ঢাকা,শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

কোপাকুপির আতঙ্কে কাঁপছে স্বদেশ!

208168_1-400x224ডেস্ক রিপোর্ট :

সর্বশেষ রুপবানের দুইজনকে আজ কুপিয়ে খুন করা হয়েছে। তারা লেখালেখি না করলেও সমকামীদের অধিকার নিয়ে কাজ করতেন তারা, তাই তাদের খুন বাংলাদেশে জায়েজ হয়ে গেছে। একই সাথে কুষ্টিয়ায় একজন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষককে কুপিয়ে হত্যা করে হয়েছে। কাশেমপুর কারাগারের প্রধান কারারক্ষীকে গুলি করে খুন করা হয়েছে। এরপরেও নাকি সব পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে।

ওদিকে আছে চাটুকার আর ক্ষমতাসীনদের ময়লা পরিষ্কার করা মেথরের দল। দেশ আসলেই স্বাভাবিক আছে। তবে আমার, আপনার মত সাধারন মানুষের জন্য না। একজন ফেসবুক সিলেব্রেটির স্ট্যাটাসে এভাবেই বর্তমান দেশের পরিস্থিতি ফুটে উঠেছে।

এদিকে, দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে কোপাকুপির আতঙ্ক। কে কখন সন্ত্রাসীদের চাপাতির লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হন এই ভয় জেঁকে বসেছে সবার মনে। আর কী অপরাধে মানুষ একের পর এক খুন হচ্ছেন, তা কেউ জানছে না। আইনশৃক্সখলা বাহিনী কিংবা গোয়েন্দা সংস্থার লোকজনও এ বিষয়ে স্পষ্ট কোনও ধারনা দিতে পারছে না।

ইদানিং শুধু চাপাতির ব্যবহার করেই খুনিরা আর সন্তুষ্ট থাকছে না। এর সঙ্গে তারা যুক্ত করে নিয়েছে গুলি। টার্গেট করা ব্যক্তির মৃত্যু দ্রুত নিশ্চিত করতেই খুনিরা গুলির ব্যবহার করছে। কুপিয়ে গুলি করে মৃত্যু নিশ্চিত করে বুক ফুলিয়ে হেঁটে চলে যাচ্ছে। অথবা মোটরসাইকেলে করে এসে খুন করে দ্রুত পালিয়ে যাচ্ছে।

মাত্র ৬০ ঘণ্টার ব্যবধানে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রেজাউল করিম, কাশিমপুর মহিলা কারাগারের সাবেক প্রধান কারারক্ষী রুস্তম আলী ও রাজধানীর কলাবাগানে নিজ বাসায় দুই বন্ধুর খুনের ঘটনায় জনমনে আতঙ্ক আরও দানা বেঁধেছে। এর আগে এ মাসের শুরুতেই রাজধানীর সুত্রাপুরে অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নাজিম উদ্দিনকে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করা হয়। ইসলামপুরের ঝব্বু খানম জামে মসজিদের মুয়াজ্জিন বেলাল হোসেনকেও মসজিদে ঢুকে একই কায়দায় কুপিয়ে হত্যা করা হয়।

এছাড়া সোমবার রাত ৯টার দিকে কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় এক স্কুলশিক্ষককে কুপিয়ে এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ার একজনকে গলা কেটে হত্যা করা হয়েছে।

আর গত ৯ দিনে সারাদেশে ৪০ জনের বেশি খুন হয়েছেন বিভিন্ন ঘটনায়।

তবে এতসব হত্যাকা-ের পরও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল দেশকে ‘নিরাপদ’ বলেছেন। এসব ঘটনাকে ‘বিচ্ছিন্ন ঘটনা’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন তিনি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, ‘উন্নত অনেক দেশের তুলনায় বাংলাদেশ এখনও অনেক নিরাপদ। দেশের আইনশৃক্সখলা পরিস্থিতিও ভালো। দেশীয় সন্ত্রাসী গোষ্ঠী ছাত্রশিবির, জেএমবি ও আনসারুল্লাহ এসব কাজ করছে। নতুন ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে এসব ঘটনা ঘটানো হচ্ছে।’

রবিবার বেলা সোয়া ১১টার দিকে গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারের প্রধান ফটকের মাত্র দুইশ’ গজের মধ্যে একটি ওষুধের দোকানে বসে পত্রিকা পড়ছিলেন সেখানকার মহিলা কেন্দ্রীয় কারাগারের সাবেক প্রধান কারারক্ষী রুস্তম আলী। এ সময় তিন দুর্বৃত্ত মোটরসাইকেলে এসে খুব কাছ থেকে তাকে গুলি করে চলে যায়। সেখান থেকে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়ার আগেই তিনি মারা যান। তিনি অবসরকালীন ছুটিতে ছিলেন। গত নভেম্বরে তিনি অবসরে যান।

ঘটনার পর ঘটনাস্থলে ছুটে যান আইজি প্রিজনসহ কারা অধিদফতরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। সেখানে আইজি প্রিজন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ ইফতেখার উদ্দীন সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘পুলিশ হত্যাকা-ের তদন্ত করছে। তদন্ত শেষেই জানা যাবে কী কারণে কারা তাকে হত্যা করেছে। জঙ্গি সংশ্লিষ্টতা ছিলো কিনা সেটাও তদন্ত শেষে জানা যাবে।’

আইজি প্রিজন আরও বলেন, ‘যে কারণেই হোক, এই হত্যাকা- যাতে চাপা না পড়ে যায় সেজন্য বিভাগীয়ভাবে তদন্ত কার্যক্রম চালানো হবে। এজন্য কারা অধিদফতরের ঢাকা বিভাগের ডিআইজি প্রিজন গোলাম হায়দারকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়েছে। কমিটির অন্য ২ সদস্য হচ্ছেন, কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার মিজানুর রহমান ও কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-১ এর জেলার তরিকুল ইসলাম।’

তদন্ত কমিটির প্রধান গোলাম হায়দার বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, তারা এরইমধ্যে তদন্ত কাজ শুরু করেছেন। কী কারণে হত্যাকা- তদন্ত শেষেই তারা জানাতে পারবেন।

গাজীপুরের পুলিশ সুপার মো. দেলোয়ার হোসেন জানান, হত্যাকা-ের সবগুলো কারণ সামনে রেখে তারা তদন্ত শুরু করেছেন। তবে দু’টি বিষয়ে তারা গুরুত্ব দিচ্ছেন তদন্তে। চাকরিতে থাকা অবস্থায় কোনও সন্ত্রাসী ও জঙ্গি গোষ্ঠীর সঙ্গে এবং পারিবারিক কোনও বিরোধ ছিলো কিনা সেটা খতিয়ে দেখছেন তারা। তদন্ত শেষে খুব অল্প সময়ের মধ্যে এ হত্যাকা-ের কারণ জানাতে পারবেন বলেও জানান তিনি।

গাজীপুরের কোনাবাড়ি পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই মোবারক হোসেন জানান, জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ফার্মেসির মালিক সাইফুল ইসলাম, নিহতের মেয়ের জামাই সোহেল রানা ও ভাই শাহ আলমকে থানায় রাখা হয়েছে।

এ ঘটনার রেশ না কাটতেই সন্ধ্যায় রাজধানীর কলাবাগানের তেঁতুলতলার একটি বাসায় ঢুকে জুলহাজ মান্নান ও তার বন্ধু মাহবুব তনয়কে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। বেরিয়ে যাওয়ার সময় খুনিরা ‘আল্লাহু আকবর’ বলে সেøাগানও দেয়। জুলহাজ মান্নান সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনির খালাতো ভাই। তিনি যুক্তরাষ্ট্র দুতাবাসের সাবেক প্রটোকল কর্মকর্তা ও ইউএসএআইডির কর্মকর্তা ছিলেন। একইসঙ্গে জুলহাজ মান্নান বাংলাদেশের প্রথম সমকামীদের পত্রিকা রূপবানের সম্পাদক ছিলেন।

জুলহাসের বন্ধু নিহত মাহবুব তনয় আশা ইউনিভার্সিটির ছাত্র ও লোকনাট্য থিয়েটারের কর্মী ছিলেন।

ঘটনার পর ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া সাংবাদিকদের বলেন, ‘জুলহাজ মান্নান ও মাহবুব তনয় হত্যাকা- একটি টার্গেট কিলিং। বিভিন্ন কারণে এ হত্যাকা- হতে পারে। ব্যক্তিগত ও লেনদেন সংক্রান্ত কারণেও হতে পারে। জঙ্গিরাও এ হত্যাকা-ের সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে। থানা পুলিশ, ডিবি, সিআইডিসহ বিভিন্ন সংস্থার গোয়েন্দারা তদন্ত শুরু করেছেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘ইতোমধ্যে ঘটনাস্থল থেকে বেশ কিছু আলামত জব্দ করা হয়েছে। শিগগিরই খুনিদের শনাক্ত করে গ্রেফতারের পর আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে। তখন হত্যাকা-ের প্রকৃত কারণও জানা যাবে।’

গত ৬ এপ্রিল রাজধানীর সুত্রাপুরে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সান্ধ্যকালীন কোর্সের ছাত্র ও অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট নাজিম উদ্দিনকে গুলি ও কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। এর আগে ৩ এপ্রিল রাতে পুরান ঢাকার ইসলামপুরে ঝব্বু খানম জামে মসজিদের মুয়াজ্জিন বেলাল হোসেনকে মসজিদে ঢুকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। বাংলাট্রিবিউন

 

পাঠকের মতামত: