ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪

চকরিয়া ইউপি নির্বাচনে হেভিওয়েট প্রার্থীদের পরাজয় ৪৩ বছর ধরে ক্ষমতা থাকা আবদুল হাকিমকে হটিয়ে মসনদে মহসিন বাবুল

Chakaria Picture 24-04-2016 copyমিজবাউল হক, চকরিয়া:
গত ২৩এপ্রিল তৃতীয় ধাপে চকরিয়ার ১২টি ইউপি’র নির্বাচন শান্তিপূর্নভাবে সম্পন্ন হয়েছে। নির্বাচনে বিপুল ভোটের ব্যবধানে আওয়ামীলীগের ৭জন, বিএনপি’র ২জন, জাতীয় পার্টির ১জন, স্বতন্ত্র (জামায়াত) ২জন চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। এদিকে নির্বাচনের পর আওয়ামীলীগ ও বিএনপি ও জামায়াতের হেভিওয়েট ৪ জন চেয়ারম্যান প্রার্থীর পরাজয় নিয়ে এখন আলোচনা ও সমালোচনার ঝড় চলছে পুরো জেলা জুড়ে। জয়-পরাজয়ের বিষয়টি মেনে নিতে পারছে না তাদের সমর্থকরা। আবার হেভিওয়েট প্রার্থীদের পরাজয়ও নতুন প্রজন্মের নেতৃত্বের কাছে আশা জাগিয়ে তুলবে বলে ধারণা করছেন সচেতনমহল। এই নির্বাচনে পরাজিত হেভিওয়েট প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন ডুলাহাজারা ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান চৌধুরী খোকন মিয়া, সাহারবিল ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল হাকিম, বরইতলীর ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান এটিএম জিয়া উদ্দিন চৌধুরী জিয়া, হারবাংয়ের সাবেক চেয়ারম্যান জহির উদ্দিন বাবর। গত শনিবারের ইউপি নির্বাচনে দেখা গেছে সেই দৃশ্য।
জানা যায়, চকরিয়ার ১২ ইউনিয়নের নেতৃত্বে দীর্ঘদিন ধরে যাদের হাতে ছিলো এমন দাপুড়ে চেয়ারম্যান ধরাশায়ী হয়ে গেলেন নতুন নেতৃত্বের কাছে। বিশেষ করে চকরিয়া উপজেলা বিএনপি সভাপতি ও সাবেক যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রীর আস্তা-ভাজন বিএনপি আমলে যিনি একচ্ছত্র ক্ষমতার অধিপতি ছিলেন ডুলাহাজারা ইউনিয়নের দুই বারের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান চৌধুরী খোকন মিয়া। তিনি নুরুল আমিন নামের জাপার এক কর্মীর কাছে হেরে যান লজ্জাজনকভাবে। এমনকি প্রতিদ্বন্দ্বীতায়ও আসেনি। তার পরাজয়ে এলাকার সচেতনমহলে নানা ধরণের প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে। তিনি একদিকে বিএনপির সভাপতি অপরদিকে চেয়ারম্যান। দলের সভাপতি হিসেবে নেতাকর্মীদের সাথে সমন্বয় নেই তার। চেয়ারম্যান থাকাকালীন সময়ে স্বেচ্ছাসারিতা, ক্ষমতার অপব্যবহার, বিচার ব্যবস্থা পক্ষপাত, এলাকার উন্নয়ন না করা সহ নানা অভিযোগ রয়েছে। চরম গাফলতিও করেছেন এলাকাবাসির সাথে। বিশেষ করে নিবার্চিত হওয়ার পর থেকে তিনি মেম্বারের হাতে ক্ষমতা দিয়ে কর্মকান্ড চালিয়েছেন। এসমস্ত কারণে স্থানীয় ভোটাররা তাকে এবারে সমর্থন দেননি।
অপরদিকে উপজেলার সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা হল সাহারবিল ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আবদুল হাকিমের পরাজয়। যিনি ১৯৭৩ সাল থেকে টানা ৪৩বছর ধরে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেছেন অবিভক্ত সাহারবিল ইউনিয়নে। ওই ইউনিয়ন বিভক্ত হওয়ার পর সাহারবিলে চারবার ও ফাঁশিয়াখালীতে একবার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন। ২৩এপ্রিল ইউপি নির্বাচনে পরাজিত হয়ে অবশেষে ৪৩বছরের ক্ষমতার মসনদ থেকে বিদায় নিতে হলো এই প্রভাবশালী চেয়ারম্যানকে। যিনি ছিলেন এলাকায় দাপুড়ে ও প্রভাবশালী। তাকে হার মানতে হয়েছে একসময়ের সাবেক ছাত্রনেতা মাতামুহুরী সাংগঠনিক থানা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মহসিন বাবুলের কাছে। পরাজয়ের কারণ হিসেবে স্থানীয় ভোটাররা জানান বারবার একই ব্যক্তি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ায় তার মধ্যে একগুয়েমি ভাব আসে। ফলে উন্নয়ন বঞ্চিত হয়ে পড়ে সাহারবিল ইউনিয়নে। তাছাড়া নতুন নেতৃত্ব সৃষ্টিও হচ্ছে না। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ পরিষদের মেম্বারদের সাথে অশালিন আচরণ ও দাম্বিকতা দেখানো এবং তাদেরকে উন্নয়নমুলক কর্মকান্ডে সম্পৃক্ত না করা। সবচেয়ে গুরুতর অভিযোগ হলো টানা প্রায় ত্রিশ বছর ধরে ওই এলাকার জলদাশ সম্প্রদায়ের মালিকানাধীন বিশাল চিংড়ি ঘেরটি নিজের দখলে রাখা। বিএনপির আমলে সাবেক যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী সালাহউদ্দিনের বদৌলতে ইউনিয়নের জন্য বরাদ্দ এনে লুটেপুটে খেয়েছেন। একারণে তার পরাজয় হয়েছে বলে মনে করেন সাধারণ ভোটাররা।
তাছাড়া চকরিয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক যুগ্ম আহবায়ক প্রভাবশালী আওয়ামীলীগ নেতা এটিএম জিয়া উদ্দিন চৌধুরী জিয়া একাধারে দুইবার বরইতলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেছেন। ওইসময় তিনি দলীয় নেতাকর্মীদের সাথে কোন ধরণের যোগাযোগ রক্ষা করেননি। তিনি দলের নেতাকর্মীদের অবহেলা করতেন। তার শালিস বিচার নিয়ে এলাকার মানুষ চরম অসন্তোষ। এমনকি দুইবার ইউপি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ায় তার মধ্যে অহমিকা ও দাম্বিকতা আসে বলে জানান নেতাকর্মীরা। যার কারণে এবারের নির্বাচনে জিয়া উদ্দিন চৌধুরী নৌকা প্রতীক পেলেও ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা ছাড়া দেননি এবং আওয়ামীলীগের এক বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থী নির্বাচনে প্রদ্বিন্দ্বীতা করায়ও তার পরাজয় হয় বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। ফলে তিনি বিএনপির মনোনীত ধানের শীষ প্রতীকের জালাল উদ্দিন সিকদারের কাছে হেরে যান।
হারবাং ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান প্রভাবশালী জামায়াত নেতা জহির উদ্দিন আহমদ বাবরের অবস্থাও একই রকম। তিনি ক্ষমতায় থাকাকালিন এলাকার তেমন উন্নয়ন করেনি। সরকারি বরাদ্দও তিনি লুটপাঠ করেছেন। এলাকাবাসি এবং ভোটারের সাথে তার কোন ধরণের সম্পৃক্ততা ছিল না। তিনি জামায়াত রাজনীতির সাথে জড়িত থাকলেও প্রায় সময় নেতাকর্মীরা সাথে তিনি বৈরি আচরণ করেছেন। শালিস বিচারও মাসের পর মাস ঝুলিয়ে রাখতেন। একারণে তিনি নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মিরানুল ইসলামের কাছে বিপুল ভোটের ব্যবধানে হেরে যান।

পাঠকের মতামত: