ঢাকা,শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

কক্সবাজারে সবজির দামে ক্রেতা খুশি, হতাশ কৃষক

শাহীন মাহমুদ রাসেল :: বেশ কিছুদিন ধরে ঊর্ধ্বমুখী অবস্থায় থাকার পর জেলার বাজাগুলোতে সবধরনের শীতকালীন সবজির দাম প্রায় অর্ধেকে নেমেছে। এর ফলে স্বস্তি ফিরেছে ক্রেতাদের মাঝে।

হঠাৎ শীতকালীন সবজির দাম অনেক কমে গেছে। যদিও এবার সবজি উৎপাদনে খরচ আগের তুলনায় বেশি হয়েছে। বাজারে দাম কমে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছি। এখন উৎপাদন খরচ ওঠা নিয়েই চিন্তায় আছি।

রবিবার (১০ জানুয়ারি) বিকেলে আক্ষেপ করে কথাগুলো বলছিলেন সদর উপজেলার খরুলিয়া কোনারপাড়া গ্রামের কৃষক নুরুল ইসলাম। রামুর পাইকারি কাঁচা বাজারে তিনি শীতকালীন সবজি বিক্রি করতে এসেছেন।

খরুলিয়া থেকে আসা অপর এক কৃষক হাবিবুর রহমান বলেন, বর্তমান বাজারে শীতকালীন সবজির দাম খুবই কম। অনেক স্বপ্ন নিয়ে কৃষকরা ফসল নিয়ে এই বাজারে এলেও দাম দেখে হতাশ।

এতে ঋণ শোধ নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন অনেক কৃষক। তাদের মতো এ বাজারে আসা কৃষকরা বলেছেন, শুরুতে দাম ভালো পেলেও হঠাৎ দাম কমে যাওয়ায় লোকসানের শঙ্কা রয়েছে।

অনেকে বলছেন, নতুন বছরের শুরুর পরই সব ধরনের শীতকালীন সবজির দাম কমেছে। মাত্র ৩ দিনের ব্যবধানে পাইকারি সবজির বাজারে কোনো কোনো সবজি কেজিপ্রতি ১৫ টাকা পর্যন্ত কমেছে। এতে কৃষকদের মধ্যে হতাশা দেখা দিয়েছে।

বাজার ঘুরে দেখা যায়, দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা কেজি দরে। যা গত সপ্তাহে ৭০ টাকা কেজি ছিলো। আমদানি করা ভারতীয় পেঁয়াজ আগের মতো ৫৫ থেকে ৬০ টাকা কেজিতে পাওয়া যাচ্ছে। তবে চীন ও মায়ানমারের আমদানি করা বড় সাইজের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকা কেজি দরে। শীতের সবজি ফুলকপি, বাঁধাকপি, শিম, মূলা ও শালগমের সরবরাহ বাড়ায় সবজির দাম গত সপ্তাহের তুলনায় কমে এসেছে। প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে বেশিরভাগ সবজি ৪০ টাকার মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে। ২০ থেকে ২৫ টাকা দরেও বেশ কিছু সবজি পাওয়া যাচ্ছে। তবে পাকা টমেটো ও কাঁচা মরিচের দাম এখনও বেশ চড়া।

শহরের বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, আলুর কেজি ৪০ টাকা। মাসখানেক আগে নতুন আলু একশ’ টাকার ওপরে বিক্রি হয়েছে। তবে এখন নতুন আলুর কেজি ৪০ থেকে ৫০ টাকা। গত সপ্তাহের মতো শিম বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা কেজি দরে। দুই মাস আগে এই শিম ১২০ টাকা দিয়ে কিনতে হয়েছে। ফুলকপি ও বাঁধাকপির পিস বিক্রি হচ্ছে ২৫ টাকা। মূলা ১৫ টাকা কেজিতে পাওয়া যাচ্ছে। ৩০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে লাউ। গাজর বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকা কেজি। বেগুনের কেজি ৩০ টাকা, ধেঁড়স ৪০ টাকা এবং পটল ৩০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।

তবে এখনও চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে পাকা টমেটো ও কাঁচা মরিচ। পাকা টমেটো গত সপ্তাহের মতো ৬০ থেকে ৭০ টাকা কেজি। আর কাঁচা মরিচ গত সপ্তাহের মতো ৮০ থেকে ১০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।

বড় বাজারে সবজি কিনতে আসা আব্দুর রহিম ও সালমান হোসেন বলেন, একে তো করোনার কারণে আমাদের আয় রোজগার অর্ধেকে নেমে এসেছে। করোনার প্রভাবে সবজির দাম যেভাবে বৃদ্ধি পায়, তাতে করে আমাদের মতো খেটে খাওয়া মানুষদের সংসার চালাতে বেশ হিমশিম খেতে হচ্ছিলো। তবে বর্তমানে সবজির দাম কিছুটা কমায় স্বস্তি ফিরতে শুরু করেছে। একদিন আগেও যে সবজি কিনেছি, সেই সবজির দাম মাত্র একদিনের ব্যবধানে অর্ধেকে নেমেছে। কিছু কিছু সবজির দাম অর্ধেকের নিচে নেমেছে। এতে করে আমাদের মতো সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষজনের জন্য বেশ উপকার হয়েছে। তবে দাম যদি আরও একটু কমে আগের অবস্থায় আসে, গরিব মানুষদের জন্য বেশ ভালো হবে।

উপজেলা গেইটের সবজি বিক্রেতা নুর কবির বলেন, বেশ কয়েকদফা বৃষ্টির কারণে বিভিন্ন এলাকায় সবজির ক্ষেত নষ্ট হওয়ায় সবজির সরবরাহ কমে যাওয়ায় বাজারে দাম বৃদ্ধি পেয়েছিল। বর্তমানে নতুন করে শীতকালীন সবজি উঠতে শুরু করায় বাজারে সবজির সরবরাহ ব্যাপক হারে বেড়েছে। যার কারণে সবধরনের সবজির দাম কমে গেছে। এছাড়াও আগে সবজির দাম বেশি হওয়ায় মানুষ কেনা কমিয়ে দিয়েছিল, যেখানে এক কেজি লাগতো সেখানে আড়াইশ গ্রাম কিনতো, বর্তমানে সবজির দাম কমায় মানুষ আগের মতো যা প্রয়োজন ক্রয় করছেন।

এদিকে আড়তদারা বলছেন, বাজারে সরবরাহ বেশি হওয়ায় সবজির দাম কমছে। বড় বাজারের আড়তদার শুক্কুর বলেন, ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত এখানে বাজার চলে। শীতকালীন সবজির সরবরাহ বেশি হওয়ায় দাম একদম কমে এসেছে।

বাজারে বিভিন্ন ধরনের শীতকালীন সবজির সরবরাহ বেড়েছে। সেই সঙ্গে কমেছে দাম। এতে কম দামে টাটকা সবজি কিনতে পেরে খুশি দূর-দূরান্তের পাইকার ও সাধারণ ভোক্তারা। তবে দাম কম থাকায় হাসি ফোটেনি কৃষকের মুখে।

আরফাত নামের এক ক্রেতা বলেন, শীতকালীন শাক সবজির দাম এতো দিন খুব চড়া ছিলো। সাধারণ ক্রেতাদের কেনার মতো অবস্থা ছিলো না। এখন সবজির দাম অনেক কমে গেছে। এতে ভীষণ খুশি ক্রেতারা।

তবে পাইকারি বাজারে সবজির দাম কমলেও জেলার খুচরা বাজারগুলোতে তার তেমন একটা প্রভাব পড়েনি।

পাঠকের মতামত: