জিন মেস্ত্রী। কাজলী আক্তার গৃহিণী। পরিবারটি হতদরিদ্র। পরিশ্রম করেই দিনাতিপাত করতেন। স্বামী-স্ত্রী বৃদ্ধ মাসহ সাত জনের সংসার। তাদের বসবাস চকরিয়া উপজেলার হারবাং ইউনিয়নের ৮নম্বর ওয়ার্ডস্থ সাবান ঘাটা নামক গ্রামের বনবিভাগের সংরক্ষিত বনের জমিতে মাটির ঘরে।

ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস খাওয়া-দাওয়া শেষে সোমবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে বাড়িতে সবাই ঘুমিয়ে পড়েন। প্রতিদিন রাতে দাদির কক্ষে থাকতেন জাগির হোসেন মেস্ত্রীর তিন শিশু সন্তান জাহেদুল ইসলাম জিহাদ (১২), তার দুই ছোট বোন ফৌজিয়া জান্নাত মিম (১০) ও আফিয়া জান্নাত মিতু মনি (৮)। ঘটনার দিন রাতে দাদী বেড়াতে যান তার মেয়ের বাড়িতে। দাদীবিহীন ওই কক্ষে প্রতিরাতের মতো সোমবারও ঘুমিয়ে পড়েন তিন শিশু।

বাবা জাগির হোসেন ও মা কাজলী আক্তার দুইবছর বয়সী শিশু সন্তানকে নিয়ে ঘুমিয়ে পড়েন অন্য কক্ষে। রাত আনুমানিক ১২ টার দিকে আকস্মিক ভাবে বৈদ্যুতিক শটসার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত ঘটে নিমিষেই সম্পূর্ণ বাড়িটি লেলিহান শিখায় আগুনের নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। এসময় প্রতিবেশীরা এগিয়ে আসলেও আগুন নিয়ন্ত্রণেরর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। ভাগ্যেচক্রে প্রাণে বেঁচে যান জাগির হোসেন, তার স্ত্রী ও দুইবছর বয়সের শিশু সন্তান।

আগুনের শিখায় পুড়ে যাওয়া বাড়ি থেকে একে একে বের করা হয় জাগির হোসেনের নাড়ি ছেড়া ধন তিন সন্তানের মরদেহ। এসময় তিন সন্তানহারা বাবা-মায়ের আত্বনাদে পুরো এলাকায় সৃষ্টি হয়েছে হৃদয় বিদারক দৃশ্য।

মা কাজলী আত্বনাদ করে প্রলাপ করছিল হয়তো সব ফিরিয়ে পাবো কিন্তু আমার নাড়ি ছেড়া তিন সন্তান গুলো কি ফিরে পাবো বলে জ্ঞান হারিয়ে মুর্ছা যাচ্ছিল। ওই সময় ঘটনাস্থলে ছুটে আসা আশপাশের লোকজন শত চেষ্টা করেও সান্তনা দিতে পারছিলনা সন্তান হারানো বাবা-মাকে।

এলাকাবাসির বরাত দিয়ে স্থানীয় হারবাং ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মিরানুল ইসলাম মিরান জানান, বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত ঘটেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সেমিপাকা বাড়িটি পুড়ে যাওয়ার সময় পরিবার সদস্যরা দুইটি আলাদাকক্ষে ঘুমন্ত অবস্থায় ছিল। তদমধ্যে একটি কক্ষে মা-বাবা ও দুইবছরের এক শিশু, অন্যকক্ষে ছিলেন তিন ভাই-বোন।

এলাকাবাসি জানান, আগুন লাগার সময় ওই তিন শিশু তাদের কক্ষে ঘুমে থাকায় থেকে বের হতে পারেননি। বাড়ির অন্য সদস্যরা আরেকটি কক্ষে থাকায় তারা প্রাণে বেঁচে যান।

চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাকের মোহাম্মদ যুবায়ের বলেন, ‘হারবাং সাবানঘাটা গ্রামে একটি বাড়ি আগুনে পুড়ে যাওয়ার খবর পেয়ে রাতেই হারবাং পুলিশ ফাঁড়ির দায়িত্বরত একটি টিমকে ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়। মঙ্গলবার সকালে আইনী প্রক্রিয়া শেষে লাশ দাফনের ব্যবস্থা নেয়া হয়।

হারবাংয়ে নির্মম ট্রাজেডির খবরপেয়ে মঙ্গলবার সকালেই ঘটনাস্থলে ছুটে যান চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সৈয়দ শামসুল তাবরীজ। তিনি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে সান্তনা দেন। পরে ওই পরিবারকে প্রশাসনের পক্ষথেকে নগদ বিশ হাজার টাকা, কম্বল, শুকনো খাবারসহ বিভিন্ন উপকরণ তুলে দেন।

চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএসও) সৈয়দ শামসুল তাবরীজ বলেন, বসতঘরে আগুনে পুড়ে তিন শিশুর মৃত্যুর ঘটনাটি সবাইকে ব্যথিত করেছে। এঘটনায় চকরিয়া উপজেলা প্রশাসন গভীরভাবে শোকাহত।

তিনি বলেন, অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারকে প্রাথমিকভাবে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষথেকে কিছু সহায়তা দেওয়া হয়েছে। আরও সহায়তা দিতে জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষথেকে সহযোগিতার ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিষয়টি ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসক মহোদয়কে জানানো হয়েছে।

অপরদিকে আগুনে পুড়ে তিন শিশু মারা যাওয়ার ঘটনায় হারবাং ইউনিয়নের পাশাপাশি পুরো চকরিয়া উপজেলার ধর্মবর্ণ নির্বিশেষে সর্বস্থরের মানুষের মাঝে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।##

পাঠকের মতামত: